×

সাহিত্য

‘হাওর অঞ্চল প্রণোদনা’ সহায়তার দাবি সুনামগঞ্জের শিল্পীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২০, ১২:৪০ পিএম

‘হাওর অঞ্চল প্রণোদনা’ সহায়তার দাবি সুনামগঞ্জের শিল্পীদের

মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- ২৪

পল্লী ও লোকসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এক জেলা সুনামগঞ্জ। এখানে পাওয়া যায় মাঝির ভরাট গলার গান ও রাখালের বাঁশির সুর। এককথায় জারি, সারি, ভাটিয়ালির ভূমি এটি। এখানকার লাঠিখেলা ও নৌকা দৌড় এককালে জনপ্রিয় ছিল। থিয়েটার, নাটক, যাত্রা ও কবিগানের লড়াই তো আছেই। জনশ্রুতি আছে, মোগল সিপাহী সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ হলো ‘সুনামদি’। তার নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ হয়েছিল। কোনো এক যুদ্ধে তার বিরচিত কৃতিত্বের জন্য সুনাম উদ্দিনকে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসেবে দান করা হয়। সেখানে স্থাপিত হয় সুনামগঞ্জ বাজার। অনেকের মতে, এভাবে ‘সুনামগঞ্জ’ স্থানের উৎপত্তি হয়েছিল।

এর দর্শনীয় স্থানগুলো হলো টাঙ্গুয়ার হাওর, হাছন রাজার স্মৃতি-বিজড়িত জমিদারবাড়ি, দোহালিয়া জমিদারবাড়ি, গৌরারং জমিদারবাড়ি, পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি, লাউড়ের গড়, ডলুরা শহীদদের সমাধিসৌধ, সুরমা নদী, যাদুকাটা নদী, পাগলা মসজিদ, টাউন হল জামে মসজিদ, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, পনাতীর্থ ধাম, নারায়ণতলা মিশন, টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড, বারেকের টিলা, সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘর, শাহ আবদুল করিমের বাড়ি, রাধারমণ দত্তের সমাধি, জগন্নাথ জিউর আখড়া, নীলাদ্রি লেক, শিখা সতেরো, নারায়ণতলার নন্দকানন। এই লোকসংস্কৃতির রাজধানীতে বন্যার পাশাপাশি হানা দিয়েছে করোনা।

সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১২ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে কেবল সাড়ে ৭ হাজার বাউল শিল্পীই রয়েছে। অনেকে নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত এবং যারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান করে সংসার চালান। তারা বেকার হয়ে গেছেন। বেকার হয়ে গেছেন আদিবাসী শিল্পীরাও। এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০ জনকে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে মাত্র। সমম্বয়হীনতার অভাবে অনেক শিল্পীই ওই সহায়তা থেকে বাদও পড়ে গেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিস্থিতি অন্য জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিস্থিতির চেয়ে চরম ভয়াবহ। অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। উপায় না দেখে কেউ কেউ মাস্ক কিংবা তরকারি বিক্রি করছেন। করোনাকালে এসব বিধ্বস্ত, বিপন্ন শিল্পী এবং সংগঠনের পাশে সঠিক তালিকার মাধ্যমে ‘বিশেষ হাওর অঞ্চল প্রণোদনা’ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতি কর্মীরা।

দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সংগীত চর্চার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শিল্পী দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন। জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, ৪ বার বন্যা আর করোনায় সুনামগঞ্জ জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। উপায় না দেখে অনেক শিল্পী মাস্ক এবং তরকারি বিক্রি করছে। এই এলাকার শিল্পীদের মধ্যে সঠিকভাবে প্রণোদনা সহায়তাও পৌঁছেনি। অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিও করা হয়েছে। অথচ তারা অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

‘নৃত্যাঙ্গন সুনামগঞ্জ’-এর সিইও নৃত্যশিল্পী তুলিকা ঘোষ চৌধুরী যিনি ৩৫ বছর ধরে সুনামগঞ্জে সুনামের সঙ্গে নৃত্যাঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশিষ্ট এই নৃত্যশিল্পী বললেন, দীর্ঘ ৮ মাস ধরে নাচের স্কুল বন্ধ থাকার ফলে আমি যে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছি তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভবই নয়। দীর্ঘসময় ধরে ফেলে রাখার কারণে নাচের অনেক সরঞ্জামও নষ্ট হয়ে গেছে।

কিন্তু নিয়মিত সংগঠনের ভাড়া এবং কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতেই হয়েছে। অথচ আমরা কোনো প্রণোদনা সহায়তা পাইনি। তারপরও এ অঙ্গনে যাতে স্থবিরতা না আসে সেজন্য ভার্চুয়ালি চর্চাটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেকের কাছে স্মার্ট ফোন না থাকায় কিংবা অনেকে এর ব্যবহার না জানার ফলে বিপাকে পড়তে হয়েছে। করোনা আর বারবার বন্যার আঘাতে আমরা সুনামগঞ্জবাসী শেষ হয়ে গেছি। সরকার পাশে না দাঁড়ালে এই এলাকার শিল্পীদের জীবন চালানো হুমকির মুখে পড়বে এবং আর ঘুরে দাঁড়াতেই পারবে না।

নৃত্যশিল্পী শ্রাবন্তী সোমারও কণ্ঠেও একই সুর। তিনি বললেন, নৃত্যই তার পেশা। এর মধ্য দিয়েই তিনি জীবনযাপন করেন। করোনা হানা দেয়ার পর শুধু এপ্রিল মাসে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চাল-ডাল-তেল উপহার পেয়েছি। এর বাইরে কোনো প্রণোদনা সহায়তা পাইনি। অথচ শিল্পকলাকেও জানিয়েছিলাম, আমি খুব খারাপ সময় পাড় করছি। সহায়তা চাই। কোনো উত্তর পাইনি। এখন তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কি করব?

বাউল শিল্পী জামাল উদ্দিন বলেন, আমি একজন বাউল। গানই আমার ধ্যান জ্ঞান। গান গেয়েই আমি যা পেতাম তাই দিয়ে সংসার চালাতাম। করোনার কারণে আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এখন আমার জীবন চলছে না খেয়ে! আমি ক্ষুধার কষ্টে মরে যাচ্ছি। আপনারা আমাকে বাঁচান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App