×

সারাদেশ

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলে মরেও শান্তি পাবো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:৪৬ পিএম

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলে মরেও শান্তি পাবো

মোহাম্মদের পুত্র আবু তাহের

তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর বালুরমাঠ যুবশিবিরে। সম্মুখযুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি পাক সৈন্যদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গ্গবন্ধুর সাথে একাধিকবার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে নিয়ে বিস্কুট খেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর গায়ের স্পর্শ পেয়েছেন অনেকবার। এমনকি মা-বোনদের সম্ভ্রম লুটে নেয়া কয়েকজন রাজাকারকে নিজ হাতে জবাই করেছেন। তারপরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি বলে অভিযোগ করেছেন কমলনগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের নবীগঞ্জ গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র আবু তাহের।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আবু তাহের মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে চান। তার ভাষায়, তাহলে মরেও শান্তি পাবেন তিনি। আবু তাহের ১৯৭১ সালে যুদ্ধের শুরুতে মেলেটারিতে চাকরিরত আপন ভাতিজা ছেরাজল হকের সাথে দ্বীপ জেলা ভোলার নাছির মাঝি এলাকা থেকে পায়ে হেটে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে পাড়ি জমান। গায়ে কাঁদামাটি জড়িয়ে পাগলের ছদ্মবেশে কয়েকদিন হাঁটার পর ভারতের ব্যারাকপুর বালুর মাঠে পৌঁছান। সেখানকার যুবশিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলীর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন কৌশল ও ট্রেনিক নেন আবু তাহের। সেখান থেকে ফিরে জন্মস্থান ভোলায় এসে সরাসরি যোগ দেন যুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও স্বীকৃতি পাননি রণাঙ্গনের এ যোদ্ধা।

অভিযোগ রয়েছে, ভোলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জৈনক এক ব্যক্তি টাকা চেয়েছিলেন নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি ৮৬ বছর বয়সী নুইয়েপড়া আবু তাহেরের। একাত্তরে ৩৬ বছরের টগবগে যুবক আবু তাহের সদ্য বিবাহিত নববধূকে ঘরে রেখে দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। নয় মাসের যুদ্ধ শেষে মাতৃভূমি স্বাধীনতার লালসূর্য পেলেও এখনো ভাগ্যযুদ্ধে পরাজিত তিনি। গ্রামের মেঠো পথের অলিতে-গলিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আমলা বিক্রি করে কোন ভাবে সংসার চলে তার। এ বুঁড়ো বয়সে কখনো রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে দু'মুঠো আহারের ব্যবস্থা হয় তার। রোগাক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে পরা তাহেরের দু'চোখের আলো ও প্রায়টা নিভুনিভু।

এক কন্যা স্ত্রী সহ তিন সদস্য মিলে থাকেন পরের জায়গায়, কয়েকটি টিন দিয়ে একচালা একটি ঝুঁপড়িঘরে বসবাস তার। বাড়ির মালিক মানবিক বিবেচনায় বুড়ো আবু তাহেরকে পিতার সম্মানে দেখেন। কখনো কখনো চুলোতে হাঁড়ি ওঠার ব্যবস্থাও করে দেন। এভাবেই অনাহার আর অর্ধাহারে দিন কাটছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরের।

আবু তাহের জানান, ভোলা জেলার নাছির মাঝি এলাকার তৎকালিন নকুম উদ্দিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে খরকী ইউনিয়নে প্রতি ওয়ার্ড থেকে ১ জন করে ৯ ওয়ার্ডে ৯জন রাজাকারের তালিকা করা হয়। চেয়ারম্যানের করা ওই তালিকায় আবু তাহেরের নামও লেখা হয়। পরে বিষয়টি জানার পর আবু তাহের রাজাকার হতে রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যান ও তার বানানো রাজাকাররা মিলে তাকে হত্যা করার হুমকি দেয়। এমনকি প্রতিদিন নব্য রাজাকারের দলেরা বাড়িতে এসে খুঁজে যেত।

অবশেষে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আপন ভাতিজা ছেরাজলের সাথে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যরাকপুর বালুর মাঠে প্রশিক্ষণ শিবিরে চলে যান তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে ভাতিজা ছেরাজল হকসহ ৪০ জন মুক্তিবাহিনি মিলে প্রথমে ভোলার খরকী এলাকায় তাবু গেঁড়ে কমান্ডার ছেরাজলের নেতৃত্বে ভোলার বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন আবু তাহের।

নিজের কষ্টের কথা বলেতে গিয়ে ৮৬ বছর বয়সী আবু তাহের দৈনিক ভোরের কাগজকে বলেন, ৭১-এ যুদ্ধ করেছি কিসের জন্য? আমলা বিক্রি করার জন্য? রিকশা-ভ্যান ঠেলা চালানের জন্য? আমার এ বয়স কি আমলা বিক্রি করার বয়স!’

আবু তাহের আরো বলেন, আমার বয়স ৮৬ বছর আর কতো বয়স হলে সরকার আমাকে একটা বয়স্কভাতার কার্ড করে দিবে! একটা ভিজিডি কার্ড এমনকি ১০ টাকা মূল্যের চাউলের কার্ড পর্যন্ত আমার ভাগ্যে জুটলো না। এজন্যই কি এতো কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করলাম! এটাই কি প্রতিদান?

কমলনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিক উদ্দীন বলেন, আবু তাহের একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে ট্রেনিং ও যুদ্ধ করেছে। অথচ তার তালিকাভুক্ত হতে না পারাটা খুবই কষ্টদায়ক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App