×

সম্পাদকীয়

পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২০, ০৬:৩৫ পিএম

সিলেটের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গত রবিবার সকালে রায়হান আহমেদ নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশি নির্যাতন বা হেফাজতে মৃত্যুর বেশকিছু ঘটনা ঘটলেও এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিলেটের ঘটনাটিও ব্যতিক্রম নয়। জানা গেছে, সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমেদ। রিকাবীবাজার এলাকায় স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতেন। গত রবিবার সকালে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হান মারা যান। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় নগরের কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে এলাকাবাসী রায়হানকে আটক করে এবং গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ তাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, পুলিশের বক্তব্য সঠিক ছিল না। নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গত রবিবার মধ্যরাতে রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত সোমবার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধপ্রবণ সদস্যদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অন্তরায়। পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হলেও পুলিশের অপরাধ কমছে না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি এসব তো একেবারেই মামুলি অপরাধ, উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার, অপহরণ, নির্যাতন, খুনের মতো বড় বড় অপরাধকর্মেও এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। পুলিশের যে বিশেষ পোশাক জনগণের কাছে নিরাপত্তার ও নির্ভরতার প্রতীক হওয়ার কথা, সেটা অনেক সময়ই জনগণের কাছে আতঙ্কের বস্তুতে পরিণত হয়। পুলিশের কাজ অপরাধী দমন। অথচ তারাই অপরাধ ঘটাচ্ছে, অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে আর নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিরোধে একটি আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হলেও এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কেউ নির্যাতনের শিকার হলে আদালতে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যারা বিচার চান তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা ও সুরক্ষা পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার। সিলেটে রায়হান হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরও কোনোভাবে ছাড় নয়। অভিযুক্তদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App