×

মুক্তচিন্তা

অধিকারহীন মানুষ ও বাংলাদেশের সমস্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৪:৫৬ পিএম

অধিকারহীন মানুষ ও বাংলাদেশের সমস্যা

ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমার সরকার আগেও যেমন তাদের ওপর নির্যাতন করত, এখনো মিয়ানমার তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করতে একেবারে কিছুই করেনি। বিপরীতে গত কয়েক বছরে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে বুলডোজেড করেছে এবং নতুন স্থাপনা এবং অবকাঠামো স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশঙ্কা করছেন যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার মিয়ানমার সরকার এটি একটি কৌশল। তাদের শিকড় না থাকলে তারা কোথায় ফিরে আসবে? আলজাজিরার সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জাতিসংঘ জানিয়েছে মিয়ানমার তার সরকারি মানচিত্র থেকে একসময় রোহিঙ্গা গ্রাম কান কায়ার নামটি মুছে ফেলেছে।

কান মিয়ানমারে আরো কয়েক ডজনেরও বেশি গ্রাম যাদের নাম পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা হয়েছে তার মধ্যে একটি। এবং ২০১৩ সাল থেকে একসময় রোহিঙ্গাদের বসবাসরত ৪০০-এরও বেশি গ্রাম মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যে নতুন স্থাপনা তৈরি করছে তা শরণার্থীদের জন্য আরো সমস্যার কারণ এবং গ্রামগুলোর এই পুনর্গঠন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের জমিতে ফিরে যাওয়া আইনত জটিল করে তুলছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেলের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক পরামর্শ দিয়েছেন যে, গ্রামগুলোর আইনানুগ অবস্থা পরিবর্তন শরণার্থীদের জন্য ‘জটিলতার একটি অতিরিক্ত স্তর’ যুক্ত করবে। তবে মিয়ানমার মনে হচ্ছে ন্যায়বিচারের সব ধারণা হারিয়ে ফেলেছে। অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ বর্বরতা প্রকাশের জাতির বিরুদ্ধে সব প্রমাণিত অভিযোগ এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দেশটির দৃশ্যমান অভাব সত্তে¡ও এর প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী কায়া টিন্ট সুই নির্লজ্জভাবে এই অভিযোগ তুলেছিলেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সম্প্রতি জানিয়েছে যে, কক্সবাজারে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ।যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ‘অসমর্থিত দাবি ও অযৌক্তিক অভিযোগ’ নষ্ট করেছে এবং রাখাইনকে জাতিসংঘের মতো পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে, যদি সত্যই এটি তার জনগণকে ফিরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা করে।

তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার মিয়ানমারের অলস মনোভাবের প্রেক্ষাপটে ‘আমরা তাদের [মিয়ানমার সরকারকে] এই আলোচনা আবার শুরু করার জন্য নিয়মিত লিখি। কখনো কখনো তারা জবাব দেয়, কখনো কখনো তারা উত্তর দেয় না। তাদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে’, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমার শাখার মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন আরব, নিউজের কাছে প্রকাশ করেছিলেন মিয়ানমারকে তার গণহত্যা বন্ধে চাপ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপর প্রচেষ্টার অভাব। মিয়ানমারের ক্রিয়াকলাপ এবং এর লোকদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে, ভবিষ্যৎটি রোহিঙ্গাদের কাছে পরিষ্কার নয়। কি তাদের শেষ গতি? তাদের নিজেদের আজ কোনো ভ‚মি নেই, নেই দেশমাতৃকার অধিকার।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জড়তা অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও উন্নয়নের সম্পর্কগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। গত বছর অক্টোবরে প্রকাশিত ব্যাংকক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৮টি দেশ থেকে মোট ১০৭টি উদ্যোগ এবং চারটি স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১.৮৪ বিলিয়ন ডলারে লাভবান হয়েছে।

মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ভ‚-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চক্রের ক্রসক্রেন্টে আটকে রয়েছে। এ থেকে যেন নেই মুক্তির সম্ভাবনা। অচলাবস্থা খুব শিগগিরই সমাধানের সম্ভাবনা নেই। নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের স্বার্থে এই লড়াইয়ে লড়াই করতে বাংলাদেশ বেশ কিছুটা নিজের থেকেই বাকি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাগ্য আগের মতোই অনিশ্চিত রয়েছে। কিন্তু এর একটা সমাধান অতি দ্রুত দরকার। তাহলে একদিকে যেমন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আর অধিকারহীন ভ‚মিহীন হয়ে থাকতে হবে না, পাশাপাশি বাংলাদেশের কাঁধ থেকেও এই বাড়তি বোঝাটা নামবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা ছাড়া এ সমস্যা সমাধান কিছুতেই সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান হোক এটাই সবার কাম্য।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App