×

মুক্তচিন্তা

ডাক সেবায় আধুনিকায়ন কখন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৫:০৪ পিএম

ডাক সেবায় আধুনিকায়ন কখন

ফাইল ছবি

ডাক সেবা প্রাচীন হলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের মানুষ দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তনেও সঙ্কোচবোধ করেনি। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইলেকট্রনিক মেইলের পরিস্ফুটনে ডাক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা দিয়েছে ভীষণ খরা। অথচ ১৫ বছর আগেও দেশে ২৪ কোটি চিঠি বিনিময় হয়েছিল; ৫ বছর আগে চিঠি বিনিময়ের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৪ কোটি। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে চিঠি ব্যবহার হ্রাস পায় প্রায় পাঁচগুণ; আর ডাক যোগাযোগের প্রতি মানুষের অনাগ্রহতার অনেক যৌক্তিক কারণও রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের পরও গ্রাহকের কাছে চিঠি পৌঁছাতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় নেয়া, অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রাহকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও আধুনিক কৌশল অবলম্বনে অপারগতা, প্রেরক কিংবা প্রাপক প্রেরিত মালামাল আত্মসাৎ, জনবলের অভাব, ডাকঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংকট, আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবা প্রদানে ঘাটতি, নিয়মহীন পরিবহন ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতা, সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্বার্থসিদ্ধি এবং সীমাহীন দুর্নীতি ইত্যাদি বাংলাদেশের ডাক বিভাগের অচলাবস্থার মূল কারণ।

সম্প্রতি একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে ডাক বিভাগের ৫৪১ কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যয়কৃত অর্থে কেনা সরঞ্জামের অস্তিত্বহীনতা এবং ‘ডাকের ডিজির’ ১৬০ কোটি টাকার হদিস না পাওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয়, কাগজে-কলমে ডাক বিভাগের বরাদ্দকৃত ই-সেন্টার থাকলেও বাস্তবে তার কোনো চিহ্ন নেই। এখনো এদেশের ডাক পরিবহন ব্যবস্থা রেলের ওপর নির্ভরশীল। ফলে চিঠি পৌঁছাতে ৫ থেকে ৭ দিন লেগে যায়। যেখানে প্রতিদ্ব›দ্বীমূলক বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো দ্রুত এবং পরিপূর্ণ জবাবদিহিতার সঙ্গে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সরকার শত শত কোটি টাকা লোকসান না গুনে কোষাগার ভর্তি মুনাফা অর্জন করতে পারত; পাশাপাশি জনসাধারণ পেত স্বল্পমূল্যে তথ্য ও বিবিধ আদান-প্রদানের সুবিধা।

৯ অক্টোবর প্রতি বছর ‘বিশ্ব ডাক দিবস’ হিসেবে পালন করা হলেও এদেশের ডাক খাতের বার্ধক্যতা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। আজ যে ডাক দিবস পালন করা হয় এটি শতাধিক বছরেরও পুরনো ইতিহাস। ১৮৭৪ সালে বিশ্ব ডাক সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণ করে বিশ্বজুড়ে ডাক দিবস পালন করা হয়। প্রথমদিকে সীমিত পরিসরে দেশীয় শাসকদের গÐিতে আবদ্ধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে জমিদার ও বণিক সম্প্রদায় এটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কয়েক ধাপ সোচ্চার হয়। এরপর ধীরে ধীরে অজপাড়াগাঁয়েও ডাকঘরের স্থাপনা গড়ে ওঠে। মূলত ডাক সেবার ওপর গুরুত্বারোপ করেই সারা বিশ্বে ডাক দিবস পালন করা হয়।

বর্তমানে ডাক অফিসগুলোতে আবেগমাখা চিঠির খোঁজে আর কেউ আসে না, যারা আসে তাদের বেশিরভাগই নোটিস, পার্সেল, নথিপত্র ইত্যাদি নিয়ে চলে যায়। এখন আর কেউ ডাকঘরের সামনে কিংবা ডাকপিয়নের হাঁকের অপেক্ষায় প্রহর গুনে না। আগের মতো আর চিঠি লেখা, ডাকঘর, ডাকপিয়ন কিংবা পোস্টবক্সকেন্দ্রিক সিনেমা, নাটকও বানানো হয় না। কম্পিউটার আর মোবাইলের কিবোর্ডের স্পর্শে মানুষ কলম ধরতে ভুলে গেছে, সাহিত্য ভুলে গেছে। একেকটা চিঠি ছিল বাংলা চর্চার মাধ্যম, সাহিত্যের আধার। প্রত্যেকটি চিঠির বহন করত একেকটি মৌলিক গল্প। এখনকার সাহিত্যের মতো কাল্পনিক নয়, সব গল্পই ছিল বাস্তব। আর তাই তো বুদ্ধদেব গুহ চিঠি দিয়েই ‘সবিনয় নিবেদন’ বইটি লিখে ফেলেছেন। মানুষের আবেগানুভ‚তি ও নিবেদনের স্মারক বহনকারী এই চিঠির স্মৃতিগুলো জমা থাক প্রত্যেকের হৃদ-প্রকোষ্ঠে।

শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App