×

অর্থনীতি

উল্টোপথে রাজস্ব আয়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:১৪ এএম

উল্টোপথে রাজস্ব আয়!

রাজস্ব আয়।

করোনা মহামারির মধ্যেই চলতি অর্থবছরে বিশাল বাজেট ঘোষণা করে সরকার। বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও আকাশচুম্বী। গত ২ মাসে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ১৬২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার এ মহামারিতে ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এখন করোনার কারণে চলমান অর্থনীতি থেকেও কাক্সিক্ষত কর আদায় সম্ভব নয়। উপরন্তু কিছু খাতে করপোরেট করে ছাড় দিতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বড় করদাতাদের কঠোর নজরদারিতে আনার পাশাপাশি করজাল বিস্তৃত করতে হবে।

জানা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যেই গত জুনে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বড় বাজেট ঘোষণা করে সরকার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহিভর্‚ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত আয় ধরা হয় ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। করোনা ভাইরাস মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে (জুলাই-আগস্ট) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ ২ মাসে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ১৬২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেননা গত অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাই অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এবার যোগ হয়েছে মহামারি করোনা। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা সংকটের মধ্যে এত বড় বাজেটের অর্থ সংস্থান হবে কোত্থেকে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেটে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। করোনার এ মহামারিতে এ রাজস্ব টার্গেট মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ রাজস্বের বড় খাতগুলো হলোÑ ভ্যাট, আমদানি-রপ্তানি, ব্যক্তিকর আদায়। মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে না, কেনাকাটাও কমে গেছে। ফলে ভ্যাট আর আগের মতো আসবে না। আমদানি-রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে, সহসা স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। আর ধনিক শ্রেণি বা বিদ্যমান করদাতারা যদি আয় না বাড়াতে পারেন, তাহলে কর দেবেন কোথা থেকে? তিনি বলেন, করোনা মহামারির আগেও দেখা গেছে, প্রতি বছরই যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আমাদের রাজস্ব বাড়ানোর দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত। কিন্তু রাজস্ব বাড়ানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনাÑ সে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। সুতরাং আনুপাতিক হারে আমাদের দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। আমার হিসাবে, নেপালের চেয়েও নিচে। সুতরাং আমাদের রাজস্ব বাড়াতে চেষ্টা করতে হবে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদের মতে, এনবিআরের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ করজাল বিস্তৃত করা হয়নি। তিনি বলেন, কর জিডিপির অনুপাতে কোনো উন্নতি নেই। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে; কিন্তু সে তুলনায় কর আসছে না। বড় প্রকল্পে কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে যারা বড় করদাতা, তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এরাই আবার ব্যাংকের খেলাপি হয়েছেন। এখন বিভিন্ন জায়গায় কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে, যারা কখনোই কর দেয়নি। অর্থনীতিতে বড় অঙ্কের অর্থ করের বাইরে রয়ে গেছে। এদের করের আওতায় আনতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা কঠিন। এখন করোনার কারণে চলমান অর্থনীতি থেকেও কাক্সিক্ষত কর আদায় সম্ভব নয়। উপরন্তু কিছু খাতে করপোরেট করে ছাড় দিতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বড় করদাতাদের কঠোর নজরদারিতে আনার পাশাপাশি করজাল বিস্তৃত করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১২ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৩৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট সময়ে ভ্যাট থেকে ১৫ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১০ হাজার ২০ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ১৫ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭৬ টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল। এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, এ ২ মাসে ভ্যাট থেকে ১১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৮ হাজার ৮০২ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ১০ হাজার ৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরেও মূল বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App