×

সারাদেশ

কারখানার বর্জ্য লোকালয়ে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:৩২ পিএম

কারখানার বর্জ্য লোকালয়ে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

ফাইল ছবি

কারখানার বর্জ্য লোকালয়ে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য লোকালয়ে

কারখানার বর্জ্য লোকালয়ে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

বিষাক্ত বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ফসল।

কারখানার বর্জ্য লোকালয়ে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

অ্যামোনিয়া গ্যাসে পুড়ে গেছে ঘাস।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা। কারখানাটির ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নজর নেই কর্তৃপক্ষের। ড্রেনগুলো ময়লা আর্বজনায় ভরে গেছে। যত্রতত্রভাবে ফেলে রাখা সার পচে ও অন্যান্য বিষাক্ত বর্জ্য ড্রেন দিয়ে নিদিষ্ট স্থানে না গিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা ছড়িয়ে পড়ছে।

এছাড়া প্রবেশ করছে মাছ চাষের পুকুর, ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘরে। বর্জ্যের দূষিত পানির কারণে মরছে পুকুর ও বিলের মাছ, খামারের হাঁস-মুরগী, নষ্ট হচ্ছে ফসল, মরছে গাছ-পালা। এদিকে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় চরম ঝুঁকিতে আছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সার কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম যমুনা সার কারখানা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও অ্যামোনিয়া গ্যাস সরাসরি বাতাস, মাটি ও পানিতে ছাড়া হয়। এতে কারখানার পার্শ্ববর্তী বিল ও পুকুরগুলোতে মাছ প্রায়ই গণহারে মারা য়ায়। এছাড়া জমির ফসল ও গাছপালা ক্ষয়ক্ষতিসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ নিয়মিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে।

[caption id="attachment_244398" align="aligncenter" width="700"] যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য লোকালয়ে। ছবি: প্রতিনিধি[/caption]

এদিকে কারখানার বাফার গুদামের হাজার হাজার মেট্রিক টন সার নির্ধারিত গুদামে সংরক্ষণ না করে খোলা আকাশের নিচে জমা করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে এবং তা বিভিন্ন বিলে ও পুকুরের পানিতে মিশে সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিকার করছে না। কারখানার অন্যান্য বিষাক্ত বর্জ্য ড্রেন দিয়ে নিদিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। নবনির্মিত ড্রেনগুলোতে ময়লা আবর্জনা ও মাটি পড়ে ভরাট হওয়ার কারণে কারখানার আশেপাশের বিভিন্ন পুকুর, বাড়ী-ঘর এমনকি সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি-ভুয়াপুর প্রধান সড়কের উপর দিয়ে বইছে এই বিষাক্ত ও দূষিত পানি। প্রতি বছরই কান্দার পাড়া, পাখিমারা, ঢুরিয়ার ভিটা, চেচিয়াবাধাসহ একাধিক গ্রামের বিভিন্ন মৎস্য চাষ প্রকল্পের মাছ মরে ও ফসলি জমির ফসল নষ্ট হয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার সহায়তা চেয়ে আবেদন করেও কোনো সহায়তা পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা।

[caption id="attachment_244399" align="aligncenter" width="700"]
বিষাক্ত বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ফসল।[/caption]

চরপাড়া গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, আমার ৩ বিঘা ফসলি জমিতে আমি চাষ করতে পারি না। সার কারখানার পচা পানি কালভাট দিয়ে আমার জমিতে এসে পড়ে। ফলে ওই জমি কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। শরীরে ওই পানি লাগলেই লালচে দাগ দেখা দেয়, জ্বালাপোড়া করে ও ঘা হয়ে যায়।

কান্দারপাড়া গ্রামের মাছ চাষি মতিয়র রহমান বলেন, আমার ২ বিঘা জমিতে পুকুর করে দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ কয়েক মাস আগে ছেড়ে ছিলাম। মাছগুলো বেশ বড় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সারকারখানার বর্জ্যের পানি পুকুরে আসার কারণে প্রায় সব মাছ মরে গেছে। প্রতিদিনই মাছ মরে ভেসে উঠছে। সার কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে বারবার আবেদন করেছি। তাতে কোন লাভ হয়নি।

[caption id="attachment_244400" align="aligncenter" width="700"] অ্যামোনিয়া গ্যাসে পুড়ে গেছে ঘাস।[/caption]

তিতাস মোড়ের পারুল বেগম বলেন, আমি গরীব মানুষ, আগে বিভিন্ন স্থান থেকে শাক তুলে খেতাম কিন্তু এখন সেটাও পারি না। কোথাও কোন শাক নেই, সব মরে গেছে। এই কারখানার বিষাক্ত পানির কারণে আমাদের মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কোন পুকুর বিলে মাছ নেই, সব মরে যায়। পানি শরীরে লাগলে সেখানে ঘা হয়ে যায়।

এ বিষয়ে যমুনা সারকারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুদীপ মজুমদার বলেন, এই বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ৩ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App