×

সারাদেশ

ভাতিজার মিথ্যা মামলায় সর্বস্বান্ত বৃদ্ধ চাচা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৪:৫২ পিএম

ভাতিজার মিথ্যা মামলায় সর্বস্বান্ত বৃদ্ধ চাচা

কমলনগর প্রেসক্লাবে বৃদ্ধের সংবাদ সম্মেলন

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মো. মোছলেহ উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে আপন চাচাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই যুবক বিভিন্ন নাটক সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাচার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে যাচ্ছেন। ভাতিজার করা ওইসব মিথ্যা মামলায় সর্বস্বান্ত চাচার জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী বৃদ্ধ চাচা হাজি রুহুল আমিন (৭০) শুক্রবার কমলনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভাতিজার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলার চরমার্টিন এলাকার বাসিন্দা ও মুন্সীরহাট বাজারের ব্যবসায়ী হাজি রুহুল আমিন জানান, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে ছোটভাই আবুল বাসারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে বাসারের ছেলে মো. মোছলেহ উদ্দিন তাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানির পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন মোছলেহ উদ্দিন। পূর্ব শত্রুতার কারণে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও এক লাখ টাকা ধার দেওয়া এবং সেই টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে মামলায় তার বিরুদ্ধে (রুহুল আমিনের) অভিযোগ করা হয়। পরে অভিযোগটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এভাবে মোছলেহ উদ্দিন বিভিন্ন সময়ে বাদী হয়ে আদালতসহ থানা ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্তে সেগুলোও মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় খারিজ হয়ে যায়।

এদিকে মোছলেহ উদ্দিন কৌশলে মুন্সীরহাট বাজারের ওই ব্যবসায়ীর দোকানের ক্যাশ বক্সে থাকা ব্যাংক হিসাবের চেক বই থেকে এক পাতা চেক চুরি করে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাদিরপণ্ডিতের হাট শাখার সঞ্চয়ী হিসাবের ওই চেকটিতে তার স্বাক্ষর জাল করে মোসলেহ উদ্দিন ১৫ লাখ টাকা লিখে তা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে জমা দেন। চেকের স্বাক্ষরের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরের কোনো সামঞ্জস্য না থাকলেও ব্যবস্থাপককে ম্যানেজ করে সে চেকটি ডিজঅনার করে নেয়।

ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় ওই ব্যাংকে তিনি কখনও এক লাখ টাকার বেশি লেনদেন করেননি। অথচ ১৫ লাখ টাকার চেক পেয়েও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করেই সেটি ডিজঅনার করে দিয়েছেন। আর এটি দিয়ে মোছলেহ উদ্দিন ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক প্রতারণার আরও একটি মিথ্যা মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে।

তিনি জানান, ভাতিজার ওইসব মিথ্যা মামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে তিনি এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। একের পর এক মিথ্যা মামলায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে তার জীবন। এসব থেকে রক্ষা পেতে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদেরকে মোছলেহ উদ্দিন কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ, তাকে হয়রানি করাই মোছলেহ উদ্দিনের উদ্দেশ্য। এ সময় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রশাসনের নিকট ভাতিজার এসব কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুন্সীরহাট বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি ও চরমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুকবুল আহম্মেদ বকুলসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চাচা রুহুল আমিনকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করাসহ এলাকার আরও অনেক ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময়ে মোছলেহ উদ্দিন মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। প্রতারণা ও মিথ্যা মামলা করাই যেন তার পেশা। এসব কর্মকাণ্ড থেকে তাকে ফিরেয়ে আনতে বারবার চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

এদিকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মোছলেহ উদ্দিন অভিযোগ সত্য নয়-এমন দাবি করে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী মিয়া বলেন, তাদের চাচা-ভাতিজার বিরোধ মীমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এখন পুনঃরায় সামাজিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App