×

সাহিত্য

গান করাচ্ছি এই তো বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২০, ১০:২২ এএম

গান করাচ্ছি এই তো বেশি

শিশুদের নৃত্য পরিবেশনা। ফাইল ছবি।

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের স্মৃতিবিজড়িত পদ্মা, মধুমতি, কুমার নদের অববাহিকায় অবস্থিত দেশের প্রাচীন জনপদ ফরিদপুর। শান্ত, স্নিগ্ধ, মায়াবি প্রমত্ত পদ্মার বালুচর ঘিরে এর সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়ায়। শুধু তাই নয়, এখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম, সাতৈর মসজিদ, মথুরাপুর দেউল, হযরত শাহ্ ফরিদ মসজিদ, বাইশ রশি জমিদার বাড়ি, মধুখালী মথুরাপুরের দেউল আর পাতরাইল মসজিদের মতো প্রাচীন স্মৃতিবাহী স্থাপনা। তবে সে সবই আজ করোনার কুটিল হানায় ম্লান হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, ফরিদপুরে সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে প্রায় শতাধিক। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। এদের মধ্যে ৪০০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয় মাত্র ১০০ জন শিল্পীকে। বাকিদের অবস্থা করুণ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফরিদপুরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিস্থিতি অনেকটাই নাজুক। জীবনের টানাপড়েনে অনেক সংস্কৃতিকর্মী পেশা বদল করে মুদি দোকান খুলে বসেছেন, কেউ কেউ বিভিন্ন দোকানে হেল্পারির কাজও করছেন। অথচ এই দুঃসময়ে সরকারিভাবে যে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে তাতেও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন শিল্পীরা। প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই উপেক্ষিত হয়েছেন। এই বিভাজন মোটেই মেনে নেয়া যায় না। উপেক্ষিত সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা। নইলে ফরিদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন শিল্পীশূন্য হয়ে যাবে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও শিক্ষক বাদল দাশ ভোরের কাগজকে বলেন, গত সাত মাস ধরে আমার আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ। ইচ্ছে করলেই পেশাও বদল করতে পারছি না। কারণ আমি সম্পূর্ণ গানের ওপরই নির্ভরশীল একজন মানুষ। এখনো সব সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ। তার ওপর শুনছি দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। দ্বিতীয় ঢেউ আসলে একেবারে বিলীন হয়ে যাবে ফরিদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা শূন্য হয়ে যাব! সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। এর মধ্যে সাতটা সরকারি প্রোগ্রাম করেছি। কোনো সম্মানি তো দেয়নি, উল্টো ডিসি সাহেব বলেছেন, গান করাচ্ছি এটাই তো বেশি, আবার কীসের সম্মানী?

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। যারা সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জীবিকা অর্জন করতো তাদের সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সিরাজী কবির খোকন বলেন, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ এবং শিক্ষকতাবৃত্তিক সংস্কৃতিচর্চা করছে তারা চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। এ ছাড়া যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান, নাচ কিংবা তবলা বাজিয়ে আয় করত তারা আরো বিপদে আছে। তার ওপর সবাই প্রণোদনার আওতায়ও আসেনি। ফরিদপুর শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা পার্থপ্রতিম দাশ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ১০০ জনকে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়েছে, যদিও তা অপ্রতুল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App