মঠবাড়িয়ায় ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আগের সংবাদ

তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপিতে বিদ্রোহের সুর

পরের সংবাদ

ফল মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২০ , ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২০ , ১:৩৩ অপরাহ্ণ
  • এইচএসসি পরীক্ষা হবে না

  • ডিসেম্বর ফল ঘোষণা

  • অস্বস্তি থেকে মুক্তি

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে। গতকাল বুধবার এ ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তার এ ঘোষণার পর অস্বস্তি এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছেন পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। তবে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা কাজ করছে। কারণ, শিক্ষামন্ত্রী আগের দুটো পরীক্ষার ভিত্তিতে এইচএসসিতে মূল্যায়নের কথা বললেও মূল্যায়ন পদ্ধতি খোলাসা করেননি। এ নিয়ে দিনভর নানা আলোচনা হয়। বিশেষ করে এসএসসির পর যেসব শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন তাদের ফলাফল কীভাবে মূল্যায়ন হবে তা স্পষ্ট নয়।

মহামারি পরিস্থিতিতে পাবলিক পরীক্ষা শুধু বাংলাদেশেই বাতিল হলো না। ২১২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করেছে ফ্রান্স। একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ইতালি, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ। তাদের কেউ গত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে, কেউ শ্রেণি কার্যক্রমের ভিত্তিতে এ বছরের মূল্যায়ন করেছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে (হায়ার সেকেন্ডারি) কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষার পর করোনার হানায় প্রথমে পরীক্ষা স্থগিত করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এরপর আগের ফলাফলের ভিত্তিতে গড় মূল্যায়ন করে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা বিভাগ। এই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘গড়বড়’ হয়েছিল। এর রেশ ধরে বাংলাদেশে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে না কোন কৌশলে গড় মূল্যায়ন করা হবে।

প্রসঙ্গত, এবারের এইচএসসি ও সমমানে যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা ২০১৬ সালে জেএসসি এবং ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে জেএসসিতে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন পাস করেছিলেন। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮ জন। ওই বছরের জেএসসি উত্তীর্ণরাই ২০১৮ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। এসএসসি উত্তীর্ণরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় এবং এদের মধ্যে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ভয়ে তাদের পরীক্ষাই হবে না। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে।

ভিন্ন পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নের ফলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সমস্যার মুখোমুখি হবেন বলে আশঙ্কা করেছেন কোনো কোনো শিক্ষাবিদ। তবে, কেউ কেউ আবার মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সেক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ তাদের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, যদি পরীক্ষা না হয় তাহলে ফলাফল মূল্যায়নে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটার জন্য যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে যাবে তারা হয়ত সমস্যায় পড়তে পারেন। এজন্য বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণে এখনই করণীয় ঠিক করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের চেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে অনেক বেশি গুরুত্ব থাকে শিক্ষার্থীদের কাছে। কেননা, তারা একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান। এবার সে সুযোগটা থাকছে না। এবার তার মূল্যায়ন হবে তার আগের ফলাফলে ওপর ভিত্তি করে।

দীপু মনি জানান, আমাদের দেশে যেভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেভাবে হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পরীক্ষা আয়োজনের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তাই ভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। তিনি বলেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতি যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গড় নম্বরে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে তাদের সমস্যা হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে তা ডিসেম্বরের মধ্যে জানানো হবে। আর এ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট অভিভাবক, শিক্ষা বিশেষজ্ঞসহ সবার মতামত নিয়েই নেয়া হয়েছে। এমন মূল্যায়নের ফলাফল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ওপর চাকরির বাজারে তেমন প্রভাব পড়ে না।

তিনি বলেন, এসএসসি পাসের পর যারা বিভাগ পরিবর্তন করে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল তাদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে সে বিষয়টি নির্ধারণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক হিসেবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিও থাকবেন এই কমিটিতে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির বিষয়টিও নির্ভর করে, তাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন করে প্রতিনিধিও থাকবেন পরামর্শক কমিটিতে। এই কমিটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেবে।

তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরে মূল্যায়ন ফল ঘোষণা করা হবে, যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। আমরা আশা করছি সমন্বিত পদ্ধতিতেই আমরা সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারব। সেই পরীক্ষাগুলো কীভাবে হবে, গুচ্ছ পদ্ধতি কেমন হবে, তখনকার কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কারণ এখনো ৩ মাস বাকি আছে। ৩ মাস পরে সেই মূল্যায়নের জন্য কী পরিস্থিতি হয় তার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

এমআই

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়