×

মুক্তচিন্তা

নারীকে মানুষ ভাবুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৪০ পিএম

নারীকে মানুষ ভাবুন

প্রতীকী ছবি

আমাদের দেশে করোনা যেমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, ঠিক তেমনই ধর্ষণও ভয়াবহতার রূপ ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলছে এবং অতীতেও এমন ঘৃণিত কাজ ঘটেছে। সিলেট এমসি কলেজে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। বগুড়ার শেরপুরে সরকারি ভাতার কার্ড করে দেয়ার অজুহাত দেখিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। চকরিয়ায় কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ডাকাতি করতে এসে মা-মেয়েকে গণধর্ষণ করেন দুর্বৃত্তরা। কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে এক কোচিং সেন্টারে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে। এসব কিছু গণমাধ্যমের চোখে পড়া, কিন্তু এর অন্তরালে আরো কত নারীর জীবন ধ্বংস হয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এই নৃশংসতার এখানেই কিন্তু শেষ নয়। নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলায় রাতে ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায়। তার সঙ্গে পাশবিক আচরণ করে। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে। যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। জাতি আজ লজ্জিত, জাতি আজ বিবস্ত্র। এই নৃশংসতার শেষ কোথায়? কোথায় নারীর নিরাপত্তা? কোথায় এর ন্যায্য বিচার? যা আজ এ জাতির কাছে প্রশ্ন থেকে যায়। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকার স্বীকৃতি দিয়েছেন। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার হিসেবে রয়েছে নারী-পুরুষের সমান অধিকার। ২৭নং অনুচ্ছেদে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের (২৮) ২ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরের নারী ও পুরুষের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কতটুকু এমন বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রশ্ন থেকে যায়। নারীরা শুধু যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন তা কিন্তু নয়। বরং আমাদের দেশের নারীরা আজো যৌতুকের বলি। যৌতুক নারী জীবনের অভিশাপ। এক শ্রেণির চরিত্রহীন পুরুষের হাতে তারা আজ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত। তাদের অস্তিত্ব, সতিত্ব প্রতিমুহূর্তে হুমকির সম্মুখীন। সমাজ তাদের রক্ষা করতে পারছে না। রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে অপারগ হচ্ছে। তবুও আমরা স্বাধীন দেশের জনগণ। সাম্প্রতিক যৌতুকের বলি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার ইয়াসমিন আক্তার নামের এক গৃহবধূ। নারী শুধু আজ অবহেলার পাত্র, নির্যাতিত, ধর্ষিতা। নারী আজো এসিড নিক্ষেপের দ্বারা নির্যাতিত। এসিড নিক্ষেপের দ্বারা অনেক নারী নির্যাতিত হচ্ছে।

সম্প্রতি নড়াইলে গৃহবধূ তানিয়ার ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে সে মর্মান্তিক আহত হয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯ মাসে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় ৬৭ জনকে। আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ১২ নারীর।

এছাড়াও এই ৯ মাসে এসিড নিক্ষেপের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। আমাদের দেশে নারীদের আজ দুরবস্থা। কবে নারী পাবে পূর্ণ নিরাপত্তা? কবে এদেশে ফিরে আসবে শান্তি-শৃঙ্খলা? জাতি আজ লজ্জিত এমন ঘৃণিত কাজ সংঘটিত হওয়ার ফলে। নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ নৈতিকতার অবক্ষয়, হীন মানসিকতার পরিচয়, সমাজব্যবস্থার অসচেতনতা, রাষ্ট্র নারী নিরাপত্তা প্রদানে অপারগতা, পুরুষের মাদকাসক্ত ও অশিক্ষা প্রভৃতি। নারী নির্যাতন নিঃসন্দেহে একটি জাতির জীবনে কলঙ্ক। সুতরাং উন্নয়নের অগ্রযাত্রার প্রদীপের আলোর নিচে রয়েছে গভীর অন্ধকার। সেখানে নারীরা এখনো আলোর পথ খুঁজছেন। আর সেই পথকে কণ্টকমুক্ত করবে রাষ্ট্র। কারণ দায়িত্বটা রাষ্ট্রের। নারীদের মায়ের, বোনের স্নেহের মর্যাদা যেমন দিতে হবে ঠিক তেমনি দিতে হবে তাদের প্রাপ্য অধিকারসমূহ।

সরকার সর্বক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে সমাজব্যবস্থা সচেতন থাকতে হবে এবং হীন মন-মানসিকতা দূর করে উদার মন-মানসিকতার অধিকারী হতে হবে প্রত্যেক নাগরিককে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রত্যেক নাগরিককে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে যুবসমাজকে। সরকার ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সরকারি দলের পরিচয় ক্ষমতা বা অন্য কোনো প্রভাবে বিচার যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং সবার মধ্যে ধর্মীয় নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। তাহলে সম্ভব এমন নৃশংসতা রুখে দেয়া। তাই আসুন, নারীদের সম্মান করি, আলোকিত দেশ গড়ি।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App