×

মুক্তচিন্তা

পাটকল বন্ধ না করে দূর করতে হবে প্রতিবন্ধকতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪৬ পিএম

বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ হয়েও আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লাভবান হতে পারছি না। বর্তমানে দেশে ৩০৭টির মধ্যে সরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৫টি এবং বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৮২টি। বেসরকারি পাটকলগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলে স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে সচল থাকলেও সরকারি পাটকলগুলোর অবস্থা শোচনীয়। বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে সরকারি পাটকলগুলো বিগত ৪৮ বছরের মধ্যে ৪ বছর কিছুটা লাভ দেখাতে পারলেও বাকি ৪৪ বছর অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে এসেছে। ফলস্বরূপ প্রতি বছর সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে কলগুলো সচল রাখতে হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তথাপি সরকারকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হয়েছে। হয়েছে শ্রমিক আন্দোলনও। তাই গত ১ জুলাই ‘শতভাগ’ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে ২৪ হাজারের অধিক শ্রমিককে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর আওতায় এনে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত চSড়ান্ত করেছে সরকার। যখন বৈশ্বিক বাজারে পাট পণ্যের স্বর্ণালি সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে এবং পাট উৎপাদনকারী দেশগুলো সেই সুযোগ লুফে নিচ্ছে, তখন দেশজ পাটকল বন্ধের ঘোষণা আমাদের হতাশ করে। সরকারি পাটকলগুলোর লোকসানের প্রধান কারণ হিসেবে বিজেএমসির অব্যবস্থাপনা, সময়মতো পাট কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাব ও দুর্নীতিকে বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া নেতৃত্ব ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের অভাব, বৈশ্বিক বাজার দখলে কৌশলগত ত্রæটি, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, অদক্ষ ও বেশিসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগের ফলে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই পাটকলগুলোকে। ফলে কলগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সরকার। এদিকে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেয়ায় পাটের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। ফলে মৌসুমের পাট বিক্রি করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক। কৃষি অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এবার দাম না পেয়ে চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারালে উৎপাদন কমে যাবে। তাতে পাট সংকটে পড়বে বেসরকারি পাটকলগুলোও। কিন্তু এতে শুধু পাটকলের সঙ্গে জড়িত কৃষক ও শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং আমরা উন্নতির স্বর্ণালি সুযোগকে ক্রমেই হারিয়ে ফেলছি। ‘জাতীয় পাটনীতি-২০১৮’ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোগ ও দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিই আমাদের মূল লক্ষ্য নয় বরং নিজেদের পাট পণ্যের ব্যবহারে সবাইকে আগ্রহী হতে হবে। তাহলে দেশেই পাটের একটা বড় বাজার তৈরি হবে। সরকারি-বেসরকারি পাটকলগুলোর পাশাপাশি পাটের বাজারে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তৈরি পোশাক শিল্প (রপ্তানি) থেকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। যদিও এই শিল্পে সুতা, তুলা, ফেব্রিক্স থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কাঁচামাল আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা শুধু ফেব্রিক্সকে প্রসেসিং করে পোশাক তৈরি করি ও রপ্তানি করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছি। কিন্তু যেই সোনালি কাঁচামাল, আমরা নিজেরাই ব্যাপক হারে উৎপাদন করি, সেটির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি বারবার। পাট প্রসেসিং করে রপ্তানি নিশ্চিত করতে পারলে তা পোশাক শিল্পের থেকেও দ্বিগুণ লাভজনক হবে। যেভাবে লাভবান হচ্ছে ভারত। পৃথিবী এখন প্রকৃতি ও পরিবেশকে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং পাটশিল্পে সম্ভাবনার আলো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। আর ঠিক এই রকম বৈশ্বিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমাদের পাটশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা খুঁজতে হবে। পরিবেশবান্ধব পাটকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের উন্নতি অন্যদের হাতে তুলে না দিয়ে, কাঁচা পাট রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে এনে নিজেরা প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। তাই পাটকলগুলো ক্রমেই খুলে দিয়ে পাটশিল্পের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এটাই সময় নিজেদের কাঁচামাল ব্যবহারে সমৃদ্ধি অর্জন করার, উন্নত দেশ গড়ার। শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App