×

মুক্তচিন্তা

সম্ভাবনার নতুন দ্বার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৬:২৬ পিএম

সম্ভাবনার নতুন দ্বার

ছবি: সংগ্রহ

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের তরুণের কাছে জনপ্রিয় টার্ম হলো গিগ ইকোনমি বা শেয়ারড ইকোনমি। করোনার করাল গ্রাসে পৃথিবীব্যাপী যখন অনেকেই চাকরি হারিয়ে করুণ পরিস্থিতির মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে ঠিক তখনই তরুণরা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা আয় করে নিজেদের স্বাবলম্বী করছে। গিগ ইকোনমি হলো ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল খণ্ডকালীন কাজ। অর্থাৎ এতে নির্দিষ্ট কোনো অফিস ঘণ্টা নেই। ই-কমার্স, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাইডশেয়ারিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, কো-ওয়ার্কিং স্পেস, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি কাজের মাধ্যম তরুণ প্রজন্মের কাছে আশার আলো দেখা দিয়েছে। যে দেশ যত বেশি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ও গতিশীল সে দেশ তত বেশি গিগ ইকোনমিতে এগিয়ে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গিগ ইকোনমি আশীর্বাদস্বরূপ। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ আর বেকারত্ব সমস্যায় জর্জরিত এ দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে গিগ ইকোনমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ দেশে শিক্ষিত বেকারের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৩৭ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার এবং ৩৪ শতাংশ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার রয়েছে এ দেশে। তাছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিধারী বেকারের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ। এই বিপুল পরিমাণ বেকার তরুণদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বের করে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব গিগ ইকোনমির মাধ্যমে। ফলে তরুণরা একদিকে যেমন নিজেরা স্বাবলম্বী হবে অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

গিগ ইকোনমিকে সফলভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য ব্যবহার করতে হবে। ভবিষ্যৎ চাহিদার দিক থেকে গিগ ইকোনমির উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ ঘটবে। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগতে হবে।

বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোও গিগ ইকোনমির দিকে ছুটছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ ভাগ আমেরিকান চাকরির এই ধারায় প্রভাবিত হবে। বাংলাদেশও গিগ ইকোনমির ধারায় পিছিয়ে নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় গিগ ইকোনমির দিক থেকে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় ভারত প্রথম, যার অনলাইনে কাজের ক্ষেত্র ২৪ শতাংশ; বাংলাদেশ দ্বিতীয়, যার অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয়, যার অনলাইনে কাজের ক্ষেত্র ১২ শতাংশ অধিকার রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার সবচেয়ে বেশি দখল করেছে। এখানে প্রায় ৬ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠী কাজ করছে এবং তাদের মাসিক আয় ৬০ মার্কিন ডলার। তরুণ প্রজন্ম এই ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে কারণ এখানে স্বাধীন কাজের সুবিধা, স্বল্পমেয়াদি শ্রমঘণ্টা, ঘরে বসে কাজ করা যায়, পুঁজি সংরক্ষণ করতে পারে, পারিশ্রমিক বেশি।

তবে গিগ ইকোনমিতে অস্থায়ী কাজ হওয়ায় এ ক্ষেত্রকে ঘিরে উদ্বেগও কম নয়। মানসম্মত কর্মসংস্থানের অভাব, স্থায়ী চাকরির অনিশ্চিয়তা, কাজ বুঝিয়ে দেয়ার মতো সমস্যার কথা উঠে আসে। তাই গিগ ইকোনমি নিয়ে গবেষণা করে দেশের গিগ ইকোনমি কোন পর্যায়ে, অর্থনীতির মোড় কোন দিকে যাচ্ছে, আয় বণ্টন কেমন হবে, জনজীবনে কতটা প্রভাব ফেলবে, মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়গুলো বের করে নীতিমালা নির্ধারণ করে গিগ ইকোনমিকে সফলভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য ব্যবহার করতে হবে। ভবিষ্যৎ চাহিদার দিক থেকে গিগ ইকোনমির উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ ঘটবে। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগতে হবে। তরুণ বেকারদের মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে, তবেই দেশ ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নাম লিখাতে সক্ষম হবে।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App