×

মুক্তচিন্তা

আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৪০ পিএম

আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি

প্রতীকী ছবি

ইদানীং আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে এবং ঘটে যাচ্ছে, তাতে নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে। শুধু খুন কিংবা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা বা অপরাধই থেমে থাকেনি, পাশাপাশি আমাদের চোখকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাচ্ছে নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা- কেউ বাদ পড়ছে না এই শক্ত ছোবল থেকে। নোংরা হাসিতে বুক উঁচিয়ে ঘটানো ওদের এই জঘন্যতম কাজকে বাধা দেয়ার যেন কেউ নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৪৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের ২৫ দিনে ঘটেছে ৫৯টি ধর্ষণের ঘটনা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ৯ জন। আর ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে ১৯২ জন।

জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অথচ শতকরা মাত্র তিন ভাগ ধর্ষণের মামলায় অপরাধীরা শাস্তি পায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা এখন অনেকটাই অকার্যকর। খুব অল্প দিনের ব্যবধানে একের পর এক কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গেছে এবং এখনো ঘটছে। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনাটি আলোচনায় ওঠে এসেছে তীব্রভাবে। আর একের পর এক এভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাওয়ায় বিভিন্ন স্তরের মানুষ আজ এর বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী কণ্ঠে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।

করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব আজ ভীষণভাবে আতঙ্কিত। করোনা রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ডাক্তার-নার্স সবাই জীবন বাজি রেখে তাদের সেবা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নিজেদের সুরক্ষিত রেখে। কিন্তু এই দুঃসময়ে একটা ঘৃণ্যতম সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল এক শ্রেণির প্রতারক। তারা নকল পিপিই এবং মাস্ক তৈরি এবং সরবরাহ করে তা বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক ও বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছিল। আর তার ফলে সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন সেবাদানকারী মহৎ মানুষগুলো, এমনকি সাধারণ মানুষও। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করেও এক শ্রেণির লোক কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছিল এবং আরো স্বপ্ন দেখেছিল।

বর্তমানে করোনাকালেও খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও দুর্নীতির ঘটনা বেড়েই চলেছে সর্বত্র। সব অপরাধের বিচার হয় না- কোনো কোনোটার আবার বিচার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকার, মিডিয়া এবং প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপে বিচার দ্রুতও হচ্ছে। কিন্তু বিচার যতই হোক, অপরাধী যতই শাস্তি পাক- অপরাধ যেন কোনোভাবেই কমছে না। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবারো হতে থাকে। আমার কাছে কেন যেন মনে হয়- কোনো একটি অপরাধের ঘটনা প্রচার পরবর্তী সময়গুলোতে আরো বেশি অপরাধ ঘটানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ঘটে যাওয়া বহু ঘটনাই যেন এ সাক্ষী বহন করছে!

কোথায় আছি আমরা? আর কত নিচে নামব আমরা? যেখানে ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই, যেখানে সর্বত্র দুর্নীতি-অনিয়ম, যেখানে বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান খাবার ও ওষুধে ভেজাল- সেখানে আমরা নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে সত্যিই যেন লজ্জা পাচ্ছি! এ অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন দরকার। এসব দুর্নীতি, অনিয়ম, হত্যা, ধর্ষণ অচিরেই বন্ধ করতে হবে এবং তা এখনই। আশা করব, প্রতিটি ঘটনারই দ্রুত এবং সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে সঠিক বিচার হোক। বন্ধ হোক সমাজ থেকে এসব অপরাধ।

প্রদীপ সাহা : কবি ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App