×

মুক্তচিন্তা

লিপস্টিক সূচক পাসপোর্ট সূচক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২০, ০৯:১৮ পিএম

বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট দেখিয়ে বিদেশি এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন পাড়ি দেয়া এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে। একই রকম দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাক্সিক্ষত পাসপোর্ট- আমেরিকান পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট হাতে থাকলে ৮ মাস আগেও বিনা ভিসায় ১৮৫টি দেশের ইমিগ্রেশনের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যেত। এখন এ পাসপোর্ট দেখলে সন্দেহ বেড়ে যায়, এ তালিকার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ দেশের জন্য খোলা দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।

করোনাকালের বিউটি ইন্ডাস্ট্রি : লিপস্টিক ইনডেক্স বিউটি ইন্ডাস্ট্রির প্রধান ভোক্তা নারী। সৌন্দর্যে আরো মূল্য সংযোজন করার পর তা ঢেকে রাখার কোনো মানে হয় না। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় নিরাপত্তা মুখোশ পরতেই হচ্ছে। তাতে লিপস্টিক মাখা ঠোঁট প্রদর্শনের সুযোগ নেই। সুতরাং লিপস্টিক উৎপাদক ও লিপস্টিক বিক্রেতার মাথায় হাত। কিন্তু ফেপেফুলে উঠছে মাস্ক ব্যবসায়ী। পরনের কাপড়ের সঙ্গে ম্যাচিং করা মুখোশও মিলছে।

বিউটি ইন্ডাস্ট্রির আওতায় আসে ত্বকের যত্ন, কসমেটিকস চুলের যত্ন। পারফিউম এবং ব্যক্তিগত সেবা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক এই শিল্পে ধস নামিয়েছে। দ্রুত এবং বিচিত্রভাবে বিকাশমান এই শিল্পের আর্থিক আকার ৫৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার সময় এই শিল্প কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও ২০১০ সালে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি নিয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। অন্যসব সামগ্রীর মধ্যে মন্দাবস্থায় লিপস্টিকের বাজার যখন কিছুটা ভালো হতে শুরু করল মার্কিন বিলিয়নিয়ার এসটি লডার কসমেটিক কোম্পানির মালিক লেনার্ড লডার অর্থনৈতিক সূচক হিসেবে লিপস্টিক ইনডেক্সের কথা বললেন। লিপস্টিক বিক্রি বেড়ে গেলে বুঝতে হবে অর্থনীতিতে অবস্থা একইভাবে খারাপ হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে অনুমানটি হচ্ছে অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা শুরু হলে নারী ভোক্তা অধিকতর দামি পরিধেয় যেমন জুতা কিংবা পোশাক কিনতে না পেরে লিপস্টিক কিনেন। নতুন সহস্রাব্দে আবার যখন অর্থনীতির অবস্থা ভালো হতে শুরু করল, তখন দেখা গেল লিপস্টিক বিক্রিও বেড়ে গেছে। ফলে নতুন উপাত্ত লিপস্টিক সূচককে সমর্থন করল না। মন্দাবস্থায় জাপান ও ফিলিপিন্সে নেইল পালিশের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সেখানে নেইল পালিশ ইনডেক্সের কথাও শোনা গেছে।

তবে করোনাকালে মাস্ক পরিহিত নারীর দিকে চোখ পড়লে স্পষ্টতই মনে হতে পারে মাসকারার বিক্রি সম্ভবত বেড়ে গেছেÑ এবার বাস্তবিকই বিউটি ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খারাপ, কিছু সময় অন্তত মাসকারা ইনডেক্স লেনার্ড লডারের তত্ত¡কে সমর্থন করবে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদনের ৮৫ ভাগই সরাসরি দোকান থেকে বিক্রি হতো। এমনকি ভার্চুয়াল জগতে অভ্যস্ত তরুণীরাও দেখেশুনে তাদের ক্রয়ের ৬০ ভাগই নিতেন দোকান থেকে। এই বিশ্বব্যাধি অন্তত ৩০ ভাগ দোকানে তালা ঝুলিয়েছে, যার অনেকগুলো এরই মধ্যে দেউলিয়াও হয়ে গেছে। এদিকে আমাজান ও সেপোরা অনলাইনে প্রসাধন সামগ্রী বিক্রি বেড়েছে কমপক্ষে ৩০ ভাগ। মার্চের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বুটসের দোকান থেকে বিক্রি কমেছে অন্তত তিন ভাগের দুই ভাগ। চীনে নতুন করে দোকানপাট খোলার পর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ থেকে ৭০ ভাগ কম বিক্রি হয়েছে।

মাস্কের বাধ্যবাধকতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ মান্য করতে হচ্ছে বলে মেকআপ আইটেম এবং দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম বিক্রি ৫৫ থেকে ৭৫ ভাগ নেমে গেছে। চীনের আলীবাবার উপাত্ত থেকে দেখা যায় চোখের কসমেটিকস বিক্রি বেড়ে গেছে ১৫০ ভাগ। ফ্রান্স যখন লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছিল তখন হাত ধোয়ার ব্র্যান্ড সোপ বিক্রি ৮০০ ভাগ বেড়ে যায়। করোনাকালে আমাজনের চোখের প্রসাধন বিক্রি বেড়েছে ২১৮ ভাগ, কলপ বিক্রি ১৭২ ভাগ। বহু বিউটি পার্লার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডু-ইট-ইউরসেল্ফ প্রসাধন বিক্রি বেড়ে গেছে বহুগুণ।

করোনা ভাইরাসজনিত দুর্যোগের একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের মধ্যেই বাজারে পড়তে শুরু করেছে- অনলাইন বেচাকেনা আগের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অনলাইন বিক্রেতা যদি তার লাভের মার্জিন কমিয়ে দেয় তাহলে বিপুলসংখ্যক হাইস্ট্রিট শপ বন্ধ হয়ে যাবে। টুয়েন্টি টুয়েন্টি বছরটি নর-নারীর সৌন্দর্য শিল্পের জন্য সবচেয়ে খারাপ বছর, এটি এর মধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। তবে আনুমানিক দুই বছরে বাজার আবার রমরমা হয়ে উঠবে। জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় পছন্দের লিপস্টিক কেনাতে এর প্রভাব পড়ছে, বিক্রি বেড়েছে। বিউটি ইন্ডাস্ট্রি মিলেনিয়ালদের দখলে চলে আসছে, তারা বাজারের স্বচ্ছতা দেখতে চাইছে এবং পরিবেশবান্ধব প্রসাধন চাইছে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার চাইছে।

শহুরে পাখি ও গ্রামের পাখির গান ঈশপের গল্পের শহুরে ও গ্রামের ইঁদুরের কথা মনে করা যাক। শহুরে ইঁদুর তার গ্রামীণ ইঁদুর আত্মীয়কে শহরে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। সুন্দর থালাতে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেছে। কিন্তু যখন খেতে যাচ্ছে বাড়ির পোষা কুকুর আর বিড়ালের হাবভাব দেখে অতিথি ইঁদুর এতটাই ভয় পেয়ে গেল যে আর খাওয়া হলো না। বিদায় নিয়ে দ্রুত গ্রামে ফিরে গেল, সেখানকার সাধারণ খাবারের চেয়ে ভালো খাবার আর কিছু হতে পারে না। শহুরে পরিবেশ ইঁদুরের আচরণে যে পরিবর্তন আনে, তা বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে এবং ডিএনএ গঠনে প্রভাব বিস্তার করে। পাখি বিজ্ঞানীরা বের করেছেন শহুরে পাখি গ্রামের পাখির চেয়ে উঁচু স্বরে কিচির-মিচির করে, গান গায়- কোকিলও তাই করে, চড়ুই পাখিও। পাখির স্বর শহরে এসে চড়া হয়ে যাওয়ার কারণ চারপাশে শব্দ ও ধ্বনির আধিক্য। এতসব ধ্বনি ভেদ করে পাখির যেমন শুনতে সমস্যা হয়, পাখি যাদের জন্য গান গায়, মনে করে তাদের কাছে নিশ্চয়ই নিচু স্বরের গান পৌঁছবে না। সুতরাং সুর চড়া করে।

করোনাকালের লকডাউন প্রাণী গবেষকদের গবেষণার একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি ও ইভোলুশনারি বায়োলজিস্ট এলিজাবেথ ডেরি পাখি নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন। লকডাউনের ফলে মানুষের চলাচল ও কাজকর্ম কমে যাওয়ায় প্রেক্ষাপটের ধ্বনির মাত্রা হ্রাস পেয়ে গ্রামের নীরবতা নেমে এসেছে। এমনিতে পুরুষ চড়–ই পাখিই গান গায়, নারী চড়–ইয়ের গান দুর্লভ। এলিজাবেথের হাতে আছে সাইনফ্রানসিসকোতে লকডাউনের আগের ডাটা ও ভয়েস রেকর্ডিং। নবসৃষ্ট শব্দহীন শহুরে পরিবেশে চড়–ইয়ের গান রেকর্ড করে দেখলেন। পাখির কণ্ঠস্বরে এসেছে পরিবর্তন। ধ্বনির ব্যান্ডউইথ কমে গ্রামের পাখির স্বরের কাছাকাছি এসে গেছে। শহুরে পাখির ধ্বনির ফ্রিকোয়েন্সি কমেছে। পরিবর্তিত পরিবেশে গানে, সুরে ও স্বরে পরিবর্তন এসেছে।

টিকা উৎপাদন ও টিকা জাতীয়তাবাদ জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি করোনা মৃত্যুর যে হিসাব যোগ করছে তাতে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে সংখ্যাটি এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য এই সংখ্যা আরো আগেই মিলিয়ন ছাড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করেন, কারণ প্রথমদিকে অনেক করোনা মৃত্যু হাঁপানি, নিউমোনিয়া বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, এমনকি গণমাধ্যমও অন্যের ব্যাপারে সরব থেকে নিজেদের স্বজনদের করোনা মৃত্যু ভিন্ন নামে প্রচার করেছে। জেনেভাতে মিলিয়ন পূর্তির ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি এক্সপার্ট মাইক রায়ান বলেছেন, সন্দেহ করার কারণ রয়েছে যে অনেক দেশেই মৃত্যু ও সংক্রমণের ‘আন্ডার রিপোর্টিং’ ঘটেছে। এই মৃত্যুর এক-পঞ্চমাংশের বেশি ঘটেছে সমৃদ্ধির শীর্ষে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্রে, এমনকি ভারতে মৃত্যু লাখ ছুঁই ছুঁই। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও পরিসংখ্যানের অধ্যাপক গিয়ানলুকা বিয়াও বলেছেন, ‘মিলিয়ন মৃত্যু’ কেবল একটি ট্র্যাজেডির নাম হতে পারে- প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কত তা আর কখনো জানার সুযোগ নেই, যেমন জানা যায়নি প্লেগ মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা। যা বলা হয়েছে হয়তো তা সত্যের কাছাকাছি। তবে পুরোটাই অনুমান। যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে মৃতের সংখ্যা তখনো ১ লাখ পৌঁছেনি, প্রকৃতপক্ষে মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মে পর্যন্ত ১৭টি দেশে প্রায় ২ লাখ ৩ হাজার করোনা মৃত্যুকে সরকারি করোনা মৃত্যুর হিসাবেই আনা হয়নি। এর একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যের। এডনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্রমণকে ব্যাধি বিভাগের অধ্যাপক মার্ক উলহাউস বলেছেন, বিশ্বব্যাধি শুরুর প্রথম দিকটাতে ‘মাইল্ড কেইস’ হিসেবে আনাই হয়নি- মৃতের যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয় তা ছিল হিমবাহের চূড়ামাত্র, প্রকৃত হিমবাহ দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মাইক রায়ান আরো একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে মৃতের সংখ্যা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ সংক্রমণ রোধে খুব কম দেশই আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। এমনকি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানও অবিবেচকের মতো আচরণ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। চীন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং আরো কোনো কোনো দেশ করোনা টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। আবিষ্কারের ঘোষণা যথেষ্ট নয়, সাফল্যের প্রমাণ দেখাবার আগে অনুমোদন মেলে না, বাজারজাত করারও সুযোগ নেই। কিন্তু তার আগেই প্রকট হয়ে উঠেছে টিকা জাতীয়তাবাদÑ ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি তাদের কয়েকটি সেরা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে টিকা উৎপাদনের জন্য বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে এবং এমনকি চ‚ড়ান্ত ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ সম্পন্ন হওয়ার আগেই প্রি-পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট করে ফেলেছে। উৎপাদনের আগেই কিনে ফেলা এই টিকা সত্যিই যদি কার্যকরী হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য, দেশবাসীর জন্য গলা ফাটিয়ে বলার মতো একটি সংবাদ। এসব কোম্পানি চুক্তির কারণে সরকারের চুক্তির সরবরাহ সম্পন্ন করা পর্যন্ত অন্য কোনো দেশে সরবরাহও করতে পারবে না। এতে ভিকটিম হবে অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো। টিকা নিয়ে সৃষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদের পরিণতি নিয়ে অনেক সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে। ২০০৯ সালের এইচওয়ান এনওয়ান ফ্লুর সময় একই ঘটনা ঘটে। প্রি-পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ২ হাজার কোটি টিকা উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। প্রাপ্যতা সীমিত থাকে কেবল ধনী দেশগুলোর মধ্যে। সৌভাগ্যবশত দ্রæত এই ফ্লুর প্রকোপ কমে যাওয়ায় টিকার চাহিদার পতন ঘটে। কেবল তখনই এই টিকা অনুদান হিসেবে গরিব দেশগুলোকে দেয়া হয়- যা না দিলেও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে তেমন কোনো হেরফের ঘটত না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মনে করছে টিকা জাতীয়তাবাদ ঠেকাতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্যকরী টিকা উৎপাদন করতে হবে এবং কোনো ধরনের একচেটিয়াবাদ বা কার্টেল সৃষ্টি না করে প্রয়োজনভিত্তিক বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।

তারপরও করপোরেট ফ্যাসিজমের আতঙ্ক উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ও সংক্রামক রোগের অধ্যাপক ওমর সাদ মনে করেন, ওষুধ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রটোকলে কিছু ছাড় দেয়া হলেও টিকার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রহিত করতে সময় লাগবে ৩ বছর।

করোনা ভাইরাস মুক্তির টিকা উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানীদের ওপর রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। যিনিই আবিষ্কার করুন রাজনীতিবিদদের কিছুটা কৃতিত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশেও ‘করোনা এক্সপ্লোয়াটার’ রাজনীতিবিদ কাম ব্যবসায়ীরা এমনকি মুখোশ বাণিজ্য হাতছাড়া করতে রাজি হননি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তিনি ঘোষণাটি দিতে চান যে টিকা এসে গেছে, তার আশা এতে ভোটের বাক্সে তার নামে বাড়তি কিছু ভোট পড়বে। টিকা গবেষণা নিয়ে মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট কিছু কেলেঙ্কারির সংবাদও দিয়েছে। বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের প্রচারণার হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে রোগীর সর্বনাশ ত্বরান্বিত করছে, তার ব্যাখ্যা প্রদান করছে। তাড়াহুড়ো সঠিক ভ্যাকসিন প্রাপ্তি ত্বরান্বিত করবে না।

করোনা প্রভাবে পাসপোর্ট বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট দেখিয়ে বিদেশি এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন পাড়ি দেয়া এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে। একই রকম দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাক্সিক্ষত পাসপোর্ট- আমেরিকান পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট হাতে থাকলে ৮ মাস আগেও বিনা ভিসায় ১৮৫টি দেশের ইমিগ্রেশনের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যেত। এখন এ পাসপোর্ট দেখলে সন্দেহ বেড়ে যায়, এ তালিকার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ দেশের জন্য খোলা দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। একটিই কারণ- এই মানুষটি সম্ভবত করোনা ভাইরাস বহন করছেন। একবার হোস্ট কান্ট্রিতে ঢুকতে পারলে সংক্রমণের মাধ্যমে দেশটাকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে দেবেন। ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট, কোনো কোনো দেশের জন্য তাদের স্ট্যাটাস বাংলাদেশের সমমর্যাদার। প্রবেশাধিকার বাংলাদেশেরও নেই, যুক্তরাষ্ট্রেরও নেই। আমেরিকার জন্য একদা ভিসা ফ্রি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দরজা বন্ধ। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের এমন পতন অশোধিত তেলের বাজারের মহাকাব্যিক পতনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যত মূল্যবানই হোক চাহিদা না থাকলে বিনে পয়সায়ও কোনো দেশ নেবে না; যত গ্ল্যামারাসই হোক করোনা ভাইরাসপ্রবণ দেশ হওয়ার কারণে আমেরিকার পাসপোর্টের চেয়ে বরং সোমালিয়ার পাসপোর্ট বেশি শক্তিশালী। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোমালিয়ার করোনা মৃত্যু মাত্র ৯৯, আক্রান্ত ৩ হাজার ৫৮৮।

পাদটীকা : স্ত্রী মেলানিয়াসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ট্রাম্প এক টুইটবার্তায় সংবাদটি নিজেই জানিয়েছেন। ট্রাম্পের দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ৭২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু ২ লাখের বেশি। তার মানে সোমালিয়ার পাসপোর্টধারীই বরং কম ঝুঁকিপূর্ণ।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App