×

জাতীয়

সংসদের কোরাম সংকটে ক্ষতি ২২ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৪৫ পিএম

পাঁচ অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৬১টি প্রতিদিন গড়ে ১৯ মিনিট কোরাম সংকট ছিল মোট কোরাম ঘণ্টা ২৬মিনিটসংকট ছিল ১৯ এমপিদের ৬১ % ব্যবসায়ী, ৫ % রাজনীতিক

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বছরের পাঁচ অধিবেশনে কোরাম সংকটের ফলে ২২ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৭টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ -টিআইবি। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের ৫টি অধিবেশন নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন পার্লামেন্ট ওয়াচে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ এক ওয়েবিনারে এটি উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম পাঁচটি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৬১টি। প্রতিদিন গড়ে ১৯ মিনিট ছিল কোরাম সংকট। মোট কোরাম সংকট ছিল ১৯ ঘণ্টা ২৬মিনিট। কোরাম সংকটের এই সময়ের আর্থিক মূল্য ২২ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৭টাকা। জাতীয় সংসদে মোট সদস্য ৩৫০। কিন্তু নূন্যতম ৬০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ না হলে সংসদের বৈঠক চালানো যায় না।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয় প্রতিটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছে ৩২ মিনিট। গত সংসদে বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছিল ৩১ মিনিট। তবে বিল পাস প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের অনাগ্রহ লক্ষণীয়। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বছরে সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটেনি বিরোধী দলের ওয়াকআউটের ঘটনাও। প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, এই সময়ে সংসদীয় কমিটিগুলোকে খুব একটা কার্যকর দেখা যায়নি। পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, এই সংসদ নিয়ম রক্ষার সংসদে পরিণত হয়েছে। এখানে পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলনাযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, অষ্টম ও নবম সংসদে সমস্যার মূল যে জায়গা সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি অগ্রহণযোগ্য ছিল। সেটি বন্ধ হয়েছে চড়া দামে। এত বেশি চড়া দামে যে মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো হয়েছে। এমপিদের ৬১ % ব্যবসায়ী, ৫% রাজনীতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদের ৬১ শতাংশ সাংসদ ব্যবসায়ী। বাকি ৩৯ শতাংশ সংসদ সদস্যের মধ্যে আইনজীবী ১৩ শতাংশ, রাজনীতিক পাঁচ শতাংশ ও অন্যান্য (শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিণী ও পরামর্শক ইত্যাদি) পেশার ২১ শতাংশ সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের লোকসভায় রাজনীতিক পেশায় আছেন ৩৯ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী আছেন ২৩ শতাংশ। দিন দিন আমাদের দেশের সংসদে ব্যবসায়ী সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম সংসদে মাত্র ১৮ শতাংশ সদস্যের পেশা ছিল ব্যবসা। ক্রমান্বয়ে এ হার বেড়ে ৬১ শতাংশে এসে দাড়িয়েছে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারতের ১৭তম লোকসভার সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২৩ শতাংশ, আইনজীবী ৪ শতাংশ এবং অন্য পেশার সদস্য রয়েছেন ৩৮ শতাংশ। সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশেøষণ করে দেখা গেছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর/তদুর্ধ্ব প্রায় ৭৭ শতাংশ। এইচএসসি সমমানের প্রায় ১২ শতাংশ, এসএসসি বা তার কম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ১১ শতাংশ সংসদ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে পুরুষ ৯২ শতাংশ ও নারী ৮ শতাংশ এবং সংরক্ষিত আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭৯ শতাংশ ও ২১ শতাংশ। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের একাংশ তাদের হলফনামায় সঠিক তথ্য (আয়ের উৎস, সম্পদের পরিমাণ, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যয়ের উৎস ইত্যাদি) দেয়নি। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল বলে প্রতিবেদনে উলেøখ করা হয়।

কার্যকর বিরোধী দল অনুপস্থিত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনের সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা রদবদলের সম্ভাবনা দূরীভূত হয়েছে। তারই প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি জাতীয় সংসদের মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদে একদলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। ফলে সংসদের মৌলিক দায়িত্ব আইন প্রণয়ন, সরকারের জবাবদিহি এবং জন প্রতিনিধিত্ব এই তিনটি ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ভূমিকা আমরা দেখতে পারছি না।

তিনি বলেন, একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে আছে জাতীয় পার্টি। তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জোটগত নির্বাচন করেছিল। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, কারণ কার্যকর বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সেটি আমাদের কাছে নেই। এবারে সংসদে যাদের প্রধান বিরোধী দল বলা হয়েছে বা উপস্থাপন করা হয়েছে তারা কিন্তু বিরোধী দলে বসবেন সেই প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচন করেন নাই। তারা ক্ষমতাসীন জোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

টিআইবি প্রতিবেদনটির পর্যবেক্ষণে বলেছে, প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে বিশেষত আইন প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা আরও জোরদার হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন মহাজোটের একটি দল নিয়ম রক্ষার প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় তাদের জোরালো ভূমিকার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App