×

সাহিত্য

দিনাজপুরে প্রকৃত শিল্পীরা প্রণোদনা পাননি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫৮ এএম

দিনাজপুরে প্রকৃত শিল্পীরা প্রণোদনা পাননি

নৃত্যশিল্পী

স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ফের তালিকা করার দাবি

ঐতিহ্যের অপূর্ব সব নিদর্শনে ভরা দিনাজপুর। উত্তর বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদ দিনাজপুর। যার পথে পথে ছড়িয়ে আছে প্রতœ সম্পদ আর আদি ঐতিহ্যের অপূর্ব সব নিদর্শন। রয়েছে উপমহাদেশের পোড়ামাটির কারুকাজ সংবলিত মন্দিরের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় কান্তজিউর মন্দির, চেহেল গাজীর মাজার, ঘোড়াঘাট দুর্গ, সুরা বা সুজা মসজিদ, সীতাকোট বৌদ্ধ বিহার, স্বপ্নপুরী, নয়াবাদ মসজিদ। এছাড়া রাজবাড়ী, রামসাগর, সীতাকোট বিহার এ রকম ইত্যকার সব প্রত্ন ঐতিহ্যে ভরপুর এক স্থান দিনাজপুর। আরো রয়েছে ২০ থেকে ২২টি নানা ভাষা ভাষি আদিবাসীর সম্মিলিত বর্ণিল সহাবস্থান। এমন সম্মিলনের মধ্যে স্বস্তি নেই শিল্প সংস্কৃতির মানুষদের মনে। করোনার হানায় সব আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, দিনাজপুরে আদিবাসী ও সমতলে সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে দু’শতাধিক। সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এদের মধ্যে ২৮০ জনের তালিকা পাঠানো হলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে মাত্র ৯২ জন শিল্পীকে। বাকিদের অবস্থা বড়ই করুণ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমপি গ্রুপ, ডিসি গ্রুপের লোকজনই তালিকা করেছে। প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে তাদেরই ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নয়। যারা প্রকৃত শিল্পীদের অনেকেই বিতাড়িত হয়েছে। উড়ে এসে জুড়ে বসারাই প্রণোদনা পেয়েছে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আবারো প্রণোদনা তালিকা করে প্রকৃত শিল্পীদের প্রণোদনা দেয়ারও দাবি জানান তারা।

প্রবীণ গণসংগীতশিল্পী সত্য ঘোষ। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে উদীচীর সঙ্গে যুক্ত। জানতে চাইলে এই শিল্পী ভোরের কাগজকে বলেন, যারা সংস্কৃতিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে তারা বেশিরভাগই বেকার জীবনযাপন করছেন। অনেকে গান ছেড়ে ওষুধের দোকান, কাপড়ের দোকানসহ নানা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে। অথচ যারা সংগীতকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, যারা চেষ্টা করছে সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সুন্দর সমাজ উপহার দিতে তারা বিতাড়িত হচ্ছে মর্মান্তিকভাবে। উড়ে এসে জুড়ে বসারাই প্রণোদনা নিয়ে যাচ্ছে হেসে খেলে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রণোদনা দেয়া হোক।

দিনাজপুর নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি নৃত্যশিল্পী রওনক আরা হক নীপা বলেন, ২৫ মার্চের পর থেকে আমার নাচের স্কুল বন্ধ। কিন্তু নিয়মিত ভাড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের অনেক নৃত্যশিল্পী বেকার হয়ে টিউশনি করছেন। অথচ আমাদের অগোচরে অনেকে প্রণোদনা পেয়েছে। এমপি গ্রুপ ও ডিসি গ্রুপের লোকজন গোপনে আমাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

কবিয়াল মালতী রানী সরকার বলেন, গানটাই আমার মূল পেশা ও নেশা। এখন পেট তো কথা মানবে না। কোথায় পাব বাঁচার অন্ন? অনন্যোপায় হয়ে অন্যজনের দোকানে শেয়ার করে কাপড়ের দোকান দিয়েছি।

কবিয়াল ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার জানান, আমার কোনো জমিজমা নেই। তারপরও গান গেয়ে রাজার হালেই চলতাম। ৬ মাস ধরে সবই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অবস্থা করুণ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চু বলেন, সব চাইতে বিপদে আছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। অধিকাংশই অস্বচ্ছল। কিন্তু চেতনার কারণে এ লাইনে আছে। যারা প্রণোদনা সহযোগিতা পাওয়ার কথা তারা অধিকাংশই পাননি। নতুন তালিকা করে তাদের প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

শিল্পী ও লেখক বাসুদেব শীল বলেন, বাড়ি ভাড়া বাকি হয়ে গেছে প্রায় ৪ মাস। দিন চলছে কাউকে বক্তব্য লিখে দিয়ে কিংবা স্টেজ সাজিয়ে দিয়ে। দিনাজপুর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান তারেক বলেন, পরিস্থিতি আগের মতো নেই। উদ্যমটা হারিয়ে গেছে। অন্য পেশায় গেলেও মন স্থির করতে পারছে না তারা। তাতে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তী মীন আরা পারভীন বলেন, যারা সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে জীবনযাপন করেন তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গ্রাম ও শহরের একই পরিস্থিতি। আমরা তাদের পাশে দাঁড়ালেও তা পর্যাপ্ত নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App