×

জাতীয়

সড়কে আবারো নৈরাজ্য!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৯:০৬ এএম

নিয়মনীতি ও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই।

সড়কে আবারো নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। রাজধানীর কোনো সড়কেই শৃঙ্খলা নেই। গণপরিবহন আগের ভাড়ায় চললেও স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উপেক্ষিত। উল্টোপথেও যানবাহন চলছে। মোটরসাইকেল চালকরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দুজনের জায়গায় তিনজন চলছে, অনেকেই এখন হেলমেট ব্যবহার করছে না, ট্রাফিক সিগন্যালও মানছে না। পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিবহন মালিকদের আসকারা পেয়ে গণপরিবহনের চালক ও হেলপাররা এখন আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বেপরোয়া গতির কারণে সড়কে আবারো মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে চলাচলরত কোনো রুটের বাস-মিনিবাসেই সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং স্বাস্থ্যবিধি দেখার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।

রাজধানীতে এখন জীবনযাত্রা একেবারেই স্বাভাবিক। সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক। ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামটর, মালিবাগ, কাকরাইল, শাহবাগ, সাইন্সল্যাবরেটরি, আসাদগেট, পল্টন, জিপিও ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনের ভিড় সামলাতে ট্রাফিক পুলিশকেও বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি গণপরিবহন সড়ক আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলাচল করছে। সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। বাসে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও বেশিরভাগ যাত্রীই মাস্ক ব্যবহার করছে না। চালক-হেলপাররাও মাস্ক ব্যবহার করছে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা সবাই ভুলে গেছে। গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন না করতে নির্দেশনা থাকলেও যাত্রী ও গণপরিবহনের চালক- হেলপারের সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ নেই। সব বাসেই আসন পূর্ণ হওয়ার পর দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। রাজধানীর কোনো সড়কেই বিআরটিএর মনিটরিং টিমের অভিযান দেখা যায়নি।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক আইন সচল রাখতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের কোনো আগ্রহ নেই। বাসগুলো স্ট্যান্ড ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গেট বন্ধ রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখন রাজধানীর কোনো সড়কেই বাসের গেট আর বন্ধ থাকে না। চালকরা তাদের যেখানে ইচ্ছে সেখান থেকেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। রাজধানীর রাসেল স্কোয়ারের ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে দিয়ে চলাচলরত সব গণপরিবহনেই পুলিশের সামনে যাত্রীদের আগের মতোই ওঠানামা করাতে দেখা গেছে। রাজধানীজুড়ে এখনো চলছে অনিয়ম ও নৈরাজ্য। সব সরকারি ও বেসরকারি বাসের ভেতরে সামনের দিকে চালকের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা ছিল। রাজধানীর শতভাগ গণপরিবহনে এসবের কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। সড়কে বেপরোয়া গতিতেই যানবাহন চলছে।

সড়ক আইন বাস্তবায়নে পুলিশ, বিআরটিএর উদাসীনতায় পরিবহন চালকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উল্টোপথেও এখন যানবাহন চলাচলের ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায়। সড়ক আইন পাস হওয়ার পর মোটরসাইকেল চালকরা কিছুটা শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরলেও এখন তারা আবার বেপরোয়া। অনেকেই এখন আর হেলমেট পরছে না, এক মোটরসাইকেলে তিনজনের একত্রে চলাচলের দৃশ্য চোখে পড়ছে। বাসস্ট্যান্ডে নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামানোর সাইনবোর্ড লেখা থাকলেও চালকরা তাদের ইচ্ছেমতো স্থানে বাস থামায়।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, গণপরিবহনে আবার নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। পরিবহনের লোকজন সড়কের আইন ও স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানছে না। সড়কে আবার স্বেচ্ছাচারিতা শুরু হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থেকে মৌচাক হয়ে ডেমরা রুটের স্বাধীন পরিবহন, মিডওয়ে পরিবহন, রজনীগন্ধা পরিবহনের বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এখন নিত্যদিনের ব্যাপার। যাত্রীদের অভিযোগ পুলিশও নজরে নিচ্ছে না।

যাত্রী দাঁড়িয়ে নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবহনকর্মী হেলাল জানান, করোনার সময় সরকার কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এখন তো আর কোনো করোনা নাই, তাই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া যাবে। আমরা যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলি, তারা কথা শোনে না।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী জানান, দেশের ৮৫ শতাংশ যাত্রী গণপরিবহনে চলাচল করে। এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানো খুবই জরুরি। এজন্য পুলিশ ও বিআরটিএকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সড়কে যানবাহনের নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভ‚মিকা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সব সময়ই তৎপর রয়েছে। নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিশেষ অভিযানও চালানো হয়। প্রতিদিনই সড়কে ট্রাফিক পুলিশ আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তবে জনগণকেও সড়কে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। জনগণ সচেতন হলে পরিবহনের লোকজন স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App