ইবির মেধাবী ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২০, ০৯:২৭ পিএম
উলফাত আরা তিন্নি।
উলফাত আরা তিন্নি/ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেধাবী ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নির (২৪) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, বড় বোনের সাবেক স্বামীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিন্নি লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে পুলিশ বলছে , মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা আশা করছে, দ্রুতই ঘটনা প্রকাশ পাবে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) মধ্যরাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে তিন্নি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।
নিহত তিন্নির চাচা হেলাল উদ্দিন জানান, তিন্নির বড় বোন মিন্নির একই গ্রামের নুরুদ্দীনের ছেলে শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী জামিরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। সংসারে অশান্তি থাকায় প্রায় এক বছর হলো তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই জামিরুল তাঁর স্ত্রীকে আবার ঘরে নিতে চান। কিন্তু মিন্নি এতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে জামিরুল ইসলাম ওই পরিবারের ওপর অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় পরিবারটি একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছিল।
বাড়িটিতে কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় পরিবারটি একরকম জামিরুলের নির্যাতনে অসহায় হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল শেখপাড়ায় তিন্নিদের বাড়িতে লোকজন নিয়ে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। দুই ঘণ্টা পর আবারো জামিরুল ওই বাড়িতে যায় এবং তিন্নির ওপর নির্যাতন চালায়।
বড় বোন মিন্নি বলেন, বাড়ির দোতলায় তিন্নির সঙ্গে জামিরুল এমন কি আচরণ করেছে যে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তরতাজা বোনের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখলাম? তিনি অভিযোগ করে বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমার বোনের সঙ্গে খারাপ কিছু করায় সে আত্মহত্যা করতে পারে।
তিন্নির মা হালিমা বেগম জানান, আমার মেয়ে খুবই মেধাবী। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়া থেকে এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে জামিরুলের হুমকির শিকার হয় তিন্নি। আমাদের সন্দেহ তিন্নিকে পাশবিক নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (শৈলকুপা সার্কেল) আরিফুল ইসলাম জানান, তিন্নির মৃত্যুটি রহস্যজনক। তার সঙ্গে এমন কিছু করা হয়েছে যে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ডাক্তারি পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সহকারী পুলিশ সুপার জানান, তিনি অত্যান্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। একজন মেধাবী ছাত্রী এভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারে না। আমরা বিষয়টির ওপর কঠোর নজর রাখছি। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বড় বোনের সাবেক স্বামী জামিরুল নজরদারীতে রয়েছে। দোষী হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, লাশ শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শেখপাড়ার বাড়িতে দাফনের জন্য আনা হয়েছে।