×

জাতীয়

দোরগোড়ায় দুর্গাপূজা মণ্ডপ কমেছে ১২০০

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০৩:২৩ পিএম

খিচুড়ি প্রসাদ বন্ধ, ঢাকা মিশনে কুমারীপূজা বাতিল

দোরগোড়ায় দুর্গাপূজা। করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের ছাড়পত্রও দিয়েছে সরকার। বারোয়ারি পূজামণ্ডপগুলোকে সরকার থেকে উৎসবের অনুদানও দেয়া হয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ১২০০ পূজামণ্ডপ কমেছে। এ ছাড়া এবারের পূজায় ভক্তদের খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হবে না। পাশাপাশি ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে এবার কুমারীপূজাও হবে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। পূজার খুঁটিনাটি তথ্য জানাতে আজ শনিবার বেলা ১১টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছে পূজা উদযাপন পরিষদ।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন,করোনা আতঙ্কের আবহেই আগামী ২১ অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এদিন দেবীর অকাল বোধন। সরকারি হিসেবে সারাদেশে এ বছর ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গত বছরের তুলনায় এবার ১ হাজার ১৮৫টি মণ্ডপে পূজা কম হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৭টি। ঢাকা মহানগরেও পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমেছে চারটি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারি হিসাবে ১ হাজার ১৮৫টি মণ্ডপে পূজা কম হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। অর্থাৎ করোনার কারণে এবার প্রায় দুই হাজার মণ্ডপে পূজা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারি বিধিবিধান মেনেই এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজায় ভক্তদের খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হবে না। তবে পূজার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের জন্য প্রসাদ থাকবে। পূজার বিস্তারিত তথ্য আজ শনিবার সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হবে।

ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে জানানো হয়েছে, করোনার কারণে এবার কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কারণ কুমারীপূজার ভিড় সামাল দিতে পারবে না মিশন কর্তৃপক্ষ। এজন্য আগেভাগেই কুমারীপূজা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কুমারীপূজা বাতিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা হবে। প্রসঙ্গত, দুর্গাপূজার মহাষ্টমী তিথিতে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে এবার ৭ হাজার ১৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৭ হাজার ২৭১টি মন্দিরে। গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বিভাগে এবার ৫৫০টি মণ্ডপে পূজা কম হচ্ছে। এ বিভাগে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৩ হাজার ৯০৬টি। খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৬৮৯টি, সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৬৪৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৫৮৪টি,বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৭০১টি, রংপুর বিভাগে ৫ হাজার ২৫০টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৪৩৫টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। মহালয়ার ৬ দিন পর পূজা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার তা অনুষ্ঠিত হয়নি। আশি^ন মাস মলমাস (অধিক মাস) হওয়ার কারণে এবার দুর্গাপুজা শুরু হচ্ছে মহালয়ার প্রায় এক মাস পর আগামী ২১ অক্টোবর বুধবার থেকে। পঞ্জিকা মতে, চলতি বছর মা দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি।

পণ্ডিতরা বলেছেন, দেবীর দোলায় আসার অর্থ হচ্ছে মড়ক। ফলে পূজার আগে বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারির পরিস্থিতি বজায় থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়। তবে এই বছরের পূজা অন্যান্য বছরের মতো নয়। করোনা আতঙ্কের আবহেই এবার দেবীপক্ষের শ শোভারম্ভ হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ভোরের কাগজকে বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সমবেত সবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ যে গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে, তা মেনেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সাত্ত্বিক মতে ধর্মীয় বিধান মেনেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জীবন আগে। নিজে সংক্রমিত হবো না, অন্যদেরও হতে দেব না।

গাইডলাইনে করোনা সংক্রমণ রোধে এবার দুর্গাপূজায় শোভাযাত্রা ও প্রসাদ বিতরণ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনসাস্থ্য-১ অধিশাখার উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গাইডলাইন মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

নির্দেশনায় মন্দির প্রাঙ্গণে নারী-পুরুষের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ পৃথক ও নির্দিষ্ট থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও পূজামণ্ডপে আসা লোকজন নির্দিষ্ট দূরত্ব (কমপক্ষে দুই হাত) বজায় রেখে লাইন করে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করবেন এবং প্রণাম শেষে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সম্ভব হলে পুরো পথ পরিক্রমা গোল চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও নির্দেশনায় বলা হয়।

পুষ্পাঞ্জলি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং ভক্তের সংখ্যা অধিক হলে একাধিকবার পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে নির্দেশনায় আরো বলা হয়, পূজামণ্ডপে আগত সবার মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক। মাস্ক পরিধান ছাড়া কাউকে পূজামণ্ডপে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। এ ছাড়াও মন্দিরের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ পূজামণ্ডপে প্রবেশ না করা, হাঁচি ও কাশির সময় টিস্যু রুমাল বা কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যু বর্জ্য ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ঢাকনাযুক্ত বিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং জরুরিভাবে তা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। প্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা/ধুনচি নাচ এবং শোভাযাত্রা থেকে বিরত থাকার কথাও নির্দেশনায় উল্লেখ আছে। ধর্মীয় উপাচার ছাড়া অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোকসজ্জা বর্জন করতে হবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App