×

সারাদেশ

বাবুনগরীর দাপটে কোণঠাসা আহমেদ শফীর অনুসারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪৭ এএম

হেফাজত-মাদ্রাসা-বেফাকের নেতৃত্ব দখলে অপতৎপরতা

চাপের মধ্যে আছেন হেফাজতে ইসলামের আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর অনুসারীরা। মাদ্রাসা পরিচালনা থেকে শুরু করে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে (বেফাক) তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। আহমেদ শফীর অনুসারীদের মাইনাস করেই এসব প্রতিষ্ঠানের উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। গুঞ্জন উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে চান হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার অনুসারীরা। অভিযোগ রয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতায় এসব কাজে ইন্ধন জোগাচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদ্রাসা, বেফাক ও হেফাজতে ইসলাম এই ৩ প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে কে বা কারা আসছেন, সেদিকেই সবার দৃষ্টি। এই ৩টি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এতদিন এককেন্দ্রিক থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আলাদাভাবে পরিচালিত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর গত শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী আমির কে হবেন তা কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। আল্লামা শফীর মৃত্যুতে সংগঠনের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুনগরী বলেন, প্রভাব তো কিছু পড়বেই। তার মতো মানুষ আর পাওয়া যাবে না। শফীর মৃত্যুর পর থেকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা ও হেফাজতের বিভিন্ন কর্মকা-ে শফীর অনুসারীদের কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাবুনগরীর

অনুসারীদের বিরুদ্ধে। হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসার প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী মাদ্রাসায় নেপথ্যে থেকে জামায়াতের ইন্ধনে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনে জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা জয়ী হয়। শফীর মৃত্যুর পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় বাবুনগরীসহ তার অনুসারীদের পুনর্বহাল করা হয়। শফীর আমলে মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে বাদ পড়া বাবুনগরীর অনুসারী ৪ শিক্ষককে ইতোমধ্যে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এছাড়া শফীর আমলে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে মাদ্রাসার প্রায় সব কর্মকা-ে শফীর অনুসারীদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আহমেদ শফীর কয়েকজন অনুসারী বলেন, শফী হুজুরের ইন্তেকালের পর আমাদের নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। কোনো প্রকার সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এর পেছনে অবশ্যই জুনায়েদ বাবুরগরীর ইন্ধন রয়েছে। তিনি হেফাজতে ইসলাম, কওমি মাদ্রাসা ও বেফাকের নেতৃত্ব নিজের আয়ত্তে নিতে চান। তিনিই বড় হুজুরকে মানসিক নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। ওই দিনের এমন ঘটনা না ঘটলে হয়তো বড় হুজুর আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন।

সার্বিক বিষয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর মাদ্রাসার শৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দফায় দফায় বৈঠক করছি। মাদ্রাসার ঐতিহ্য তথা শিক্ষার মান অক্ষুণ্ন রাখতে এবং সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী পরিচালনা কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে বিগত সময়ে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেয়া দক্ষ ৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্বহাল করেছেন। এর মধ্যে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া দুজনকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।

শফীর অনুসারীদের কোণঠাসা করার বিষয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, এখানে কোনো গ্রুপিং বা ভেদাভেদ নাই। কোনো পক্ষকে কোণঠাসা করা বা কোনো পক্ষকে তুলে আনার প্রশ্নই আসে না। হেফাজতের নেতৃত্ব, মাদ্রাসার দায়িত্ব, বেফাকের দায়িত্ব সবকিছুই সর্বসম্মতিক্রমেই হবে।

তিন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে কে আসছেন : এদিকে হেফাজতে ইসলামের সম্ভাব্য আমির হিসেবে ৩ জনের নাম আলোচনায় আসছে। তারা হলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী এবং ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের হেফাজতের কর্মীরা মনে করছেন, মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বা জুনায়েদ বাবুনগরী দুজনের যে কোনো একজনই হবেন হেফাজতের পরবর্তী আমির। হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক শেখ আহমদও বিবেচনায় আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। মুহিবুল্লাহ ও জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পর্কে মামা-ভাগিনা, আর নূর হোসাইন ও শেখ আহমদ দুজনই বাবুনগরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাই হেফাজতের শীর্ষ পদে যিনিই আসবেন তিনিই জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী।

এছাড়া কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং সরকার স্বীকৃত সম্মিলিত বোর্ডের প্রধান কে হবে এ নিয়েও আলোচনা চলছে জোরেশোরেই। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গঠনতান্ত্রিকভাবে বেফাকের চেয়ারম্যান যিনি হবেন, তিনিই আল-হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান হওয়ার কথা। আপাতত এই পদে আলোচনায় যাদের নাম আসছে তারা হলেন- বেফাকের বর্তমান সহসভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী। অন্যদিকে হেফাজত ও কওমি মাদ্রাসার প্রধান ঘাঁটি হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় বর্তমানে শূরা কমিটির অধিকাংশ সদস্যই জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী। এই মাদ্রাসায়ও পরবর্তী মহাপরিচালক হিসেবে বাবুনগরীর অনুসারীরা আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে মজলিসে শূরার জরুরি বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান শাইখুল হাদিস ও শিক্ষাসচিব হন। ফলে অলিখিতভাবে তিনিই হাটহাজারী মাদ্রাসাটির মূল কর্তৃত্বে চলে আসেন। এতে করে মজলিসে শূরার বেধে দেয়া সময় ৬ মাস পর প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম (মহাপরিচালক) হওয়ার পথ বাবুনগরীর পক্ষে অনেকটা সুগম হলো বলে মনে করেন কওমি অঙ্গনের নেতারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App