×

আন্তর্জাতিক

করোনা প্রতিরোধে মাস্কের বিকল্প নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২০, ০৪:৪৬ পিএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব টালমাটাল। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় সতর্কতা আর সচেতনতাই একমাত্র উপায়। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের সময় দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ সুনামির মতো আছড়ে পড়বে। আর এ করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সর্তকতার বার্তা স্বরূপ চিকিৎসকরা বলছেন, প্রধান হাতিয়ার হিসেবে মাস্কই এখন র্পযন্ত সেরা উপায়। পাশাপাশি ভিড় এড়িয়ে চলা এবং পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার ক্ষেত্রেও জোর দিচ্ছেন তারা।

করোনার একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন দেশ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে লকডাউন কার্যকর করে। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে প্রায় সব দেশের সরকার। আর এই স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে মাস্ক ব্যবহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গবেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ ভাইরাস বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এমন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। তাই মাস্ক ব্যবহারের ফলে হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা। মহামারি বা অতিমারি একবার হয়েই শেষ হয়ে যায় না। ঘুরে ফিরে আসে। মাস্ককে জীবনের অঙ্গ করতে পারলে ভবিষ্যতের মহামারিও আটকে দেয়া যাবে।

এ নিয়ে ভারতের বিখ্যাত কনসালট্যান্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ ঘোষ দস্তিদার বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা বা সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আবিষ্কার হলেও সঠিকভাবে মাস্ক পরাকে আমাদের জীবনের অঙ্গ করে নেওয়া উচিত। ভ্যাকসিন এলেই যে নভেল করোনাভাইরাস ভ্যানিশ হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। কোভিড-১৯-এর কার্যকর টিকা কবে আসবে এবং সবাই সেই টিকা নেওয়ার সুযোগ পাবেন কি না, সে বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।

তিনি বলেন, তার থেকে অনেক সহজ কাজ নিজেদের অভ্যাস পাল্টে ফেলা। এ ছাড়া টিকা এলেও মাস্ক পরার অভ্যেস ছাড়লে চলবে না। পোশাক পরার মতোই মাস্ককে সর্বক্ষণের সঙ্গী করে নিতে হবে। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আমাদেরই হাতে। সিগারেট ছেড়ে দেওয়া যেমন কঠিন কাজ, কিন্তু মনের জোরে এই নেশা ছাড়লে লাভবান হওয়া যায়। তেমনই মাস্ক পরাকে মানুষের মজ্জাগত করে তুলতে পারলে কোভিড-১৯-এর মহামারিকে আটকে দেওয়া যাবে।

বিশ্বজিতের মতে, মানুষ অভ্যাসের দাস। একটু কষ্ট করে মাস্ক দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখলে ড্রপলেট-সহ সব সংক্রমণই প্রতিরোধ করা যাবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স, টনসিলাইটিসের মতো সংক্রামক অসুখের ঝুঁকিও অনেক কমবে। মাস্ক পরার মূল উদ্দেশ্য বাতাসে ভেসে থাকা ভাইরাস আটকে দেওয়া। তাই মাস্ক পরাকে জীবনের অঙ্গ করে নিতে পারলে মানুষ অত্যন্ত লাভবান হবেন বলে পরামর্শ বিশ্বজিতের।

ভারতের এক দল মেডিক্যাল শিক্ষার্থী বিভিন্ন বাজার ও জনবহুল এলাকায় সমীক্ষা করে দেখেছেন, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন মাস্ক পরেননি। আবার যারা মাস্ক পরেছেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মাস্ক নাকের তলায়। ঠিক এই কারণেই লাগাতার লকডাউন করেও কোভিড-১৯ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যাচ্ছে না।

করোনা বিধ্বস্ত বিশ্বে সংক্রমণ রুখতে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হলেও বিপুল চাহিদার ফলে তার যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। মেডিক্যাল মাস্কের অভাবে অসুবিধায় পড়ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদিকে সেই মাস্ক মুখে পরে ঘুরছেন সাধারণ মানুষ। একই অবস্থা এন ৯৫ মাস্কের ক্ষেত্রেও। জনসমাজে ধারণা তৈরি হয়েছে, বাড়িতে তৈরি কাপড়ের মাস্ক মোটেও ভাইরাস রোধে সক্ষম নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কাপড়ের মাস্ক, যদি ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়, তাহলে সার্জিকাল মাস্কের মতোই সুরক্ষা প্রদানে সক্ষম।

এছাড়া, প্রাণঘাতি এ ভাইরাস মোকাবিলা করতে হলে ঘরে বাইরে সব জায়গাতে সতর্ক হতেও দেখা যাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষকে। এমন দূর্দিন টপকিয়ে সুদিনের দেখা পাবে বলেও মনে করেন মানুষ। সতর্কতা হিসেবে ভিড় এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ সংস্থাটির মতে, ভিড়ের মধ্যে গেলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং অন্যদের থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাটাও সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয়, সংস্থাটি বলছে আমাদের আশেপাশে যেসব মানুষ থাকে তারাও যাতে ভালভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের আদব মেনে চলেন তাও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App