×

মুক্তচিন্তা

ধর্ষণের ভয়াবহতা ও শিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৯ পিএম

বাংলাদেশে এখন বহুল আলোচিত ঘটনার একটি হলো ধর্ষণ। পত্র-পত্রিকা হাতে নিলেই প্রথমে চোখে পড়ে ধর্ষণের রোমহর্ষক ঘটনা। ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। নারীর স্বাধীনতা বাস্তবায়ন হলেও নারীর নিরাপত্তা বিশ শতাব্দীতেও প্রশ্নের মুখে। বর্তমান বিশ্বে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আগে ধর্ষণ করা হতো গোপনে, এখন ধর্ষণ হয় প্রকাশ্যে দলবেঁধে পালাক্রমে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এসব করেও ধর্ষণকারীরা ক্ষান্ত হচ্ছে না। তারা ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে আপলোড দিচ্ছে। যা আমাদের ন্যূনতম চক্ষুলজ্জাকেও হার মানায়। এ দেশে রাস্তায় পাগলি ধর্ষিত হয়, চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অফিসে চাকরিপ্রার্থী ধর্ষিত হয়, রেলওয়ে থানার ভেতর নারীকে আটকে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়, রাতের অন্ধকারে ঘরের বেড়া কেটে ধর্ষণ করা হয়, স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। গত শুক্রবার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ৬-৭ জন নেতাকর্মী। এরপর দুজনকে মারধর করা হয়। একই সঙ্গে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে তারা। খবর পেয়ে রাতে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে পুলিশ। আজ আমাদের যুবসমাজের বিবেক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) সারাদেশ থেকে গড়ে প্রতিদিনই গড়ে চার-পাঁচজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। আর প্রতি মাসে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় দেড় থেকে ২০০-তে। এছাড়া দেশের অন্যান্য হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে যারা চিকিৎসা নেন, তাদের প্রকৃত কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। আবার অনেকে চিকিৎসাও নিতে আসেন না। সুতরাং এমন অনেক ঘটনা অপ্রকাশিতই রয়ে যায় শুধুমাত্র ‘সামাজিক লজ্জার’ ভয়ে। আগে ধর্ষণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের বয়স ১৫-২০ বছর হলেও বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্তের পরিধি আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ধর্ষণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের বয়স ৩-২০ বছর। অর্থাৎ নরপশুদের হাত থেকে কেউ আর নিরাপদ নয়। মেয়ে মাত্রই যেন ভোগের সামগ্রী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৫৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাস্তা থেকে অপহরণ করে গাড়ির মধ্যে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলা রয়েছে অন্তত ৫০ ভাগ। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ধর্ষণ একটি মানসিক বিকৃতি। একজন মানুষের মনুষ্যত্ব যখন শূন্যের কোঠায় চলে আসে তখনই সে ধর্ষণ নামক একটি পৈশাচিক অপরাধ করে। ডয়েচে ভেলের তথ্যানুযায়ী, বিদেশি সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে ধর্ষণের হার প্রতি লাখে ১০ জন এবং সমগ্র বিশ্বে আমাদের অবস্থান ৪০তম। নারী এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারী নিরাপদে নেই ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, এমনকি কর্মক্ষেত্রেÑ সব জায়গায়ই হায়েনাদের শিকার হচ্ছে নারী অথচ এই দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, স্পিকার একজন নারী, বিরোধী দলের প্রধানসহ অনেকেই আজ গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন; কিন্তু এত কিছুর পরেও দুঃখের বিষয় নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ধর্ষকের নামে মামলা হয় ঠিক কিন্তু বিচার ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। অপরাধী শাস্তি না পেলে সে বারবার অপরাধমূলক কাজ করে, তাতে অপরাধ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে অন্যরা অপরাধে জড়াতে উৎসাহিত হয়। তাই ধর্ষণকারীকে বিচরের মাধ্যমে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে অন্যরা ভবিষ্যতে এমনটি করার সাহস না পায়। ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন এবং নীতি-নৈতিকতার অভাবে বিপথগামী হচ্ছে যুবসমাজ। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্নো ছবির ছড়াছড়ি, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পরিবার ও সমাজের অস্থিরতা দায়ী এক্ষেত্রে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়, প্রচুর অবৈধ অর্থের দাম্ভিকতা এবং প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতার দাপটেই বেপরোয়া ধর্ষণকারীরা। ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন এবং নীতি-নৈতিকতার অভাবে আজ যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন বলে মনে হয় তাহলো সবার মাঝে নৈতিকতাবোধ জাগরণ। ইসলামসহ কোনো ধর্মেই ধর্ষণের মতো কাজকে উৎসাহিত করা হয়নি। সুতরাং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ওপর প্রবল গুরুত্ব দেয়া উচিত। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সৃষ্টিই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা রাখতে। শিক্ষার্থী, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App