×

সম্পাদকীয়

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হেলাফেলা আর নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৪ পিএম

মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই নাজুক। দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য উৎপাদন হার প্রতিদিন বেডপ্রতি ০.৯৪ কেজি। এর মধ্যে কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় আরো বেড়ে গেছে। বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন ২০৬ দশমিক ২১ টন করোনা বর্জ্য হচ্ছে। মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড বা গাউনসহ যেসব সুরক্ষা সামগ্রী সাধারণ মানুষ ব্যবহার করছেন, তার একটা বড় অংশ রাস্তা-ঘাটে উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হচ্ছে, ব্যবহৃত প্লাস্টিক জাতীয় সুরক্ষা সামগ্রীতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে। প্রতিনিয়ত এসব বর্জ্য পানি, খাবার, মাটি, বাতাস, পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণের পর থেকে দেশে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে এক হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস বর্জ্য ও ৪৪৭ টন সার্জিক্যাল মাস্কের বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এ ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং এক জনগোষ্ঠী থেকে অন্য জনগোষ্ঠীতে সংক্রমিত হয়। তার ওপর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম থেকেও এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। বিষয়টির ভয়াবহতা জেনেও সংশ্লিষ্টরা এই বিষয়ে উদাসীন। করোনার বর্জ্য মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর ঝুঁকি বিবেচনায় সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর গত ১৩ জুন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ৫টি নির্দেশনা মানতে চিঠি দেয়। নির্দেশনায় প্রত্যেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে করোনা বর্জ্য আলাদা করার প্রক্রিয়া নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, দুই স্তরবিশিষ্ট প্লাস্টিক ব্যাগের দুই-তৃতীয়াংশ এসব বর্জ্য ভর্তি করে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে বেঁধে আলাদা বিনে রাখতে হবে, বিনের গায়ে লেখা থাকতে হবে কোভিড-১৯ বর্জ্য। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে অল্পসংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিলেও বেসরকারি হাসপাতালে এমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মাস্ক, গ্লাভসসহ যে কোনো ধরনের মেডিকেল বর্জ্য বাইরে ফেলা উচিত নয়। সরকারি-বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানই হোক, তাদের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে গাইডলাইন আছে, সেগুলো অনুসরণ করে কাজ করা উচিত। অতি দ্রæত সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাগুলোকে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে হবে। ধরন ভেদে প্রতিটি বর্জ্য তার উৎসেই আলাদা করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আলাদা আলাদাভাবে সংগ্রহ, পরিবহন, ডাম্পিং ও ধ্বংস করার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাও। দায়িত্বটা যতটা স্বাস্থ্য বিভাগের, ততটাই নগর কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমেরও। পাশাপাশি পারিবারিক স্তরে, সামাজিক বলয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বোধের বিষয়টাও প্রত্যাশিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App