×

জাতীয়

খোরপোশ না দেয়ায় বন্ধের উপক্রম মেয়েদের লেখাপড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৫ এএম

খোরপোশ না দেয়ায় বন্ধের উপক্রম মেয়েদের লেখাপড়া

প্রয়াত নায়ার সুলতানা লোপা

খোরপোশ না দেয়ায় বন্ধের উপক্রম মেয়েদের লেখাপড়া

টুনি ও তার স্বামী

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের জনপ্রিয় টুনি চরিত্রের রূপদানকারী অভিনেত্রী নায়ার সুলতানা ওরফে লোপার (৩৫) চলে যাওয়ার ষষ্ঠ বছর আজ শুক্রবার। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ লোপার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। ওই দিনই তার মা রাজিয়া সুলতানা গুলশান থানায় লোপার স্বামী আলী আমিনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আমিনের বাবা আমিন আলী ও ইয়াসমিন আলীকেও আসামি করা হয়। লোপার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে লোপার গলার ডানে এবং বাম হাতের কবজিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলা হয়। স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে স্বামী আলী আমিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি চার্জশিট জমা দিলেও বিচারকার্য এখন সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে মা নায়ার সুলতানার মৃত্যুর পর থেকেই তার স্মৃতি আকড়ে ধরেই চলছিল আনায়া আমিন ও আজারা আমিন এ দুই বোনের জীবন। কারণ বাবা যে থেকেও নেই। ফলে নানি রাজিয়া সুলতানার তত্ত্বাবধানেই বেড়ে উঠছিল তারা। এতদিন বৃদ্ধ নানি ও নানা দুই বোনের লেখা-পড়াসহ সব বিষয়ে ভরণ পোষণ করলেও করোনার সময় তাদের আর্থিক অবস্থাও বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় আদালতের রায়ের পরেও বাবা মেয়েদের খোরপোশ না দেয়ায় ও-লেভেল ও সেভেন স্ট্যানডার্ড পড়ুয়া দুই বোনের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম এখন।

ময়নাতদন্তে লোপার মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’বলা হলে তাতে আপত্তি জানিয়ে ফের ময়নাতদন্তের আবেদন করেন তার মা রাজিয়া সুলতানা। ২৬ নভেম্বর ওই আবেদন গ্রহণ করে লোপার লাশ তুলে আবারো ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন আদালত। লাশ তোলার জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠনসহ একজন নির্বাহী হাকিমকেও রাখতে বলা হয়। ১৬ অক্টোবর লোপার মায়ের মামলা দায়েরের পরপরই আসামি আলী আমিনকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বের হন। আলী আমিন দাবি করেন, গুলশানের ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে ঝগড়ার জেরে লোপা আত্মহত্যা করেছেন। তখন তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন।

তবে মামলার এজাহারে লোপার মা তার মেয়ে জামাইকে ‘মাদকাসক্ত’ উল্লেখ করে বলেছেন, প্রতিদিন লোপাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী আলী আমিন এবং এতে তার বাবা-মাও প্রশ্রয় দিতেন। মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে কোনো এক সময় তারা ৩ জন লোপাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখেন। গুলশান থানা ও ডিবি পুলিশের পর মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালে সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস তদন্তে আত্মহত্যার প্ররোচনার প্রমাণ মেলায় আলী আমিন তার বাবা আমিন আলী ও ইয়াসমিন আলীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেন। এ বিষয়ে লোপার মা রাজিয়া সুলতানা ভোরের কাগজকে বলেন, মেয়ের মৃত্যুর পর আদালত থেকেই দুই নাতনির কাস্টডি পাই আমি। দুই মেয়েকে পড়ালেখাসহ আনুসাঙ্গিক খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দেয়া নির্দেশ দেন আদালত। তবে বাবা হিসেবে মেয়েদের কোনো দায় নেয়নি আলী আমিন। পরে এ ঘটনায় খোরপোশের মামলায় আদালত মেয়েদের পক্ষে রায় দেয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ধনী হওয়া সত্ত্বেও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা দেয়নি মেয়েদের বাবা। পরে এ ঘটনায় আদালতে অভিযোগ করা হলে খোরপোশ না দেয়ায় ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়। চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আলী আমিন কারাগারে রয়েছেন।

রাজিয়া সুলতানা বলেন, নাতনি দুটি এখন রাজধানীর চিটাগাং গ্রামার স্কুলে পড়ছে। তাদের পেছনে পড়াশোনা বাবদই ৫০ হাজার টাকা বহন করতে হয়। যা এখন আমার পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আলী আমিনের বাবা আমিন আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আদালতে কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার ছেলে কথা বলবে বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App