×

শিক্ষা

ক্যাম্পাসে ফিরতে চান জাবি শিক্ষার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২০, ১১:২৫ এএম

ক্যাম্পাসে ফিরতে চান জাবি শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি।

করোনা মহামারিতে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশনজটসহ নানামুখী শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাজারো শিক্ষার্থী। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও সেসব শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিংবা অধিকাংশ পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। এছাড়া প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাব, ডিজিটাল ডিভাইস জটিলতা, নেটওয়ার্ক স্বল্পতায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম হাওয়ায় অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এমন অবস্থায় শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে অস্বচ্ছতার অভিযোগে আন্দোলন-ধর্মঘটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে পিছিয়ে যায় বিভিন্ন বিভাগের নির্ধারিত সময়ের পরীক্ষা। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাম্পাসে ফিরতে চান জাবি শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে আগে থেকেই সেশনজট আছে। আইন অনুষদে সেশনজট এক বছরের। কলা ও মানবিক অনুষদের বাংলা বিভাগ ছাড়া বাকি আটটি বিভাগ ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজটের কবলে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগেই ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সেশনজট। গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভ‚তাত্তি¡ক বিজ্ঞান বিভাগে এক বছর করে এবং পরিসংখ্যান বিভাগ ও গণিত বিভাগে ছয় মাস করে সেশনজট আছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে রয়েছে দেড় বছরের সেশনজট।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায় করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, সরকার ও রাজনীতি, প্রতœতত্ত¡, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৩০টিরও বেশি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ কিংবা পরীক্ষা চলমান রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ হাসান বলেন, মহামারির কারণে অনির্দিষ্ট সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অলরেডি হাজারো শিক্ষার্থী ভয়াবহ সেশনজটে পড়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনে পরীক্ষামূলকভাবেও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া যেতে পারে।

ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, করোনা পুরোপুরি নির্মূল না হলে আমরা কোনোভাবেই ক্লাস নেয়ার পক্ষে না। তবে যেসব শিক্ষার্থীর অনার্স ও মাস্টার্সের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা আটকে আছে, প্রাথমিকভাবে ধাপে ধাপে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করতে দিয়ে চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারে প্রশাসন। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের সুষম খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিতে হবে হলো প্রশাসনকে। ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিছা পারভীন জলি বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়াও প্রায় অসম্ভব। এমনকি হলের গণরুম বাস্তবতাও ভুললে চলবে না। তবে আমরা অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষাগুলোও কীভাবে অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারি তা নিয়ে একটি উচ্চতর কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অনেক বিভাগই ক্লাস শেষ করে শুধু পরীক্ষার জন্য আটকে আছে। বিশেষ করে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কারণে পিছিয়ে পড়ছে। সনদের কারণে তারা উচ্চশিক্ষা ও বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছে না। তাদের কথা চিন্তা করেই অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির এক সভায় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কমিটির অন্য সদস্যরা প্রস্তাবটির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App