×

জাতীয়

এমসি কলেজ ও ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরল তদন্ত কমিটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২০, ০৫:১৩ পিএম

এমসি কলেজ ও ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরল তদন্ত কমিটি

ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি

সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনার জন্য ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও তদারকির অভাবকে দায়ী মনে করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। তদন্তে কোনো সুপারিশ না করে ঘটনা নিয়ে ১৫টির মতো পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। যেখানে উঠে এসেছে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার চিত্র। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে ধর্ষণ ঘটনার আসল চিত্র।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বিকালে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। তবে জনবল সংকট, অপর্যাপ্ত সীমানা প্রাচীর, পর্যাপ্ত আলোর ঘাটতিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতাকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। তাই সার্বিক তদন্তের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে বলে তদন্ত কমিটির প্রধান জানিয়েছেন।

কলেজের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জবলের ঘাটতির বিষয়টিও তদন্ত কমিটির কাছে ধরা পরেছে। ১৪৪ একর এলাকা নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসের কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। গাছগাছালি ও টিলা ঘেরা ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টিও নজরে এসেছে তদন্ত কমিটির। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে ভবন নির্মাণাধীন থাকায় শ্রমিকদের অবাধ আনাগোনা থাকায় লোকজনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি’ বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি মনে করে। ‘এছাড়া ছাত্রাবাস এলাকায় কলেজের অনেক কর্মচারী সপরিবার থাকেন।

সূত্রটি জানায়, কমিটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেনি। তবে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। মহামারি পরিস্থিতিতে নজরদারির ঘাটতি ছিল। এখন নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। হোস্টেল বন্ধ থাকলেও যে কোনো জায়গায় যে কেউ ঢুকতে পারে। কোথাও কোথাও সীমানা প্রচীর নেই। কোথাও কোথাও সীমানা প্রচীর থাকলেও অনেক নিচু। কোথাও তারকাটা দেয়া থাকলেও তা কাটা। যে কারণে ছাত্রাবাস খোলা থাকুক বা না থাকুক যে কেউ ভেতরে ঢুকতে পারে।

[caption id="attachment_245098" align="aligncenter" width="700"]
ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি[/caption]

ধর্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলেও তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ‘তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে রাজনৈতিক ও সামাজিক কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’ তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার বলেও মনে করে। ‘পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করে স্থায়ী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। ঘটনাটি ছাত্রাবাসের কোনো কক্ষে নয়, ধর্ষিতা ও তার স্বামীর গাড়িতে ঘটেছে’ বলেও তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি। ‘যেহেতু কলেজ ক্যাম্পাসে অপকর্মটি ঘটেছে, তাই তার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে কমিটি যেই সীমাবদ্ধতা দেখেছে তাতে কারো পক্ষেই এ ধরনের ঘটনা রোধ করা কঠিন। তদন্ত কমিটির এক সদস্য এমন মন্তব্য করেন।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রাইভেটকারে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে গেলে এক নবদম্পতিকে জোর করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বামীকে ব্যাপক মারধর করার পাশাপাশি বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গাড়িতে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। খবর পেয়ে রাত ১১টায় শাহপরাণ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে ওই তরুণী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ছয়জনকে। সে সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।

এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ৬ আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারা হলেন- শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম, আইনুল ও রাজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App