×

মুক্তচিন্তা

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার অবদান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪৯ পিএম

১ অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেনের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উচ্চ পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর সমতা, ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতি নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার নবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে তাদের চাকরি রক্ষার দাবি জানান। তার মতে, আয় এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই ক্ষমতায়ন সৃষ্টি হয়। তাই আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। কোভিড-১৯ মহামারি বিশেষ করে নারীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। নারীরা বৈষম্য এবং বেড়ে যাওয়া পারিবারিক সহিংতার শিকার হচ্ছে। এ কারণে নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা সরকারের কষ্টার্জিত অর্জন হুমকির মুখে। জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে ১৯৯৫ সালের বেইজিং ডিক্লারেশন এন্ড প্লাটফরম ফর অ্যাকশন একটি বড় ধরনের রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এটি নারীর প্রতি বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে এবং ইতিবাচক উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। প্রকৃতপক্ষে নারীর ক্ষমতায়নে এদেশের অসামান্য উন্নয়ন ঘটেছে। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদের বসিয়েছিলেন। নারীর ক্ষমতায়ন বলতে একজন নারীর স্বকীয়তা, নিজস্বতা, সর্বোপরি স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিকাশকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা ও বৈষম্য দূর করে নারীকে পুরুষের সমকক্ষে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো নারীর ক্ষমতায়ন। এই ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যৌক্তিক এবং অনন্য। মানবসভ্যতার শুরুতে নারী-পুরুষের যৌথ জীবনে গড়ে উঠেছিল বৈষম্যহীন সমাজ। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার রূপান্তরের ইতিহাসে পুরুষের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় সমাজে। সেই কর্তৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে উনিশ ও বিশ শতকের নারীবাদী আন্দোলনের তরঙ্গাঘাতে। আমরা সবাই জানি, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য দরকার হয় উন্নত অবকাঠামো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন। স্বাধীনতার পর এদেশে এসবের উন্নত সংস্করণ না থাকলেও এখানে অর্থনীতির যে অভাবনীয় বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছে, তা মূলত নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিকে কেন্দ্র করেই এসেছে। গত বছর ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে নারীর ক্ষমতায়ন ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্য ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভ‚ষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ মার্চ জার্মানির বার্লিনে সিটি কিউব আইটিবি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন (আইএসএডবিøউ) এই পদক প্রদান করে। নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দক্ষ নেতৃত্বের কথা অনেক আগে থেকেই বিশ্ববাসী জানেন। তবে এই সম্মাননার গুরুত্ব রয়েছে। ২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার সময় সিডনিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘নারীদের সহযোগিতা ও তাদের অধিকার তুলে ধরতে আমাদের একটি নতুন জোট গঠন করতে হবে। লাখ লাখ নারীর স্বার্থে আমরা অবশ্যই আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ নিয়ে একত্রে কাজ করতে হবে।’ সে সময় তিনি পুরস্কারটি যারা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছেন বিশ্বের সেসব নারীকে উৎসর্গ করেন। তিনি সেদিন আরো বলেছিলেন, ‘কোনো মেয়ে ও নারী পিছিয়ে পড়ে থাকবে না।’ তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের নারীরা এখন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। নারীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সরকারের আমলে গত ১১ বছরে নারীর ক্ষমতায়নে এমন সব উল্লেখযোগ্য কাজ করা হয়েছে যা নারীর পিছিয়ে পড়া পরিস্থিতিকে পাল্টে দিয়েছে। যেমনÑ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫ থেকে ৫০টি করা, রাজনীতিতে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল ও উপজেলা পরিষদে এবং পৌরসভায় সংরক্ষিত নারীর আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীতকরণ এবং সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; পরিবারে নারীর সমতা বিধানের জন্য যৌতুক প্রতিরোধে ‘যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৭’ প্রণীত হয়েছে। এছাড়া পাসপোর্টসহ সব ক্ষেত্রে পিতার সঙ্গে মাতার নাম লেখার রীতি বাস্তবায়ন, প্রসূতি মায়েদের জন্য ৬ মাসের ছুটি কার্যকর করা, দরিদ্র ও গর্ভবতী মায়েদের মাতৃকালীন ভাতা প্রদান, সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভি বাজেট প্রদান; ‘নারী বোর্ড ও জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠা’, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ২০১১ সালে ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন-২০১৫ প্রণয়ন ছাড়াও নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া বেকার এবং অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জন্য বর্তমান সরকারের অধীনে আরো অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সাংবিধানিক অধিকারকে স্মরণে রেখে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বেশ কিছু অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন ২০২০ সাল নাগাদ উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমানের ৭০ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করা হবে; প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগের নীতি আরো বৃদ্ধি করা হবে; নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা ও সুপারিশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে; জয়িতা ফাউন্ডেশন সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীদের সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্প্রসারণ করা হবে। নারীদের পুরুষের সমান মজুরির নিশ্চয়তা দেয়া এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সব ক্ষেত্রে নারীদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা হবে; সরকারি চাকরিতে নারী কর্মকর্তার হার ২০২০ সাল নাগাদ ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে; শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে; ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত আরো ৫৬ হাজার ১০০ নারীকে ক্ষমতায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে; নারী ক্ষমতায়নে প্রতি বছর ১৮.২০ লাখ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আসলে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীকে ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। সমাজ ও অর্থনীতিতে নারীর অবদান যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে এবং তাদের ওপর নির্যাতন করা প্রতিরোধ করতে হবে, তবেই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত এই প্রতিশ্রæতিসমূহ পূরণ করার মধ্য দিয়ে এদেশ আরো বেশি অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি। বস্তুত দেশের অর্ধেক নারী সমাজকে অন্ধকারে রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে শেখ হাসিনা সরকার নারীদের ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীরা কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সমৃদ্ধ করছেন। আর নারীরা ক্ষমতায়িত হলে পরিবার, সমাজ তথা দেশ উন্নত হবে এটাই বাস্তবতা। ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকার পূরণ করা হলে এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে কর্মজীবী নারী সমাজের চাকরি রক্ষা করা গেলে আমাদের দেশ সব সূচকে অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছাবে। ড. মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App