×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে খেলার মাঠগুলো নিয়ে দখল বাণিজ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪৭ এএম

চট্টগ্রামে খেলার মাঠগুলো নিয়ে দখল বাণিজ্য

ছবি- ইন্টারনেট

অভিযোগ ক্রীড়া নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই

শুকনো মৌসুমে নানা রকমের মেলা আয়োজন আর বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন হয়ে খেলার অনুপযোগী হয়ে থাকার কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর মাঠগুলোতে এখন আর খেলা হয় না বললেই চলে। খেলার বদলে হচ্ছে মেলা আর নানা রকম বাণিজ্যিক কার্যক্রম। তবে মাঠগুলোর এ দুর্দশার জন্য ক্রীড়াঙ্গনের কয়েকজন অর্থলোভী নেতাই দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নেতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের প্রতিবাদী খেলোয়াড় ও ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে। এমনকি খেলার মাঠ দখল করে কথিত সুইমিং পুল ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দোকান বরাদ্দ দেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক ছাত্র-তরুণ পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন। মামলাও চলছে তাদের বিরুদ্ধে। মাত্র মাসখানেক আগেও চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়াম চত্বরে খেলোয়াড়-ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন শিক্ষার্থী মাঠ ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

ক্রীড়া বিচ্ছিন্নতার প্রভাবে প্রজন্ম সমাজ মাদক, সন্ত্রাসসহ নানা অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ার শঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় ক্রীড়াঙ্গনে চট্টগ্রামের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে হলে খেলার মাঠ নিয়ে বাণিজ্য ও টাকার খেলা বন্ধ করে দখলমুক্ত-মেলামুক্ত মাঠ একমাত্র উপায় বলে মনে করছে ক্রীড়া সচেতন মহল। নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে বছরের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসবের পর যে সময়টুকু মাঠগুলো ফাঁকা থাকে পেরেক, কাঠ, বাঁশসহ মেলার উচ্ছিষ্ট রয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে খেলাধুলা করার মতো অবস্থা থাকে না। রেলওয়ের মালিকানাধীন মাঠটিতে এখনো পড়ে আছে স্টলের কাঠ-পাথর আর পেরেক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে আগে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগ, বয়সভিত্তিক এবং বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হত। সারা দিনই বিভিন্ন বয়সি ক্রিকেটার-ফুটবলারের পদচারণায় এই মাঠ মুখর থাকত। তবে ডিসেম্বরের মাসব্যাপী বিজয় মেলা দিয়ে মাঠটির দখল কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর বৃক্ষমেলা, গাড়িমেলাসহ নানা বাণিজ্যিক আয়োজনে পুরো মাঠটি বর্ষার আগ পর্যন্ত দখলে থাকে। তার ওপর বর্ষার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে বিগত প্রায় ৩ মাস ধরে মাঠটি বেহাল অবস্থা।

মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের কোচ ক্রীড়া সাংবাদিক দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু ভোরের কাগজকে বলেন, মেলার কারণে মাসের পর মাস আউটার স্টেডিয়াম, পলোগ্রাউন্ডে কোনো রকম অনুশীলন, প্রশিক্ষণ বা খেলা হতে পারছে না। জাম্বুরী মাঠ তো এখন আর নেই। এই ৩টি মাঠে খেলেই জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট, ফুটবলে অনেক খেলোয়াড় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বর্তমানে জাতীয় পর্যায় তো নয়ই চট্টগ্রামের লীগ, টুর্নামেন্টেই নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, খুলনার খেলোয়াড়রা খেলছেন। আমাদের উল্লেখযোগ্য কোনো খেলোয়াড় নেই। থাকবে কিভাবে? অনুশীলন, প্রশিক্ষণের অভাবেই খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। সবাই টাকার পেছনে ছুটছে। মেলা যেখানেই হোক মানুষ যাবেই। চট্টগ্রাম ক্রীড়াঙ্গনকে বাঁচাতে হলে মাঠগুলোকে মেলামুক্ত করতেই হবে। নয়তো এই সংকট থেকে উত্তরণ দুরাশা মাত্র।

এদিকে প্যারেড মাঠ নামে পরিচিত চট্টগ্রাম কলেজের মাঠটিরও বেহাল দশা। করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর পর চকবাজারের কাঁচাবাজারকে এই মাঠে স্থানান্তর করেছিল পুলিশ। পরবর্তী সময়ে কাঁচাবাজারটি পূর্বের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলেও মাঠে এখনো পড়ে আছে অস্থায়ী স্থাপনা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, মাঠটির অবস্থা ভালো আছে। বাজারের কিছু অস্থায়ী স্থাপনা ছিল। তা সরিয়ে নিয়ে মাঠটি সংস্কারের কাজ চলছে। বৃষ্টির জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।

লালদীঘি ময়দান নামে মাঠ হলেও সারা বছর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ। বাকি সময়ে প্রতি বছর সেখানে বিজয় উৎসব, বইমেলা, জব্বারের বলীখেলা, গাড়ি মেলাসহ নানান মেলা হয়ে থাকে। ফলে মুসলিম হাইস্কুলের সম্পত্তি হলেও মাঠটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারে না বললেই চলে। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ের (বাওয়া) মাঠটিও বেশির ভাগ সময় মেলার জন্য বরাদ্দ থাকে। অন্যদিকে করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকারি সিটি উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুলের মাঠ, চট্টগ্রাম সরকারি মহসিন কলেজের মাঠে দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে স্থানীয় ক্রীড়ামোদীদের পদচারণায় মাঠগুলো আবার মেতে উঠেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহসভাপতি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আউটার স্টেডিয়ামের মাঠটি সংস্কারের ব্যবস্থা করে খেলার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তবে নগরীর অনেক মাঠ আস্তে আস্তে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এগুলো রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া জরুরি। ক্রীড়া মনস্ক প্রজন্ম গড়ে তুলতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হতে পারে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন নগরীর বিভিন্ন খেলার মাঠ, পার্ক ও খোলা জায়গা দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি তার অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে কতটুকু করতে পারবেন সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে খোরশেদ আলম সুজন ভোরের কাগজকে বললেন, আমার সীমিত সময়ের মধ্যে যতটুকু সম্ভব আমি এসব অবৈধ দখলবাজ, অনৈতিক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত কাজ করে যাব। বাকিটুকু চট্টগ্রামের নাগরিকদের যিনি দায়িত্ব নেবেন তিনি করবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে চসিকের নির্বাচন হলে চসিক প্রশাসক সুজন স্বাভাবিকভাবেই তার দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন নতুন নির্বাচিত মেয়রের কাছে। সে ক্ষেত্রে নতুন মেয়র কি এসব দখল বাণিজ্য দূর করে সত্যিকার অর্থে খেলার মাঠ, পার্ক ও খোলা জায়গা নগরবাসীর জন্য রক্ষা করতে পারবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App