×

জাতীয়

শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইন প্রণয়ণের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৭:২০ পিএম

শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইন প্রণয়ণের দাবি

শ্রমিক/ফাইল ছবি

সকল খাতের শ্রমিকদের জন্য যথাযথ শ্রম আইন প্রণয়ন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক সুরক্ষা ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বাংলাদেশ কমিটি।

শনিবার (৩ অক্টোবর) বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘একাধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অব্যাহত: শোষণমুক্ত, সামাজিক ন্যায়বিচার সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়’’ শীর্ষক স্লোগানে বিশ্বব্যাপী ‘এ্যাকশন ডে’ পালনের অংশ হিসাবে বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বাংলাদেশ কমিটি এ দাবি জানায়।

ঢাকার পল্টনস্থ ফেনী সমিতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি শ্রমিক নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বাংলাদেশ কমিটির সমন্বয়ক ও জাতিয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব নোমানুজ্জামান আল আজাদ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সহসভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরি সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেণি যে নিপীড়নের শিকার তা আরও তীব্ররূপ লাভ করেছে করোনা মহামারিতে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে ভয়াবহভাবে, শ্রমজীবীদের অর্থনৈতিক দুর্দশা বেড়েছে বহুগুণ । কিন্তু পুজিবাদী শোষণের ফলে কর্পোরেট পুঁজির মুনাফাও বেড়েছে বিপুলভাবে। ফলে বিশ্বব্যাপী করোনা বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে । গোটা পৃথিবী এখন পুঁজিবাদী আগ্রাসনের শিকার। এই বাস্তবতা প্রমাণ করেছে একমাত্র শ্রেণি সচেতন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনই শ্রমিকশ্রেনীকে দুর্দশা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশেও করোনার অজুহাতে মালিকরা রাষ্ট্রের কাছে যত সুবিধা নিয়েছে তার কোনো সুফল শ্রমিকদের কাছে পৌঁছেনাই। বরং মালিকরা এই করোনাকালে প্রণোদনা নিয়েও গার্মেন্টস এবং চামড়া শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই, সময়মত মজুরি পরিশোধ না করা, মজুরি কম দেওয়াসহ নানাভাবে শ্রমিকদেরকে বঞ্চিত করেছে। আর সড়ক ও নৌযানসহ পরিবহণ শ্রমিক, পর্যটন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা চরম দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করেছে। তারা জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের এই শ্রমে দেশের উৎপাদন ও অর্থনীতি সচল থাকলেও শ্রমিকদের জীবন হয়েছে দুর্বিষহ। কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। আউটসোর্সিং এর নামে শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা হরণকরা হয়েছে। করোনার এই সংকটের সময় নতুন কর্মসংস্থান করা যখন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব, সেই সময় ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের প্রতিনিধি বর্তমান সরকার, আমলাতন্ত্র আর নীতিনির্ধারকদের ভুলনীতি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপচয়ের দায় শ্রমিকদের কাঁধে চাপিয়ে রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে, চিনিকলগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ব ব্যাংক, আই.এম.এফ‘র পরামর্শে অতীতেও রাষ্ট্রীয় কারখানা লোকসানের অজুহাতে ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল, এর ফলে লুটপাট হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রের বা দেশের জনগণের কোনো লাভ হয়নি।

নেতারা রাষ্ট্রের এই দায়িত্বহীন আচরণের নিন্দা জানিয়ে বন্ধ বা ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর নয়, আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রিয় মালিকানায় পাটকলসমূহ চালু করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ, প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা, করোনার কারণে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসা শ্রমিকদের পুনর্বাসন, পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, সকল খাতের শ্রমিকদের জন্য আইন প্রণয়ন করে জাতীয় ন্যুনতম মজুরী ঘোষণা, সকল শ্রমজীবী মানুষের তালিকা তৈরি করে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App