×

সারাদেশ

পুলিশ যেভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায় যেভাবে ফাঁসে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২০, ০৪:৫৬ পিএম

পুলিশ যেভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায় যেভাবে ফাঁসে!

মাছ ব্যবসায়ী বাবলা দাশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মহসিন/ফাইল ছবি

পুলিশ যেভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায় যেভাবে ফাঁসে!

ওসি মোহাম্মদ মহসিন সাজানো গল্পটি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন

একজন মাছ ব্যবসায়ী এভাবে গল্প সাজিয়ে পুলিশকে ফাঁসিয়ে নিজের মালিকের টাকা আত্মসাত করবে তা কেউ ভাবতেই পারেনি। এমনি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। বাবলা দাশ আনুমানিক বয়স ৩৬ হবে। চট্টগ্রামের লালখানবাজার এলাকার মাছ ব্যবসায়ী বাবলা দাশ ঋণভারে জর্জরিত। মাছের আড়তদারের কাছেও ঋণ। ঋণের টাকা ঠিকমতো দিতে না পারলে নতুন করে মাছ পাওয়া যাবে না আড়তদারের কাছ থেকে। এই কারণেই 'পুলিশের টাকা ছিনতাই ও ইয়াবা' ফাঁসানোর গল্প সাজায় বাবলা দাশ।

বাবলা দাশের সেই গল্পে ফেঁসে যায় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন। পরে তদন্ত শুরু হলে দেখা যায়, বাবলা দাশ অসত্য বলেছেন, ভুয়া গল্প সাজিয়ে পুলিশকে ফাঁসিয়ে নিজেই আড়তদারের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি পুলিশের ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছিলেন। তদন্ত পর্যায়ে বাবলা দাশের সাজানো গল্পটি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন। গত ১১ অক্টোবর তাঁর গল্পটি এরকম...

[caption id="attachment_246781" align="aligncenter" width="618"] ওসি মোহাম্মদ মহসিন সাজানো গল্পটি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন[/caption]

পুলিশ যেভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায়! মাছ বেচে ফিসারিঘাট যাচ্ছিল বাবলা। পথেই তার গতিরোধ করে পুলিশ। তল্লাশি চালায় এবং একপর্যায়ে গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তুলে কিছুক্ষণ ঘোরানোর পর নির্জন এক জায়গায় তাকে নামায়। এরপর তার পকেটে ইয়াবা গুঁজে দিয়ে বলে ইয়াবা ব্যবসায়ী! ইয়াবাসহ তার কিছু ছবিও তুলে রাখে সেই পুলিশ সদস্যরা! এরপর বাবলার কাছে থাকা এক লাখ ১৩ হাজার টাকা তারা নিয়ে নেন! এবং তাকে হুমকি দেন, যদি এই টাকার বিষয়ে কাউকে বলে, তাহলে তাকে এসব ছবি দিয়ে মামলা দিয়ে দেবে! টাকা 'হারিয়ে' বাসায় চলে আসে বাবলা।

পুলিশ যেভাবে ফাঁসে! বাবলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানায় তার আড়তদার। কারণ, 'আত্মসাতকৃত' সেই টাকাগুলো আড়তদারের পাওনা পরিশোধের জন্যই যাচ্ছিল। অভিযোগ গুরুতর। পাশাপাশি পুলিশবিরোধী সেন্টিমেন্টের 'পিক আওয়ার' চলছে। তাই সাথে সাথেই তদন্ত শুরু করি।

যদিও শতভাগ বিশ্বাস ছিল, 'টিম কোতোয়ালি' এটা কখনোই করবে না। কিন্তু বাবলার আত্মবিশ্বাস ছিল আমার বিশ্বাসের চেয়েও বেশি। তাই কিছুটা কনফিউজড ছিলাম। সিনিয়র স্যারদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে বাবলা তার কথায় অনড় থাকে। তাকে সিসিটিভি ফুটেজের কথা বললে সে বলে, 'স্যার, সেটা দেখলেই প্রমাণ পাবেন আমার অভিযোগের'!

উপায়ন্ত না দেখে তাৎক্ষণিকভাবেই তার সামনেই আনা হয় সিসিটিভি ফুটেজ। প্রতি মোড়ের প্রতিটাক্ষণ যাচাই করা হয়। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী তাকে যেখান থেকে পুলিশ গাড়িতে 'তুলে' সেখানে তাকে দেখা গেল না! যেখানে যেখানে তাকে 'ঘোরানোর' অভিযোগ করেছিল সেখানে আমাদের গাড়ি যায়নি! আবার যেখানে তাকে 'নামিয়ে' দেওয়ার কথা বলল, সেখানেও নেই তার অস্তিত্ব!

এসব দেখার পরই শুরু হয় তার অসংলগ্ন কথাবার্তা। এরপর আবারো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে সে স্বীকার করে তার সব অভিযোগই মিথ্যা! মূলত আইপিএল-এ বাজি ধরে সে সব টাকা খুঁইয়েছে। টাকা না দিলে মাছ পাবে না- তাই 'পুলিশ টাকা নিয়ে নিয়েছে' বলে উদ্ধার পেতে চেয়েছিল বাবলা। তার দাবি, এই অভিযোগ সবাই বিশ্বাস করবে। তাই এমন অভিযোগই সে করেছে।

এই সত্য উদ্‌ঘাটনের পর যখন ঘুমাতে যাব, তখন ভাবছি, যদি এই সত্য বের না হতো তাহলে কি হতো? 'ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাৎ' সংবাদের শিরোনাম হতাম আমরা। আমার অফিসার ক্লোজড হতেন। আমিও.....। আল্লাহ, সহায় ছিলেন। তাই বেঁচে গেলাম। চোরের দশদিনের পর আজ আসলে আমাদের গেরস্থেরই দিন ছিল। ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেল বাবলা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App