×

জাতীয়

সম্পত্তি দখল করতেই বাড়িতে প্রবেশে বাধা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪২ এএম

সম্পত্তি দখল করতেই বাড়িতে প্রবেশে বাধা

কে এস নবীর পিতৃহীন দুই নাতি

রাজধানী ধানমন্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত কে এস নবী। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়ির মালিক কে এস নবীর ছোট ছেলে সিরাতুন নবীর দুই পুত্র কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবী কয়েকদিন ধরে ঢুকতে পারছিল না। অবশেষে মধ্যরাতে আদালতের রায়ে বাড়িতে ফেরেন এই দুই শিশু। দুই শিশুর সম্পত্তি দখলের জন্যই তাদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়া হয় বলে মনে করেন পরিবারের সদস্যরা।

পরিবার ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, ধানমন্ডির দাদার বাড়িতে বেড়ে ওঠেন কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবী। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ায় থাকতেন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। তারা বাবার কাছেই থাকতেন। গত ১০ আগস্ট সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় কয়েকদিনের জন্য মায়ের কাছে থাকেন। এরপর বাড়িতে এলে তাদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। বাড়িতে ঢুকতে না দেয়ায় তাদের ফুফু মেহরিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে চাচা কাজী রেহান নবী জানান, তিনি অসুস্থ এখন খুলতে পরবেন না। এরপর কয়েকবার চেষ্টা করেও শিশু দুটি ওই বাসায় প্রবেশ করতে পারেনি। তবে বিষয়টি ধানমন্ডি থানাকে জানানো হলেও পুলিশের কথা আমলে নেননি শিশুদের চাচা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেহান নবী।

জানা যায়, সিরাতুন নবীর যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এফডিআর আছে তা মৃত্যুর আগে দুই ছেলেকে নমিনি এবং তার স্ত্রীকে (ডিভোর্স) লিগ্যাল অভিভাবক করেন। সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর ওই সব অ্যাকাউন্ট থেকে দুই ছেলে যাতে কোনো টাকা তুলতে না পারে তার জন্য ব্যাংকে অভিযোগ করেন রেহান নবী। এমনকি গুলশানের রূপায়ণ গোল্ডেন এইজ থেকে যে ভাড়া আসে তা কে এস নবীর তিন ছেলে মেয়ে পেয়ে আসতেন। কিন্তু সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর ওই ভবন থেকে ভাড়ার কোনো টাকা দুই সন্তান পাননি। ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকার কারণে সম্পত্তি দুই ছেলেকে নমিনি ও সাবেক স্ত্রীকে লিগ্যাল অভিভাবক করে রেখে গেছেন সিরাতুন নবী। প্রতিনিয়ত রেহান নবী ও তার স্ত্রী সিরাতুন নবী এবং দুই ছেলেকে নানাভাবে হুমকি দিতেন। সবশেষ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে দুই সন্তানকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। রেহান নবী দুই শিশুর লিগ্যাল অভিভাবক হতে চান যাতে তাদের সম্পত্তি ভোগ করতে পারেন।

এ ঘটনাটি নিয়ে ৩ অক্টোবর রাত ১২টায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনের বিষয়টি আমলে নিয়ে মাঝরাতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের আদালত। আদালত তার আদেশে ধানমন্ডি থানার ওসিকে ওই দুই শিশুকে তাদের বাসায় (দাদাবাড়ি) রাখতে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন। পরে ধানমন্ডি থানার ওসি শিশু দুটিকে তাদের পৈতৃক বাড়িতে তুলে দিয়ে আসেন।

এরপর ৪ অক্টোবর বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ কে এস নবীর দুই নাতির বক্তব্য শুনতে আগামী ১১ অক্টোবর তাদের আদালতের সামনে (ভার্চুয়ালি) হাজির করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধানমন্ডি থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

দুই শিশুর ফুফু মেরিনা নবী ভোরের কাগজকে বলেন, বাচ্চারা বাবার বাসায় আছে। ভালো আছে। নিয়মিত লেখাপড়া করছে। বাচ্চাদের মাও এই বাসায় রয়েছেন। বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, দয়া করে বাচ্চাদের তাদের মতো করে থাকতে দেন। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোরশেদ ভোরের কাগজকে বলেন, নিজ পিত্রালয়ে ঢুকতে না দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রথমে পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া দুঃখজনক। পুলিশকে জানালে তখন তারা বলেছে উপরের চাপ আছে। শিশুদের সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে মনজিল মোরশেদ বলেন, গত দুই দিতে তাদের পরিবারের সঙ্গে কয়েকবার কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে শিশুরা ভালো আছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। এমনকি পুলিশও তাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে। দুই শিশুকে বাড়িতে ঢুকতে না দেয়ার বিষয়ে কাজী রেহান নবীকে (০১৯১১৩২৫৯৭৯) মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App