×

মুক্তচিন্তা

সোনালি আঁশের গৌরব ফিরুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩৬ পিএম

গতকালের ভোরের কাগজের একটি রিপোর্টে পাটের সম্ভাবনার খবর জানিয়ে বলা হয়, পোশাকের চেয়েও করোনাকালে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বড় উল্লম্ফন ঘটেছে পাটপণ্যে। যার বড় প্রমাণ চলতি অর্থবছরে পাট খাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনাকালীন এ সময়েও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির বড় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে। এই দুঃসময়ে এটি খুবই আশার খবর। বাংলাদেশের সবচেয়ে অর্থকরী ফসল হিসেবে পাট একটা সময় পর্যন্ত বিশ্বে সমাদৃত ছিল। পাটকে সোনালি আঁশ বলে আখ্যায়িত করা হতো। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে স্বীকৃত ছিল পাট। আদমজী পাটকল বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল হিসেবে খ্যাত ছিল। কালের ব্যবধানে সেই ঐতিহ্য ধুলোচাপা পড়েছে। সুখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে পাট ফিরছে নতুন সম্ভাবনায়। সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের। বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা পুনরুচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে আসে বাংলাদেশের পাটশিল্পের নতুন সম্ভাবনার কথা। এই একটি প্রাকৃতিক তন্তুর ওপর ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের একাধিপত্য রয়েছে। গত চার-পাঁচ দশকে এ পাট নিয়ে ষড়যন্ত্র ও আত্মঘাতী তৎপরতা অব্যাহত থাকা সত্তে¡ও পাটের উৎপাদন এবং বেসরকারি উদ্যোগে পাটের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখার সম্ভাবনা এখনো হাতছাড়া হয়ে যায়নি। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যখন ধুঁকে ধুঁকে মরতে বসেছে, তখন বেসরকারি উদ্যোগে পাটশিল্প সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে। বাংলাদেশের ৪০ লাখ কৃষকের কাছে এখন পর্যন্ত অর্থকরী ফসল হচ্ছে পাট। পাট এমনই একটি কৃষিপণ্য, যার কোনো কিছুই ফেলনা নয়। মূলত পাট এমনই একটি ফসল, যার আঁশ থেকে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার, কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্যাগ, খেলনা, শোপিস, ওয়ালমেট, গহনা, অলঙ্কারসহ ২৮৫ ধরনের পণ্য, যা দেশে ও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সোনালি আঁশে সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্নে স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালে বিজেএমসির আওতায় ৭৬টি পাটকল ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারণে মিল সংখ্যা কমতে কমতে ২৫-এ ঠেকে। গত জুলাই মাসে পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। উৎপাদন বন্ধ করে ২৪ হাজার ৮৮৬ স্থায়ী শ্রমিককে অবসরে পাঠানো হয়েছে। দেশের পাটচাষি ও পাটকল শ্রমিকদের স্বার্থ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভুক বিজেএমসির জনবল কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাটের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নে পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ মুহূর্তে ১২০টি দেশে পাটপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এ বাজার আরো সম্প্রসারণ হবে। পাট আবারো হয়ে উঠবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App