×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিকীকরণের কিছু পদক্ষেপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৪৪ পিএম

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত মার্চ মাসের শেষভাগ থেকে আমাদের দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি অনেক ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে সরকার কিছুতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নয়, কারণ ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গিয়েছিল। তাই হয়তো সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে, তবে এর মধ্যে স্থগিত থাকা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ও একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস আরম্ভের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও নানাবিধ কারণে কার্যত তা শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ হয়নি। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্তর ভেদে ঝুঁকির ভিন্নতা রয়েছে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে বড় সমস্যা হলোগুলোর গণরুম, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমস্যা শিশুদের সচেতনতা। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেদে ব্যবস্থা গ্রহণেও ভিন্নতা থাকবে। প্রথমত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সাধারণত পরিবারে থেকেই পড়াশোনা করেন। এক্ষেত্রে সরকারকে যে বিষয়টি ভাবতে হবে তা হলো, শ্রেণিকক্ষে যেন কিছুতেই ভিড় তৈরি না হয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন অর্ধেক করে দুটি গ্রæপে ভাগ করে ক্লাস নেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ একটি শ্রেণিতে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে পূর্বে যেখানে প্রতিদিন তাদের সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬টি ক্লাস হতো; সেখানে এখন ওই শ্রেণিতে ২৫ জনের দুটি গ্রæপ করে (জোড়-বিজোড় রোল নম্বরের ভিত্তিতে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একটা গ্রæপের তিনটি ক্লাস হবে এবং পরবর্তী গ্রুপটি পরের তিন ঘণ্টা ক্লাস করবে। এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তবে প্রাথমিকের বাচ্চাদের সচেতনতার জন্য একটু বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিশেষ সতর্কতা হিসেবে শ্রেণিকক্ষে মাস্ক পরিধান বাধ্যমূলক করতে হবে, প্রতিটা শ্রেণিকক্ষে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানির স্প্রে রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ ও বাইরে হওয়ার সময় তা হাত-পায়ে স্প্রে করবে, স্কুল প্রাঙ্গণে খোলা খাবারের দোকানগুলো আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। উপরোক্ত উপায়ে ক্লাস একটু কম হলেও কিছু তো হবে। প্রবাদ আছে, নাই মামার থেকে কানা মামা অনেক ভালো। দ্বিতীয়ত, কলেজগুলোতেও একই নিয়মে ক্লাস চালু করতে হবে। তবে অনেক কলেজ শিক্ষার্থী পরিবারের বাইরে হোস্টেলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশোনা করেন, এক্ষেত্রে হোস্টেলে বা মেসে তাদের নিজেদের মতো করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকতে হবে। কারণ হোস্টেল কিংবা মেসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকা সম্ভব, এ মুহূর্তে অসংখ্য কর্মজীবী সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী এভাবেই মেসে কিংবা হোস্টেলে অবস্থান করছেন। করোনাকালীন ছুটিতে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ দীর্ঘ এই ছুটিতে তৈরি হচ্ছে সেশনজট, আবার অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা আটকে আছে, কারো বা রেজাল্ট, নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বন্ধ রয়েছে, কমে আসছে সরকারি চাকরির বয়স, শিক্ষার্থীদের উপার্জনক্ষম দিকগুলোও বন্ধ রয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনো অনেক দেরি। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, করোনামুক্ত সকালটির অপেক্ষায় বসে না থেকে অতিসত্বর সেই পন্থা অবলম্বন করা, যাতে করে আগামী দিনের ভোরটা সুন্দর হয়। অতএব এ পন্থাগুলো অবলম্বন করে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম আরম্ভ করে ফলাফলটা দেখতে পারে, যেটা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ করেছে। শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App