×

জাতীয়

খালেদার অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২০, ১১:১০ এএম

শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ অবস্থান করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিজ বাসায় কেমন আছেন তিনি? এটা নিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের শেষ নেই। কেউ বলছেন, তিনি স্বাধীনভাবেই আছেন। কেউ বলছেন, অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন খালেদা জিয়া। নিজগৃহে থেকেও তিনি স্বাধীনভাবে চলাফেলা করতে পারছেন না। দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না। তাহলে তিনি কোন পরিস্থিতিতে কি অবস্থায় আছেন? নিজ গৃহে অবস্থানের সংজ্ঞা কি? তিনি কি স্বাধীন? নাকি গৃহবন্দি? অবরুদ্ধ নাকি অন্তরীণ? রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জনের নানা প্রশ্ন। বিএনপির অভিযোগ খালেদা জিয়া মুক্ত নন, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আর সরকার বলছে, তাকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। ২৪ সেপ্টেম্বর ওই ছয় মাস শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বেড়েছে দুই দফা। তবে শর্তের বেড়াজালে তিনি রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে নেই্ চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে পারছেন না।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়ার পরেও তার সব বিষয়ে নজর রাখা থেকে শুরু করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি আসার পর থেকেই তার গৃহবন্দির বিষয়ে প্রশ্ন জোরেশোরে আলোচনায় এসেছে। কারণ দুই মেয়াদে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর পরেও তিনি এখানো চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতালে যাননি। এমনকি গত ৮ মাসে একবারের জন্যও তিনি বাড়ির বাইরে যাননি।

সূত্র জানায়, ৭৫ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চোখ ও দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন। আথ্রাইটিসের কারণে তার ডান হাত বেঁকে গেছে। এছাড়াও ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। মুক্তি পেলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তার উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়নি। বড় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করলেও নানা জটিলতায় যাওয়া হয়নি।

খালেদা জিয়ার জন্য দলীয় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি টিম রয়েছে। ওই টিমের দুয়েকজন নিয়মিত তার শারীরিক অবস্থার ফলোআপ করছেন। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলের সিনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানও তার চিকিৎসার নিয়মিত তদারকি করছেন। কিন্তু সরকারের শর্তের কারণে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির অভিযোগ, খালেদা জিয়াকে সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্ত নন। তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার জেলখানায় থাকা আর বাসায় থাকার মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। তবে তিনি ঘরোয়া পরিবেশে আছেন। এর বেশি কিছু নয়। আসলে তিনি গৃহান্তরীণ। খালেদা জিয়ার শরীরের অবস্থা ভালো নয় জানিয়ে তিনি বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কারাগারমুক্ত হয়ে তিনি গৃহবন্দি হয়েছেন।

তবে খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন দুদক এবং সরকার। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, জামিন পাওয়ার পর খালেদা জিয়া নিজ বাসা ফিরোজায় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। দলের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তিনি চাইলে যে কোনো সময় যে কারো সঙ্গে দেখা করতে পারেন। আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করছেন। এরপরও তাকে গৃহবন্দি বলার কারণ নেই।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা কখানো বলিনি, খালেদা জিয়া বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না। কিন্তু বিএনপির নেতারা কোথা থেকে গৃহবন্দি শব্দ চয়ন খুঁজে পেলেন আমার জানা নেই। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই কাল্পনিক। বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না নেত্রী। উনি নিজেই চাচ্ছেন বাইরে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু সরকারি শর্তের কারণে তিনি বিদেশে যেতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রথম মেয়াদে সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত পালনে খুবই সচেতন ছিল তার দল ও পরিবার। ফলে সরকার দ্বিতীয় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। এরপর থেকেই বিদেশে নিয়ে তার চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে নানাভাবে সরকারকে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন জানান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য যেতে চাইলে সে দেশের সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে স্বজনদের দেন-দরবারের মধ্যে বিদেশি পক্ষের সক্রিয়তাও স্পষ্ট হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App