×

মুক্তচিন্তা

এই সময়ে সাংবাদিকতা ও পেশার ভবিষ্যৎ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৫৬ পিএম

এই সময়ে সাংবাদিকতা ও পেশার ভবিষ্যৎ

মোল্লা জালাল

সুপ্রিমকোর্টের রায়ের অন্তর্নিহিত নির্দেশনা ঊর্ধ্বে রেখে সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পেশার সুরক্ষা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখায় সচেষ্ট হতে হবে। এখানে কেউ কাউকে ঠকিয়ে বেশি দিন টিকতে পারবে না। এতে পক্ষগুলো পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যে সংগ্রাম, সংঘাত ও সংঘর্ষ করবে তাতে ‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের’ মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে।

করোনা মহামারি সাংবাদিকদের নতুন কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। এই মহামারি থেকে জীবন রক্ষার জন্য বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। এর মধ্যে রয়েছে- কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনটেইন, মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, গরম পানি পান করাসহ আরো কিছু নিয়মকানুন। কারণ এখনো পর্যন্ত এই মহামারির কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ফলে ‘জীবন রক্ষার’ জন্য এসব নিয়ম মেনে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

অপরদিকে এই নিয়মগুলো যথাযথভাবে মেনে চললে সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে যায়। কারণ একজন সাংবাদিক যদি কোয়ারেন্টাইনে থাকেন তবে তার পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সাংবাদিকের আইসোলেশনে থাকার মানে জেলে থাকার শামিল। লকডাউনে পড়লে সাংবাদিক কোনো অবস্থাতেই ঘটনাস্থলে যেতে পারেন না। ঘটনাস্থলে না গিয়ে কোনো রিপোর্ট করলে সেটা হয় হোম মেইড। যা কারো কাম্য নয়। সোশ্যাল ডিসটেন্স প্রকৃত সত্য জানার ক্ষেত্রে বড় বাধা। কারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে না পারলে কী জানবে, কীভাবে জানবে। সবাই মাস্ক পরে থাকলে ভিকটিমকে চিনবে কীভাবে। অনেক রিপোর্টের ক্ষেত্রে ভিকটিম বা সোর্সকে চিনতে হয়। না চিনলে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতায় আস্থা থাকে না। শুধু সাবান দিয়ে হাত ধোয়ায় সাংবাদিকের কাজে তেমন কোনো অসুবিধার হওয়ার কথা নয়।

এমতাবস্থায় বলা যায়, করোনা মহামারির সময়ে একজন সাংবাদিক যদি নিজের জীবন বাঁচানোর বিষয়কে প্রাধান্য দেন তবে তার পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন কঠিন। আবার যদি দায়িত্ব পালনকে মুখ্য বিবেচনা করা হয় তবে সাংবাদিকের জীবন হয় মারাত্মক ঝঁকিপূর্ণ। মহামারির সময়ে অন্য কোনো পেশাজীবীর ক্ষেত্রে এ অবস্থা দেখা যায়নি। মহামারির সময়ে সংবাদকর্মীদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করার ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। কমবেশি সব পর্যায়ের সংবাদকর্মী উপলব্ধি করেছেন, এ পেশার মানুষ কতটা অসহায়, নিরাপত্তাহীন।

বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় সাংবাদিকদের কর্মের স্বাধীনতাসহ জীবন-জীবিকার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়। আবার এর উল্টোটাও আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রেও সংবাদপত্রের তথা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও জীবন-জীবিকার সুরক্ষায় কতগুলো আইন ও বিধিবিধান রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজই হচ্ছে এগুলো দেখভাল করা। সরকারের যেমন সব কিছু দেখভাল করার দায়িত্ব তেমনি সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজ কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা আদায়ে সোচ্চার থাকা। মালিক পক্ষ ইউনিয়নের দাবি না মানতে চাইলে প্রয়োজনে সরকারের ওপর প্রেসার সৃষ্টি করা, যাতে সরকার বাধ্য হয় রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে মালিকদের বাধ্য করে।

সংবাদকর্মীদের রুটি-রুজির নিশ্চয়তা প্রদান ও মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে আইনি প্রতিনিধি হচ্ছে সাংবাদিক ইউনিয়ন। সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজ কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সরকারের কাছ থেকে সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে নেয়া। ইউনিয়ন ক্লাব নয়। ক্লাবে মানুষ যায় টাকা খরচ করে আনন্দ বিনোদন করতে। ইউনিয়ন সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে দায়বদ্ধ। সাংবাদিক ইউনিয়ন এই আইনি অধিকার পেয়েছিল ১৯৭৪ সালে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জীবন-জীবিকার খবরাখবর রাখতেন। তিনি জানতেন সাংবাদিকতা পেশার ঝুঁকির বিষয়গুলো। তাই তিনি ১৯৭৪ সালে ‘The Newspaper Employees (Serviccs & Condition) Act 74’ প্রণয়ন করে সাংবাদিকদের অধিকার ও মর্যাদাকে রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা সুরক্ষিত করেন। ওই আইনের আলোকেই গঠন করা হয় ওয়েজ বোর্ড। ঘোষণা করা হয় রোয়েদাদ। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সাংবাদিকদের অধিকার ও মর্যাদার রক্ষা কবচ ‘The Newspaper Employees (Serviccs & Condition) Act 74’ আইনটি বাতিল করে শ্রম আইনের আওতায় ফেলে সাংবাদিকদের কলকারখানার শ্রমিকদের কাতারে নামিয়ে দেয়। এতে সাংবাদিকদের মেধাভিত্তিক শ্রমের মর্যাদা ও মূল্য বিনষ্ট হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক ইউনিয়নের লাগাতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য ’৭৪ সালের আইনটিকে সময়োপযোগী করে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করার নির্দেশ প্রদান করেন।

এদিকে নোয়াবের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউনিয়নের যৌক্তিক দাবির কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিলে নোয়াব ওই গেজেট প্রকাশের বৈধতা নিয়েও হাইকোর্টে রিট করে। তথ্য মন্ত্রণালয় ওই রিটের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করে। চূড়ান্ত পর্যায়ে শুনানিতে সুপ্রিমকোর্ট বলেছে, ‘সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্রের মালিকরা অস্তিত্বহীন’। তার মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রের আইন মনে করে, সংবাদপত্রের অন্তঃপ্রাণ হচ্ছেন সাংবাদিক। আর এজন্যই রাষ্ট্র ওয়েজ বোর্ড আইন দ্বারা সংবাদকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে। দীর্ঘদিনের সেই অধিকার ও মর্যাদা চিরতরে বিনষ্ট করে সংবাদকর্মীদের আবারো দিনমজুর বানানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। নোয়াবের ওই মামলা এখনো বিচারাধীন।

করোনা মহামারির এই সময়ে দেশে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনা সদস্যদের পাশাপাশি সাংবাদিকরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। এ কাজে সম্পৃক্ত সবার সুরক্ষা থাকলেও সাংবাদিকদের নেই। করোনা মহামারির ভয়াবহ এই দুঃসময়ের মধ্যেও ছাঁটাই, বেতন না দেয়া, কমিয়ে দেয়া ইত্যাদি নানা নিপীড়নের মধ্যেও সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত হননি।

বাংলাদেশে মার্চের ৮ তারিখে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এই খবর সব মহলে জানাজানি হতে আরো ১০-১৫ দিন লাগে। এরই মধ্যে দেশের গণমাধ্যম মালিকদের রাস্তায় বসে যাওয়ার অবস্থা হয়। এ অজুহাতে (দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া) মালিক পক্ষ শুরু করেন ঢালাওভাবে ছাঁটাই। একের পর এক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মালিকদের বারবার অনুরোধ করা হয় তারা যেন ঢালাওভাবে ছাঁটাই বন্ধ করেন। এ দাবিতে ইউনিয়ন নিয়মিত মিটিং, মানববন্ধন করতে শুরু করে। ততদিনে শত শত সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে পথে বসতে বাধ্য করা হয়।

এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। সাংবাদিকদের এই দুঃসময়ে ইউনিয়নের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ান। তিনি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়ালে সাংবাদিকদের মনে সাহসের সঞ্চার হয়। তারই মানবিক সদিচ্ছায় সারাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে বিএফইউজের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট করোনার সময়ে মূলধারার সাংবাদিকদের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়। করোনার সময়ে কর্মরত মূলধারার সাংবাদিকরা প্রত্যেকে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তার এই প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার করে টাকা পাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে উপমহাদেশের কোথাও কোনো সরকার সাংবাদিকদের পাশে এভাবে দাঁড়ায়নি। মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহযোগিতায় দেশের ৬৪টি জেলায় দল-মত নির্বিশেষে হাজার হাজার সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা পেয়ে বর্তমানে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’কে একটি ভরসার জায়গা হিসেবে দেখছেন।

আগে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম এতটা বিস্তৃতি ছিল না। এবারই প্রথম বিএফইউজের সহযোগিতায় সারাদেশের সাংবাদিকরা বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের সাংবাদিকদের বিপদে-আপদে-সংকটে সহায়তার জন্যই প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। এই ট্রাস্ট থেকে প্রতি বছর সাংবাদিকরা চিকিৎসহায়তাসহ বড় ধরনের নানা সংকটে অনুদান পেয়ে থাকেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকতা পেশার উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে একটি সত্যিকার গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বিপরীতে কতিপয় গণমাধ্যম মালিক, সম্পাদক, প্রকাশকসহ এক শ্রেণির সাংবাদিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ‘গণমাধ্যমকে’ কেবল নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করছেন। ফলে রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে সাংবাদিকতা উজ্জ্বলতর ভাবমূর্তি নিয়ে দাঁড়ানোর চেয়ে ক্রমশ কালিমা লিপ্ত হয়ে অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে বর্তমান সময়ের মেধাবী কোনো ছেলেমেয়ে সাংবাদিকতা পেশায় আসবে না। কারণ তারা দেখছে এ পেশায় জীবন ও জীবিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার সময় এসে গেছে। এমতাবস্থায় পেশার মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যক্তিগত স্বার্থ চিন্তার ঊর্ধ্বে পেশাগত সুরক্ষা ও মর্যাদার বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাতে একদিকে যেমন পেশাদারিত্ব বাড়বে তেমনি সমাজ-রাষ্ট্রে সাংবাদিকতার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তা না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওয়েজ বোর্ড না থাকলে গণমাধ্যমের সম্পাদক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী সবাই ‘মজুরে’ পরিণত হবেন। দিনমজুর দিনভর কাজ করেন কাস্তে, কোদাল, হাতুড়ি-শাবল দিয়ে। গণমাধ্যম কর্মীরা কাজ করবেন ‘কলম’ আর ক্যামেরা দিয়ে। দিনমজুরের যেমন ‘মজুরি’ থাকলেও সেই অর্থে মর্যাদা নেই। তেমনি ওয়েজ বোর্ড না থাকলে সাংবাদিকরা ‘মজুরি’ পেলেও মর্যাদা হারাবেন। সাংবাদিকের মর্যাদা না থাকলে এ পেশার অস্তিত্বই থাকে না। শুধু সাংবাদিক ও সম্পাদক নয়, প্রকাশকরাও গুরুত্বহীন হবেন। বর্তমানে ‘গণমাধ্যম শিল্পে’ মোটা অঙ্কের করপোরেট পুঁজির বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়ী। তাদের অনেক ব্যবসা আছে। তারা ব্যবসায়ী হিসেবেই সমাজ-রাষ্ট্রে পরিচিত। ব্যবসার মূল লক্ষ্য ‘মুনাফা’। কোন কোন ব্যবসা সেবাধর্মী হলেও ‘মুনাফার’ কারণে ‘সেবার’ বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ব্যতিক্রম। এখানে ব্যবসা থাকলেও ‘সেবার’ বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। ফলে সমাজ-রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একজন প্রকাশককেও সাংবাদিকের মর্যাদার চোখে দেখে। অন্য শিল্পে বিনিয়োগে তিনি বেশি মুনাফা পেলেও ‘গণমাধ্যম শিল্পে’ বিনিয়োগে তার মর্যাদা বাড়ে।

সুতরাং গণমাধ্যমকে মুনাফার হাতিয়ার কিংবা ঢাল হিসেবে না দেখে ‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে বিবেচনা করলে সব পক্ষই লাভবান হবেন। এখানে লোকসান দিয়ে গণমাধ্যম চালানোর প্রশ্ন অবান্তর। কারণ ‘রাষ্ট্র’ গণমাধ্যম শিল্পে বহুমাত্রিক সহায়তা প্রদান করে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে গণমাধ্যমে যত রকমের পরিবর্তন ও সংযোজন আসছে তার সব কিছুতেই ‘রাষ্ট্র’ সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় হয়তো সহায়তা কম। কিন্তু সহায়তা আছে। সময়ে সময়ে তা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি পর থেকে গণমাধ্যম শিল্পে রাষ্ট্রের সহায়তা কমে যাওয়ার কোনো নজির নেই। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের গল্প দিন দিন বেড়েই চলছে। নবম ওয়েজ বোর্ডের বিরুদ্ধে নোয়াবের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ওই রায়ে বলেছেন, ‘সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্র মালিকরা অস্তিত্বহীন’। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের অন্তর্নিহিত নির্দেশনা ঊর্ধ্বে রেখে সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পেশার সুরক্ষা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখায় সচেষ্ট হতে হবে। এখানে কেউ কাউকে ঠকিয়ে বেশি দিন টিকতে পারবে না। এতে পক্ষগুলো পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যে সংগ্রাম, সংঘাত ও সংঘর্ষ করবে তাতে ‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের’ মর্যাদা ভ‚লুণ্ঠিত হবে। সাংবাদিকরা সমাজ-রাষ্ট্রে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এক সময় অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। যার আলামত দৃশ্যমান। তাই রাজনৈতিক মতাদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও এই মুহূর্তে প্রয়োজন পেশাগত ঐক্য, ঐক্য এবং ঐক্য। এর কোনো বিকল্প নেই।

মোল্লা জালাল : সিনিয়র সাংবাদিক, বিএফইউজে সভাপতি।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App