×

জাতীয়

এসডিজি অর্জনে ৫ চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০৯:১৮ এএম

এসডিজি অর্জনে ৫ চ্যালেঞ্জ

সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল।

ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

করোনা ভাইরাসে নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য কমিয়ে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জেন্ডার সমতা, বৈষম্য হ্রাস এবং টেকসই উৎপাদনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই পাঁচ চ্যালেঞ্জকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশকে এগুতে হবে। নতুবা এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা কাগুজে দলিলে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ।

এদিকে এসডিজি অর্জনে গত চার বছরে বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম এবং ইনডেক্স স্কোরে বর্তমান অবস্থান ৬৭ দশমিক ২। বেশ কয়েকটি অভীষ্টে কাক্সিক্ষত অর্জন না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে চারটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সঠিক পথে ও ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। এসডিজির তিনটি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত ও দুটির মূল্যায়নের জন্য উপাত্তে ঘাটতি রয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালে বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ছিল ১২০তম ও ইনডেক্স স্কোর ছিল ৫৬ দশমিক ২। করোনাকালেও র‌্যাঙ্কিং ও ইনডেক্স স্কোর উভয় দিকে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে দারিদ্র্য বিলোপ, গুণগত শিক্ষা, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রম অর্জনে সঠিক পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি, শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো এবং টেকসই নগর ও জনপদ- এই ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিতরূপে উন্নতি করেছে। তবে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে জেন্ডার সমতা, জলজ জীবন এবং শান্তি ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠা- এই তিনটি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে অসমতা হ্রাস, পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন- এ দুটি অভীষ্ট মূল্যায়নের জন্য উপাত্ত পাওয়ার ঘাটতি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক। ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। নতুন-পুরনো মিলিয়ে এখন মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। অন্যদিকে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে প্রায় ৪১ ভাগ মানুষ। ২০১৯ সালে যা ছিল ২০ দশমিক ৫ ভাগ।

বিআইডিএসের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, করোনায় নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ। বর্তমানে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি। প্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে চাকরি হারিয়েছেন ১৩ ভাগ মানুষ। দারিদ্র্য বেড়েছে ২৫ দশমিক ১৩ ভাগ। এই দারিদ্র্য বাড়ার হার শহরে বেশি। ১৫ থেকে ২০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য রেখার খুব কাছে অবস্থান করে। সেই সংখ্যাটাও তিন কোটির মতো।

এদিকে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দুটি লক্ষ্য দারিদ্র্য নিয়ে। প্রথমটি দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং দ্বিতীয়টি কোনো মানুষ অভুক্ত থাকতে পারবে না। করোনার অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক মূলধারায় সম্পৃক্ত করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারের প্রণোদনাসহ দারিদ্র্য বিমোচনের বিশেষ কৌশল সবক্ষেত্রে সঠিক প্রয়োগ এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড-১৯ সারা বিশ্বকেই একটি চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। তবে মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে এটি আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশের প্রায় ৪১ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে- সানেমের এমন ধারণা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বাংলাদেশের মানুষ সব পরিস্থিতিতেই ঘুরে দাঁড়াতে জানে। বিদেশিরা আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে অনুধাবন করতে পারে না। বাংলাদেশ দারিদ্র্যের মডেল হবে, কিসিঞ্জারের এমন বক্তব্য সত্য হয়নি বরং দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ।

এদিকে সুশাসন, ন্যায় বিচার, জেণ্ডার সমতা, বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগুচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, অভীষ্ট-১৬, বিশেষ করে এর আওতায় প্রতিশ্রুত সবার জন্য বৈষম্যহীনভাবে ন্যায় বিচার, অংশগ্রহণমূলক সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকরতা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন বাংলাদেশে স্বাভাবিক সময়েই কঠিন ছিল। করোনা মহামারিতে এই অভীষ্ট আরো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে অভীষ্ট ১৬ ও তার লক্ষ্য অর্জন কাগুজে দলিলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, শান্তি-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ এ সুশাসনের আরো অবনতি ঘটেছে। সারা দেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা, ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা দেখলেই বোঝা যায়। সুশাসনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকার যদি এক্ষেত্রে নজর না দেয় তাহলে এসজিডি অর্জন চ্যালেঞ্জ তো বটেই দেশের সব উন্নয়ন্নয়ন হয়ে যাবে।

অবশ্য এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ বলেন, সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে সরকার কঠোর। করোনাকালে সিলেট, নোয়াখালীসহ কয়েকটি জায়গায় নারীর ওপর ভয়ংকর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে জনগণের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। এ থেকে স্পষ্ট সরকার জনগণের ভাষা পড়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App