×

সারাদেশ

সিএনজিচালক থেকে যেভাবে গ্যাং লিডার দেলোয়ার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৮ এএম

সিএনজিচালক থেকে যেভাবে গ্যাং লিডার দেলোয়ার

গ্যাং লিডার দেলোয়ার

জহিরের হাত ধরে যুবলীগে যোগদান

অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠা দেলোয়ার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব এখলাশপুর গ্রামের ছায়েদল হকের ৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। কয়েক বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের অভাব ঘুচাতে বড় দুই ভাইয়ের পাশাপাশি দেলোয়ারও সিএনজি অটোরিকশা চালনায় যুক্ত হয়।

সিএনজি চালিয়ে কোনোরকম সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া দেলোয়ার ২০১৩ সালের দিকে এখলাশপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরের হাত ধরে যোগ দেয় যুবলীগের রাজনীতিতে। এরপর জহিরের মাধ্যমেই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি আলমগীর কবির ভূঁইয়া আলোর আস্থাভাজন কর্মী হয়ে উঠে দেলোয়ার।

২০১৪ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় উঠতি বয়সের যুবকদের সংগঠিত করে কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে সে। তার গ্যাংয়ের প্রধান সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখে বাদল ও কালাম। দেলোয়ার ওই কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এলাকায় গড়ে তোলে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিসহ এক অপরাধ সাম্রাজ্য।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দিনের শুরু থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা এখলাশপুরের অলিগলি থেকে শুরু থেকে বেগমগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়সহ ত্রাসের রাজত্ব চালায়। এই কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে মোহাম্মদ আলী ও রবিন নামে দুই যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এলাকাবাসী জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর এখলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড খালপাড় এলাকার নুর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে স্বামীকে বেঁধে রেখে তার চোখের সামনেই স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য বাদল, মো. রহিম, মো. আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। ধর্ষণে ব্যর্থ হলে তারা ওই গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিবস্ত্র করে নির্যাতন করতে থাকে এবং

ভিডিও ধারণ করে নির্যাতিতার স্বামীর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার চেষ্টা করলে কিশোর গ্যাং প্রধান দেলোয়ার এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের অস্ত্রের মহড়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ওই দিন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্থানীয়দের আরো আতঙ্কিত করে তোলায় অসহায় গৃহবধূর পরিবার আর প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার সাহস করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। গৃহবধূ নির্যাতনের বর্বরোচিত ঘটনায় দেলোয়ার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে এই ১ মাস আমরা কাউকে কিছু বলিনি। কারণ তারা সরকারি দলের নেতা। কেউ আওয়ামী লীগের, কেউ যুবলীগের। তাদের রয়েছে ইয়াবা বিক্রির নগদ টাকা, অস্ত্র ও ক্যাডার বাহিনী। তারা নেতা-এমপিদের সঙ্গে ছবি তোলে। আমরা তাদের কী করব। স্থানীয় ওয়ার্ডের সোহাগ মেম্বারও এ বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। এ বাহিনী গত ৬ মাসে এলাকায় ৭-৮ জন দরিদ্র নারীকে ধর্ষণ এবং নির্যাতন করলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

স্থানীয়রা আরো জানান, এ কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তা আমলে না নেয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেলোয়ারের এ বাহিনীতে রয়েছে ৫০-৬০ জনের সক্রিয় সদস্য। তারা নিজেদের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা বলে পরিচয় দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন টাঙালেও শাসক দল কখনো আপত্তি করেনি। নেতা-এমপিদের সঙ্গে ছবি দিয়ে ব্যানার থাকায় পুলিশও তাদের সমীহ করে চলত। যে দেলোয়ার একসময় সিএনজি চালিয়ে ভাত খেত, সে এখন অনেক টাকার মালিক। তার রয়েছে মৎস্য খামারসহ একাধিক ব্যবসা।

এদিকে জেলার অভিজ্ঞ মহল মনে করে, চন্দ্রগঞ্জে পুলিশের ওপর ও এখলাশপুরে ডিবি পুলিশের ওপর মাদক কারবারিরা হামলা করলেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এসব বাহিনীর সাহস বেড়ে গেছে।

দেলোয়ারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জানতে কৃষক লীগ সভাপতি আলমগীর কবির ভূঁইয়া আলোর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো. হারুন উর রশীদ জানান, দেলোয়ারের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা রয়েছে কিনা তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। রেকর্ড দেখে বলতে হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো অপরাধে ইতোপূর্বে কোনো অভিযোগ কেউই করেননি। করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নিত।

এদিকে দেলোয়ারসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App