×

পুরনো খবর

লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করলেন গণধর্ষণের শিকার নববধূ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০২ পিএম

লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করলেন গণধর্ষণের শিকার নববধূ

এমসি কলেজের ছাত্রাবাস

সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে মারধর করার পর ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিলেটের বিচারিক হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক শারমিন খানম নীলার এজলাসে নির্যাতিত ওই নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারার জবানবন্দিতে বর্ণনা করলেন ওই দিন রাতে যা ঘটে ছিল তাদের সঙ্গে।

প্রায় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় ধরে তার ওপর চলা নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনায় জানানো হয়, মাত্র কয়েক মাসে আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে তিনি শুক্রবার (ঘটনার দিন) বিকেলে এমসি কলেজে যান। ক্যাম্পাসের নানা জায়গায় ঘুরার পর সন্ধ্যার দিকে পেছন দিক দিয়ে এমসি কলেজ থেকে বের হতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ক্যাম্পাসের পেছনে অবস্থান করা ধর্ষকরা তাদের ঘিরে ফেলেন। পরে অস্ত্রের মুখে স্বর্ণের চেইন, টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। এসময় তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল ধর্ষকরা।

সবকিছু ছিনিয়ে নেয়ার পর একজন বলে ওঠে ‘দেখ মেয়েটি তো সুন্দর’। এ কথা বলার পর অন্যরাও তার দিকে ফিরে ঘুরে এসে জাপটে ধরে ওই নারীকে। এতে ওই বধূর স্বামী প্রতিবাদ করলে ধর্ষকরা তার স্বামীকে মারধর করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তার স্বামী পিছু পিছু ছাত্রাবাসে গিয়েও তাদের বাধা দেন। এতে ধর্ষকরা তার স্বামীকে মারধর করে ছাত্রাবাসের ভেতরেই বেঁধে রাখে।

এরপর পরই শুরু হয় ওই গৃহবধূর ওপর লোমহর্ষক গণধর্ষণের মতো ঘটনা। সম্ভ্রম রক্ষার্থে হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা হলো না ওই নারীর। এ সময় চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। ছাত্রাবাসের দ্বিতীয়তলা থেকে কয়েকজন যুবক নিচে নামতে চাইলে তাদের আটকে দেয়া হয়। পরে পুলিশ গেলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।

[caption id="attachment_244351" align="aligncenter" width="728"] এই সেই এমসি কলেজের ছাত্রাবাস।[/caption]

শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বাবলাকে নিয়ে শাহপরান থানার ওসি ধর্ষিতা নারী ও তার স্বামীকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে সেখানে আরও কয়েকজন ছাত্রনেতা যান। উদ্ধারের পর ওই নারীকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, গাড়িতে ওঠার পর পেছন থেকে একজন বলেন এই দাঁড়াও। তখন স্ত্রীকে বললাম, গাড়ির গ্লাসটা একটু নামাও কথা বলব। তারা বলেন না নেমে আস। গাড়ি থেকে নামার পর তারা দু’জন (সাইফুর ও অর্জুন) জিজ্ঞেস করে গাড়িতে কে? বললাম আমার স্ত্রী। এ কথা বলতেই তারা গালি দিয়ে বলে, তুই দালালির ব্যবসা করছ বলেই থাপ্পড় মারে আমাকে।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে আমার স্বামীকে মারছ কেন? চিল্লাচিল্লি শুরু করলে তারা বলে গাড়িতে ওঠ তোদের থানায় নিয়ে যাব। ভয় দেখিয়ে তারা তিন-চারজন আমার গাড়িতে ওঠে। আমাকে নিয়ে তারা পেছনে বসে আর স্ত্রীকে সামনে বসিয়ে তাদের একজন গাড়ি চালায়।

বললাম ঠিক আছে আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে যাও, কোনো সমস্যা নেই। তারা ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তার কালভার্টে গিয়ে বলে তুই মানিব্যাগ বের কর। টাকা দে ৫০ হাজার। বললাম আমার কাছেতো এত টাকা নেই। দুই হাজার টাকা আছে নিয়ে নাও। এরপর আমাকে মারধর করে। স্ত্রীর স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাদের একজন আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন ধর্ষিতার স্বামী।

স্ত্রীর চিৎকার শুনে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। মাথায় কাজ করছিল না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App