×

জাতীয়

দ্রুত বিচার নিশ্চিতের তাগিদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩১ এএম

ধর্ষণ ও নির্যাতন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বিচার হয় মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ

দেশে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এবং সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে বধূকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত সারাদেশ। এ নিয়ে চলছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। দাবি উঠেছে নির্যাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার। চলমান দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

তবে গবেষকরা বলছেন, আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয় বরং পৈশাচিক এই সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন দ্রুত বিচার। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ায়; অন্যদিকে ভয়ের আবহ থেকে বেরিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর দুঃসাহস পায় অপরাধীরা।

পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪০০টি। এ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ধর্ষণের হার ৩ দশমিক ৮০। বাংলাদেশে মেট্রোপলিটন এলাকায় নারী ও শিশু ধর্ষণের ট্রাইব্যুনালে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ মামলায় চূড়ান্ত বিচারের রায় হয়। বিদেশি সমীক্ষার ভিত্তিতে ডয়েচে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ধর্ষণের হার প্রতি লাখে ১০ জন এবং সমগ্র বিশ্বে অবস্থান ৪০তম। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৯ সালে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪১৩টি; যা ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণের বেশির ভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়। এ ছাড়া ধর্ষণের বিচার পেতেও নারীকে পদে পদে হয়রানি আর অবমাননার শিকার হতে হয়। অধিকাংশ সময় মামলা ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ায় তদন্ত, ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট কিংবা পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে চূড়ান্ত রায়ে মামলা ডিসমিস হয়ে যায়। ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত চার্জ দেয়ার কথা থাকলেও মামলার চার্জশিট সঠিক সময়ে দেয়া হয় না। আবার মামলার চার্জশিটের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুর্বলতার কারণেও ভিকটিম ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। তাদের দাবি, বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ধর্ষণ বাড়ছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, সে তুলনায় বিচারের হার অত্যন্ত কম। ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধ কমছে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদের ডিন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ভোরের কাগজকে বলেন, নারীকে পণ্য হিসেবে দেখা, অসমতা, বৈষম্য, মৌলবাদ, পিতৃতান্ত্রিকতা, নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, ক্ষমতায়ন, উত্তরাধিকার আইন সবকিছুই অপরাধীর অনুকূলে। অন্যদিকে অনেক সময় নারীবিষয়ক মামলাগুলো ফলাফলশূন্য হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধী পার পেয়ে যায়। প্রয়োজন দ্রুত বিচার করে অপরাধীর ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ নিশ্চিত করা। তবে মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণ কমাবে কিনা, আইন প্রণয়নের আগে এ বিষয়ে আরো আলোচনা, চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী।

গবেষকদের মতে, বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের বিচারে ভিকটিমকে সামনে রেখে শাস্তি কার্যকর করা হয়। ভিকটিমকে কোনোভাবেই আগের অবস্থা ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, তবে তার কষ্ট কিছুটা লাঘবের জন্য এমনটি করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিবসগুলোতে গরম গরম বক্তৃতা দেয়া হয়। কিন্তু পরক্ষণে সবাই তা ভুলে যায়। অন্যদিকে আইনের বাস্তবায়ন এবং নির্যাতিত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক্ষেত্রেও বড় সমস্যা রয়েছে। ফলে ধর্ষণের অভিযোগ বিচারের পর্যায়ে যেতেই অনেক সময় লেগে যায়। যা প্রকারান্তরে অপরাধীকে মুক্ত হাওয়ায় আরো অপরাধের পথ সুগম করে দেয়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধ বাড়ায়। অপরাধীর সাহস বেড়ে যায়। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর দুঃসাহস পায়। মানুষ শাস্তিকে ভয় না পেলে এই শাস্তি কাজে আসবে না। আইনের মারপ্যাঁচে অনেক সময় অপরাধীর পক্ষে চলে যায়। তিনি বলেন, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের কারণগুলো আন্তঃসম্পর্কীয়। আমাদের দেশে সামাজিক অপরাধকে ঠুনকো করে দেখা একটি বড় সমস্যা। অন্যদিকে নিপীড়িত অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলেই অপরাধীরা অপরাধ করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব ভিকটিমকে সবধরনের সাপোর্ট দিয়ে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা। এক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App