×

রাজধানী

দখলে-দূষণে বেহাল খাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০, ০৯:১৯ এএম

দখলে-দূষণে বেহাল খাল

পুরাতন গাবতলী খাল।

জেলা প্রশাসনের ১২ খালের দেখভাল নেই। ওয়াসার ১৫ খাল পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। খালের উপর গড়ে উঠেছে স্থায়ী স্থাপনা।

ঢাকায় খালের সংখ্যা মোট ৩৮টা। ২৬টির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। আর ১২টি নামমাত্র জেলা প্রশাসনের। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এই ১২টি খালের অভিভাবক নেই বললেই চলে। কারণ জেলা প্রশাসন এসব খাল রক্ষণাবেক্ষণে তেমন মনোযোগী নয়। আর ওয়াসার ১৫টি খাল পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। ফলে এসব খালে পানিপ্রবাহ একপ্রকার বন্ধই রয়েছে। প্রভাবশালী মহল দখলে নিয়েছে বেশিরভাগ খাল। গড়ে তুলেছে মজবুত ও স্থায়ী স্থাপনা। দখলদারদের থেকে খালগুলো উদ্ধারের দায়িত্ব যাদের হাতে, তারা সেই দায়িত্ব পালন না করে একে অন্যকে দোষ দিতে ব্যস্ত। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতে ডুবছে মহানগর।

জানা গেছে, গোবিন্দপুর খাল, পুরাতন গাবতলী খাল, রায়েরবাজার, নারিন্দা খাল, ধোলাইখাল, জলপুরি খাল, শ্যামপুর, কদমতলী খাল, আফতাবনগর লেক, গজারিয়া খাল, টাকির খাল ও রানাধুনা খালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। কিন্তু জেলা প্রশাসন এই ১২টি খালের রক্ষণাবেক্ষণ সেই অর্থে করে না। শুধু তাই নয়, ওয়াসার অধীনে থাকা ২৬টি খালেরও রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে হচ্ছে না। ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ১৫টি খাল। এ নিয়ে হতাশাও আছে অনেক। ঢাকার ২ সিটি মেয়র দখলকৃত খাল উদ্ধারে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছেন। এরইমধ্যে পানি নিষ্কাশনের খালগুলো নিজেদের অধীনে চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তারা। ওয়াসার অধীনে আর কোনো খাল রাখতে চান না ২ মেয়র।

এরইমধ্যে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ওয়াসার অধীনে থাকা দুটি খাল দক্ষিণখানের কাওলা আর কালশীর সাংবাদিক খাল পরিষ্কার করেছেন সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে। গত বুধবার মিরপুরের গোদাবাড়ি খাল উদ্ধারে নামেন তিনি। এসময় খাল পরিষ্কারে কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে নিজেও অংশ নেন মেয়র। যন্ত্র নিয়ে পরিষ্কার করেন আবর্জনা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয়দের অনুরোধ করেন খালে আর কোনো আবর্জনা না ফেলতে।

এসময় মেয়র আতিক বলেন, এই খাল কি নগরবাসীর ময়লা আবর্জনা, ব্যবহার্য জিনিস ফেলার জন্য? নাকি পানির প্রবাহের জন্য। বিদেশে আমরা দেখি খালের ওপর দিয়ে ওয়াটার ট্রান্সপোর্টেশন করা হয়। এই খালে স্যুয়ারেজের পানি পড়বে, বর্ষার পানি পড়বে। তারপর

সেগুলো নদীতে যাবে। কিন্তু এই খাল আমরা জাজিম, টিভি, ফ্রিজ, বালিশ, ডাবের খোসা দিয়ে ভরে রাখি। তাহলে খালগুলো কাজ করবে কিভাবে? এসময় প্রতিটি খালের আশপাশে থাকা নগরবাসীকে খালের দায়িত্ব নেয়ার আহŸান জানান তিনি। এদিকে খাল উদ্ধারে কখনোই শক্ত কোনো

পদক্ষেপ না থাকায়, দখলদারদের কবলে চলে যাচ্ছে। এসব খালের ওপর অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। কেননা, দখলদাররা খুবই প্রভাবশালী। যে যেভাবে পারছে, খাল দখল করছে। ডেভেলপার থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানি নেমেছে খাল দখলের প্রতিযোগিতায়।

ঢাকার খাল উদ্ধার প্রসঙ্গে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রভাবশালীরা একের পর এক খাল দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি করছে। এসব খাল উদ্ধারে ঢাকার মেয়ররা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা কিভাবে টেকসই করা যায়- সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। যখন কোনো খাল উদ্ধার করা হবে; তখন সঙ্গে সঙ্গে খালের যেসব পাড় আছে, সেগুলো জনসাধারণের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে করে দিতে হবে। এতে এলাকার মানুষ সেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করবে। তখন এই খালগুলো আর কেউ দখল করতে পারবে না। সেইসঙ্গে প্রতিটি খালেই স্থানীয়ভাবে নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে খাল রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি করতে হবে। সেখানে এলাকার যারা আছেন- তাদের কাজ হবে খাল ও পাড় রক্ষণাবেক্ষণ করা। এলাকায় যত পার্ক ও খেলার মাঠ আছে, ছোট ছোট খাল আছে- সেগুলোও তারা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।

এভাবে প্রতিটি এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে যদি কমিটি করা হয়, তাহলে সেগুলো আর দখল করার সাহস কেউ পাবে না। তিনি বলেন, খালগুলোর প্রবাহ আর ম্যাপ সম্পর্কে জায়গায় জায়গায় বড় সাইনবোর্ডে লিখে দেয়া থাকবে। খালের সবধরনের বিবরণ থাকবে। এতে খালের বিস্তারিত মানুষ জানতে পারবে। সেটা রক্ষায় তারা পদক্ষেপ নেবে।

এই নগরবিদ আরো বলেন, ওয়াসার অধীনে যে ২৬টি খাল আছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। ওয়াসার কাছে এই খালগুলোর ডিটেইলস ম্যাপ আছে। ড্যাপেও নতুন করে এই খালগুলো চিহ্নিত করা আছে। ড্যাপের রিপোর্টে চিহ্নিত করা থাকলেও এখানেও একটা ঘাপলা আছে। এখানে মহানগর জরিপকে রেফারেন্স করা হয়েছে। কিন্তু খালগুলোর ক্ষেত্রে কোর্টের নির্দেশ বা খালগুলোর মেইন রেফারেন্স হচ্ছে সিএস এবং আরএস দাগ। কিন্তু মহানগর জরিপে যেভাবেই হোক ভুল করে বা যে কোনোভাবে ওটাকে আর খাল দেখানো হয়নি অর্থাৎ মহানগর জরিপে খাল নেই। ড্যাপেও খাল দেখানো হচ্ছে না। এতেও কিন্তু খালের অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। যেহেতু হাইকোর্টের নির্দেশ আছে আরএস ম্যাপগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য মহানগর জরিপের সঙ্গে আরএস ম্যাপের যে মিসিং খালগুলো, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার প্রয়োজন আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার সব খাল উদ্ধার, খনন এবং উভয় পাড়ে হাঁটার রাস্তা করতে না পারলে খাল প্রবাহমান রাখা যাবে না। খাল পরিষ্কার করতে পারলে ছোট ছোট নৌকাও চলতে পারবে। মানুষ চলাচল করলে কেউ আর ময়লা ফেলতে পারবে না এসব খালে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App