অপরাধ কমাতে পরিবার সমাজেরও দায় রয়েছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৫৯ পিএম
গতকাল মঙ্গলবার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এর মধ্য দিয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইন কার্যকর হলো। সংসদ অধিবেশন না থাকায় দ্রুততার সঙ্গে আইন কার্যকর করতে সাধারণত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ জারির পর আইন প্রয়োগে আর বাধা থাকল না। আশা করছি, নতুন আইনের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। তবে শুধু আইন করে বা বিদ্যমান আইনের সংশোধন করেই অপরাধ কমানো যাবে না, আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। ইদানীং বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, একই সঙ্গে ধর্ষণ ও হত্যার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। এমতাবস্থায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বদলে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের উদ্যোগ নেয় সরকার। বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদণ্ডের বিধান আছে। এ আইনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৮০ দিন (ছয় মাস) সময় বেঁধে দেয়া থাকলেও বাস্তবে ওই সময়ের মধ্যে রায় দেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনা কিছুদিন পরপর সারাদেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম। ধর্ষণের বেশিরভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় চাপা পড়ে যায়। তাছাড়া ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে নিরীহ মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়েও সর্বোচ্চ বিচার পাচ্ছে না। ফলে দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যৌক্তিক। অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এ রকম অভিযোগ অজস্র। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। সাম্প্রতিক সময় ধর্ষণের ঘটনার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। এটাও মনে রাখতে হবে, আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে না হলে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না।