×

জাতীয়

ধর্ষিতার বিরুদ্ধে মিছিল করছেন নুরু: ঢাবি ছাত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২০, ০৯:১০ পিএম

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ধর্ষণ মামলার আসামিরা তাদের সস্তা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বাইরে ঘুরছেন বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাতে অনশনের বসার একদিন পর শুক্রবার রাতে ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ করেন তিনি।

ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রী বলেন, আসামিরা তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাচ্ছেন। জনপ্রিয় লোকেরা অপরাধ করতে পারে না, এটা মনে করার কিছু নেই। তারা সস্তা জনপ্রিয়তা ও অন্ধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ধর্ষিতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ধর্ষিতার বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন স্বয়ং ডাকসুর ভিপি, এ রকম ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এর আগে আর ঘটেনি।

নিজের শারিরীক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, অনশনের কারণে শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছি৷ কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙব না। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যেন অন্য কারও সঙ্গে না হয়- সেই জন্যই এই ত্যাগ স্বীকার করছি। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার মতো এখনও সেই পরিস্থিতি হয়নি।

মামলা করার পরও অনশনে বসার বিষয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, আমি ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর মামলা করার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় নি। সাম্প্রতিক অন্যান্য ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে অনেক দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারর করা হয়। তাহলে, আমার মামলার আসামিরা কেন প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াবে। তারা টকশোসহ মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করছে। তারপরও পুলিশ বলছে, তারা পলাতক। এ বিষয়টি আমার বিচার প্রাপ্তিতে বাধাগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি।

আসামিরা প্রভাবশালী এবং পুলিশ প্রভাবিত অভিযোগ করে ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী জানান, আমি লালবাগ কোতয়ালী থানায় মামলা করেছি। তদন্তের স্বার্থে একাধিকবার আমি থানায় যোগাযোগ করেছি। তারা যা বলছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট না। আমার মনে হয়, তারা অদৃশ্য শক্তি দ্বারা প্রভাবিত। পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতা ও অজ্ঞাত কারণে আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাহলে তারা কি আইনের চেয়েও শক্তিশালী? নাকি বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার দুজনের জন্য দু'রকম।

তিনি আরো বলেন, এরপর আমি আদালতে দুইবার আবেদন করেছি। আবেদনে বলা হয়েছে, এটি একটি জামিনঅযোগ্য অপরাধ। এজন্য আদালতের নির্দেশনার কোনো প্রয়োজন নেই। পুলিশ চাইলে আসামিকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু তারপরও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নিজেদের গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে এ ছাত্রী বলেন, আমি মামলা করার পর তারা একে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা বলে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল। তারা একে রাজপথে মোকাবিলা করার ঘোষণা দিয়ে একটি পক্ষ নিয়ে নেয়ার পর আবার নিজেরা তদন্ত কমিটি গঠন করা একটা ভন্ডামি। যে মামলাকে মিথ্যা বলে একটি অবস্থান নিয়ে নেয়, সে কীভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান দাবি করে। তাদের তদন্তের ফলাফল কী আসবে তা সবাইই অনুমান করতে পারে।

বর্তমান নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বদলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে ভুক্তভোগী এ ছাত্রী বলেন, বর্তমানে ধর্ষণ একটা মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমি এর ভুক্তভোগী। আমি চাই এদেশের মাটিতে ধর্ষিতার আর্তনাদ আর না শোনা যাক। ধর্ষণকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।

তার এ অনশন কর্মসূচির পেছনে কোন রাজনৈতিক ইন্ধন বা প্ররোচনা রয়েছে, নুরদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা মুখোশ ধরে থাকে, মিনিটে মিনিটে নিজেদের কথা বদলায়, তারাই এ রকম কথা বলতে পারে। তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। আর আমি মামলা করেছি তাদের কাছে বিচার চাওয়ার পর। মামুন নিজেই আমাকে আইনের সাহায্য নেয়ার কথা বলেছে। সুতরাং কেউ যদি আমায় প্ররোচনা দিয়ে থাকে, তবে তা হবে হাসান আল মামুন, তা হবে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ।

আসামিদের গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আসামিরা গ্রেপ্তার না হচ্ছে ততক্ষণ এখানে অবস্থান করব এবং প্রয়োজনে আমরণ অনশন করব। আসামিদের আইনের আওতায় আনার পরই আমার এ অনশন আমি সমাপ্ত করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App