×

জাতীয়

মাউশির কর্মচারী পদোন্নতি তালিকায় গড়বড়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৯ এএম

মাউশির কর্মচারী পদোন্নতি তালিকায় গড়বড়!

প্রতীকী ছবি।

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। পদোন্নতির জন্য যে তালিকা করা হয়েছে তাতে ‘জুনিয়র হয়েছে সিনিয়র’ এবং ‘সিনিয়র হয়ে গেছে জুনিয়র’। এমনকি তালিকায় সব কর্মচারীর নামও নেই। অথচ এই তালিকা সংশোধন করে পদোন্নতি দেয়ার জন্য কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। মাউশি মহাপরিচালককেও আপত্তির কথা বলেছেন তারা। তবুও ভুলেভরা এই তালিকা ধরেই কর্মচারীদের পদোন্নতি দেয়ার জন্য আগামীকাল সোমবার সভা ডেকেছে মাউশি। ২০১৬ সালেও এমন তেলেসমাতি কারবারের কারণে কর্মচারীদের পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদোন্নতি দেয়ার আগে খসড়া তালিকা করে নোটিস বোর্ডে ঝোলানোর কথা। সেই তালিকায় কারো আপত্তি থাকলে আপিল করার বিধান আছে। কিন্তু খসড়া তালিকা সম্পর্কে যারা আপিল করেছেন তাদের শুনানির জন্য ডাকা হয়নি। এ অবস্থায় সংক্ষুব্ধ কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আপত্তি জানায়। জবাবে গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালকের কাছে মতামত জানতে চায়। একই সঙ্গে গত ৯ সেপ্টেম্বর ‘সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদে ঠিকঠাক অবস্থান নির্ধারণ করে পদোন্নতি দেয়ার জন্য মাউশি মহাপরিচালক বরাবর আপত্তি জানিয়েছেন। তবুও পদোন্নতি খসড়া তালিকা সংশোধন হয়নি।

জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক ভোরের কাগজকে কর্মচারীদের পদোন্নতির কথা স্বীকার করলেও খসড়া তালিকায় যে ‘গড়বড়’ হয়েছে তা নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি প্রশ্ন শুনে বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি তারপর কথা বলব। তবে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেছেন, নিয়োগ বিধি এবং জ্যেষ্ঠতার বিধি আমলে নিয়ে পদোন্নতির জন্য সমন্বিত যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে তা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। একই সঙ্গে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনেরও মতামত নিচ্ছি, যাতে কারো প্রতি অবিচার না করা হয়। কর্মচারীদের একাংশ বলছেন, পদোন্নতির জন্য যে খসড়া তালিকা

করা হয়েছে তাতে জুনিয়র সিনিয়র হয়ে গেছেন এবং সিনিয়র জুনিয়র হয়ে গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, এটা নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। তবু তারা যদি একে অন্যের সমালোচনা করেন তাহলে পদোন্নতির প্রক্রিয়া হয়তো আটকে যাবে। সে ক্ষেত্রে তাদেরই তো ক্ষতি হবে। তবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর পদোন্নতির দ্বার খুলছে, এটিকে কাজে লাগানো উচিত।

নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উচ্চমান সহকারী এবং সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে দুই বছর চাকরির পর প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। অর্থাৎ এই দুই পদে চাকরিরতরাই প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু মাউশি পদোন্নতির জন্য এখন যে খসড়া তালিকা করেছে তাতে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ৪টি পদকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এগুলো হচ্ছে প্রধান সহকারী (কলেজ), উচ্চমান সহকারী, হিসাবরক্ষক-কাম-ক্লার্ক এবং সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, যা একেবারেই বিধিবহির্ভূত। এছাড়া প্রধান সহকারী পদে ফিডার পদ দুটি হচ্ছে উচ্চমান সহকারী ও সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর। জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে এই দুই পদে যোগদানের তালিক থেকে পদোন্নতির জন্য তালিকা হওয়ার নিয়ম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

পদোন্নতির খসড়া তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২ নং ক্রমিকে থাকা কর্মচারী মো. আলী আকবর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ উচ্চমান সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। একই তালিকায় ৫৯ নম্বর ক্রমিকে থাকা জয়ন্তী রাণী ধর সাঁটলিপিকার পদে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। আলী আকবরের ফিডার পদের কর্মকাল প্রায় ১৩ বছর; অন্যদিকে জয়ন্তী রাণীর কর্মকাল ২২ বছর। জ্যেষ্ঠ্যতার তালিকায় জয়ন্তী রাণীর অবস্থান আলী আকবরের অনেক ওপরে। একই তালিকার ১২ নম্বর ক্রমিকে সঞ্জয় কুমার বণিক ২০১৪ সালের ৩০ জুন এবং ১০৭ নম্বর ক্রমিকে থাকা মো. মেহেদি হাসান ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি উচ্চমান সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। বিধি মোতাবেক সঞ্জয় কুমারের ওপরের স্থানে মেহেদি হাসানের নাম থাকার কথা। ১৮ নম্বর ক্রমিকে থাকা মো. নুরুল আমীনের চাকরি ১৯৮৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধান সহকারী (কলেজ) হিসেবে নিয়মিত হয়। কলেজের প্রধান সহকারী পদটি ১৪তম গ্রেডের। নুরুল আমীন ১৯৮৭ সাল থেকে কর্মরত। অন্যদিকে সঞ্জয় কুমার বণিক ২০১৪ সালের ৩০ জুন থেকে কর্মরত। মো. নুরুল আমীন বর্তমানে ঢাকা কলেজের প্রধান সহকারী পদে কর্মরত। সঞ্জয় কুমার বণিক একই কলেজের হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত। হিসাবরক্ষকের পদটি প্রধান সহকারী অধীনস্থ। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই সঞ্জয় কুমার বণিক নুরুল আমীনের চেয়ে সিনিয়র নন। অথচ মাউশি পদোন্নতির জন্য যে খসড়া তালিকা করেছে তাতে দেখা গেছে, সঞ্জয় কুমার বণিক নুরুল আমীনের সিনিয়র।

নথি ঘেঁটে আরো জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের একটি আইনে বলা হয়েছে, কর্মচারীদের পরিচিতি হবে গ্রেডভিত্তিক। শ্রেণি প্রথা বাদ দিয়ে গ্রেডভিত্তিক পরিচিতি পাওয়ায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে গ্রেডভিত্তিক জ্যেষ্ঠতার তালিকাও যুক্তিসঙ্গত। এর ফলে নিচের গ্রেডের কর্মচারী ওপরের গ্রেডের কর্মচারীর বড় হতে পারেন না। বর্তমানে যে নিয়মে পদোন্নতির জন্য কর্মচারীদের যে খসড়া জ্যেষ্ঠতার তালিকা করা হয়েছে ঠিক একইরকমভাবে ২০১৬ সালেও করা হয়েছিল। সে সময়ও ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদোন্নতি সংক্রান্ত অভিযোগ বিবেচনায় নিলে সেবার এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবারো কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়ে বলেছেন, মাউশির নিয়োগ বিধিমালা-১৯৯১ মোতাবেক জ্যেষ্ঠতা নিরূপণ করে পদোন্নতি দিতে। এরপর মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিধিমালা ১৯১৯ সংশোধন করে চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়ন করার জন্য মাউশির মতামত চেয়েছে। কিন্তু মাউশি এসবকে পাত্তা না দিয়ে সোমবারই কর্মচারীদের পদোন্নতি সভা করতে অনড়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App