×

জাতীয়

‘লং ডিস্টেন্স’ পাঠে ছন্দপতন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:২৩ এএম

‘লং ডিস্টেন্স’ পাঠে ছন্দপতন

শিশু শিক্ষার্থীরা।

পড়াশোনায় বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটিয়েছে কোভিড-১৯। টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘লং ডিস্টেন্স’ পাঠদান চললেও পড়াশোনার ধারাবাহিকতা এবং উৎসাহ দুটোই হারিয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা। তারা যেমন মনস্তাত্ত্বিক আঘাত পেয়েছে; তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সহসা এর থেকে বেরিয়ে আসারও কোনো পথ পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অথচ এই সময়ের মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীরা পুরো বই পড়ে শেষ করে ফেলে। কিন্তু কোভিডের কারণে বই পড়া দূরে থাক, স্কুলেই যেতে পারছে না তারা।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এটা ঠিক, সারাদিন বাড়িতে থেকে শিশুরা একধরনের ট্রমার মধ্যে পড়েছে। শিশুদের সেই ট্রমা কাটানোর জন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের খবর নেয়ার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মায়ের কাছে বার্তা পাঠিয়ে বলার চেষ্টা করছি, এই সময়ে যাতে কোনো শিশুকে নির্যাতন না করা হয়, কটু কথা না বলা হয়। হয়তো সারাদেশে এই বার্তা পৌঁছাতে পারিনি। তবে ৮০ শতাংশ জায়গায় আমরা শিশুদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাঙ্গা রাখতে পেরেছি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু হতে ফেব্রুয়ারি এসে যায়। সেই হিসেবে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিটি বইয়ের মাত্র ২/৩টি অধ্যায় পড়ানো সম্ভব হয়েছে। এরপর থেকে কোভিডের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে স্ব স্ব বিদ্যালয়কে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, স্কুল যেখানে বন্ধ, পাঠদান ও পাঠগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ; সেখানে মূল্যায়নটা হবে কি করে? এছাড়া ডিসেম্বরে যদি নামকাওয়াস্তেও বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হয়- সেক্ষেত্রে বাচ্চারা কি লিখবে? কারণ বছরজুড়ে পড়াশুনা বন্ধ রয়েছে। যদিও বলা হয়েছে, অনলাইন, টেলিভিশনে শিশুদের পাঠ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই অনলাইন পাঠদানে সবাই অংশ নিতে পারেনি। ঠিক এই অবস্থায় আসন্ন ডিসেম্বরে একটি বিশেষ সিলেবাস প্রণয়ন করে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এই বিশেষ সিলেবাসে এমসিকিউ পদ্ধতিতে একেকদিন একেক ক্লাসের পরীক্ষা হবে। তাতে বাচ্চাদেরও সুবিধা হবে।

জানতে চাইলে সিলেটের বালাগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষা দেয়া ও নেয়া দুটোই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কোভিডের কারণে চলতি বছর দুটোরই ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে শিশুদের পড়াশুনার ধারাবাহিকতা যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি শিক্ষকদেরও মেধাচর্চার ক্ষতি হয়েছে। তার মতে, চলতি বছরের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী সিলেবাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আর কোনো পরীক্ষা নেয়া বা মূল্যায়ন করা যাবে না। চলতি বছর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হলে খুব তাড়াতাড়ি একটি বিশেষ সিলেবাস প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের বলতে হবে, এই এই অধ্যায়ের ওপর তোমাদের পরীক্ষা বা মূল্যায়ন করা হবে। তাহলে শিশু শিক্ষার্থীরা আবার পড়ার টেবিলে ফিরে আসবে এবং পরীক্ষা বা মূল্যায়নের জন্য তারা প্রস্তুতি নিতে পারবে। ফলে শিশুরা স্বাভাবিক হতে পারবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কোভিড-১৯ এর কারণে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির চাপে ৩ অক্টোবর বিদ্যালয় নাও খুলতে পারে। এর ফলে আরো এক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পরিধি বাড়ত পারে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার আরো ক্ষতি হবে।

ঠিক কি ক্ষতি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাভারের ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিক পাটোয়ারি ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনলাইন কিংবা সংসদ টেলিভিশনে যে পাঠদান সম্প্রচার করা হচ্ছে; তাতে কি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাতে কিছুই হচ্ছে না। কারণ এসব পাঠদানের মাধ্যমে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছেও পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে না। সাভারের গেণ্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎসাহী সদস্য সালাহউদ্দিন খান নঈম বলেন, দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই ক্ষতি পোষাতে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।

এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে- তা এখনো ঠিক না হলেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ১৩ নির্দেশনা মেনে বিদ্যালয় অফিস খোলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে মন্ত্রণালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App