×

জাতীয়

নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২৯ যুদ্ধাপরাধীর আপিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১০:২৬ এএম

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতেও শুনানি সম্ভব

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী আপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা ২৯ আসামির আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ৬ মাস বন্ধ থাকার পর বর্তমানে ভার্চুয়াল এবং সরাসরি আদালতে বিচারকাজ চলছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিল শুনানি সম্ভব বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। আর দীর্ঘদিন মানবতাবিরোধী মামলার শুনানি না হওয়ায় হতাশ বিচারের দাবিতে আন্দোলনকরীরা।

গত ১৮ জুলাই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম আপিলের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য নিয়মিত আদালতে উপস্থাপন করতে বলেন ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ নিয়মিত আদালত চালুর পর আজহারের রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২৯ জন আসামির আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও জামায়াতে ইসলামির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান, মোবারক হোসেন, মাহিদুর রহমান, ফোরকান মল্লিক, সিরাজ মাস্টার, খান আকরাম হোসেন, আতাউর রহমান, ওবায়দুল হক তাহের, শামসুদ্দিন আহম্মেদ, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, শামসুল হক ওরফে বদর ভাই, এস এম ইউসুফ আলী, সাখাওয়াত হোসেন, মোসলেম প্রধান, আব্দুল লতিফ, ইউনুছ আহমেদ, আমির আহম্মেদ ওরফে আমির আলী, জয়নুল আবেদীন, আব্দুল কুদ্দুস, রিয়াজ উদ্দিন ফকির, আকমল আলী তালুকদার এবং ইসহাক শিকদারের আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ মার্চ আপিল নিষ্পত্তি হয় যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মামলা। মাঝখানে সাড়ে ৩ বছর পার হলেও যুদ্ধাপরাধের আর কোনো আপিল শুনানি হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১(৪) ধারা অনুযায়ী আপিল দাখিল করার ৬০

দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার কথা। তবে আইনজ্ঞদের মতে, এই বিধান আপিল বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক নয় বরং নির্দেশনামূলক। আপিল বিভাগ তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলা শুনানি করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘদিন যুদ্ধাপরাধের কোনো মামলার আপিল শুনানি না হওয়া বিচার প্রার্থীদের জন্য খুবই হতাশাজনক। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বিচারকাজ চলছে এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিল শুনানি সম্ভব। তবে এর জন্য সরকার ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সদিচ্ছা থাকতে হবে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলার এসব আপিল দীর্ঘদিন ধরে শুনানি না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আমরা জানি, সুপ্রিম কোর্টে অনেক মামলার চাপ রয়েছে। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাইব্যুনালের ভেতরেই একটি বিশেষ আপিল বেঞ্চ করে দিতে পারে। এতে সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত মামলা শুনানিতেও বিঘ্ন হবে না, একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের এসব আপিলও দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সব সময়ই বলে আসছি, এই মামলাগুলো বিশেষ মামলা। এই মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই নিষ্পত্তি করতে হয়।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ পর্যন্ত ৬ আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী। এছাড়া জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App