×

সাহিত্য

‘আবারো মঞ্চ কাঁপানোর স্বপ্ন দেখি, পাশে দাঁড়াবেন কি?’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৫ এএম

‘আবারো মঞ্চ কাঁপানোর স্বপ্ন দেখি, পাশে দাঁড়াবেন কি?’

মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

ইতিহাস বলছে, গৌড়ের পাল ও সেন রাজার রাজত্ব ছিল জয়পুরহাটে। ধর্মপালের পর তার দ্বিতীয় ভ্রাতৃদ্বয় দেবপাল ও জয়পাল তৎকালীন পাল সাম্রাজ্যের রাজা হন। এই জয়পাল রাজার নামেই জয়পুরহাট জেলার নামকরণ হয় ১৮০০ সালে। এর আগে স্থানীয় নাম ছিল বাঘাবাড়ি, পরবর্তী সময়ে কাগজপত্রে গোপেন্দ্রগঞ্জও লেখা হতে থাকে। জয়পুরহাটে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হলো বারশিবালয় মন্দির, পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি, ভীমের পান্টি, পাথরঘাটা নিমাই পীরের মাজার, লকমা জমিদার বাড়ি, গোপীনাথপুর মন্দির, হিন্দা কসবা জামে মসজিদ, শিশু উদ্যান, বাস্তবপুরী, নান্দাইল দিঘি, আছরাঙা দিঘি ও দুয়ানী ঘাট। যে জেলাজুড়ে এতো প্রাচীন ঐতিহ্য, যার মনোহর শোভা মন ভোলায়, যার শিল্পের সুষমা মুগ্ধতা ছড়ায় তার মধ্যেও আজ ঢুকে পড়েছে ভয়াল করোনা!

সূত্র জানায়, জয়পুরহাটের সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে প্রায় ৬০টি, কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজারের মতো। তাদের অনেকে নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায়, গ্রামগঞ্জে, হাটে-বাজারে বাউলসহ নানা ধরনের শিল্পী মেঠো গান করে বেড়ান। করোনাকালে তারা বেকার হয়ে গেছেন। এদের মধ্যে ১৮২ জনের নামসংবলিত একটি তালিকা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দেয়া হলেও প্রণোদনা সহায়াত পেয়েছেন মাত্র ১০০ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, নওগাঁর অধিকাংশ শিল্পীর জীবন কাটছে দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। অনন্যোপায় হয়ে কেউ কেউ দোকানদারি কিংবা ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করছেন, কেউ কেউ ধার দেনা করে জীবনের দাবি মেটাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ৪৫ বছর ধরে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত জয়পুরহাট থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সাধন চন্দ্র কর্মকার ভোরের কাগজকে বলেন, ২৮ বছর ধরে ওই পেশায় যুক্ত ছিলাম। থিয়েটারই আমরা ধ্যান জ্ঞান এবং নেশা। মঞ্চ নাটকে অসামান্য অবদানের জন্য আমাকেও সম্মাননা দেয়া হয়েছিল। আমার নাটক দেখে ইউএনও সাহেব খুব প্রশংসাও করেছিলেন। আজ আমি শূন্য, নিঃস্ব! আমার পারিবারিক এবং শারীরিক অবস্থা এতই দুর্বল যে সরকারের সহায়তা না পেলে আর ঘুরে দাঁড়াতেই পারব না। অথচ আমি আবারো মঞ্চে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখি। পাশে দাঁড়াবেন কি? ক্ষোভ প্রকাশ করে ত্যাগী এই নাট্যজন আরো বলেন, দরখাস্ত নিয়ে দুই তিন বার ঘুরে ঘুরে শিল্পকলার দরজায় গিয়েছি। শিল্পকলার লোকজন বলেছে, ‘আপনার দরখাস্ত বক্সে ফেলে যান।’ আমি তাই দিয়ে এসেছি। এরপর কেউ খোঁজ নেয়নি। তালযন্ত্র শিল্পী আবদুর রহিম বলেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে তালযন্ত্র বাজিয়ে এবং শিক্ষকতা করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু করোনা এসে সব তছনছ করে দিয়েছে। টিকে থাকার জন্য ধার দেনা করতে করতে প্রায় ১ লাখ টাকা ঋণ করে ফেলেছি। জানি না সামনের দিনগুলো কিভাবে চলব।

জয়পুরহাট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, জয়পুরহাট এলাকা একটা গরিব এলাকা। করোনার কারণে এই এলাকার শিল্পীরা আরো গরিব হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এবং এ অঙ্গনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া না হলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে দোতারা শিল্পী, বাউলশিল্পী, পটশিল্পীরা হারিয়ে গেছে।

জয়পুরহাট থিয়েটারের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খ ম আবদুর রহমান রনি বলেন, শিল্পচর্চাই সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শিল্পীরা না থাকলে তো শেকড়টাই থাকবে না। এদিকে গভীরভাবে নজর দিতে হবে। জানতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মাহতাব হোসেন বলেন, আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ১০০ জনকে প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া শিল্পকলা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫০ জনকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যদি কেউ এ সহায়তা থেকে বাদ পড়ে যায় দ্বিতীয় দফায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App