×

সারাদেশ

মান্দায় আবারও বন্যা, পাউবোর গাফিলতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৩৩ পিএম

মান্দায় আবারও বন্যা, পাউবোর গাফিলতি

মেরামত করা হয়নি ভাঙনস্থানগুলো।

গত কয়েকদিনের একটানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনস্থানগুলো সময়মত মেরামত না করায় তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙনস্থানগুলো মেরামতের আশ্বাস দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু পাউবোর গাফিলতি ও ঠিকাদারের অবহেলার কারণে সময়মত এসব ভাঙনস্থান মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

কৃষকদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভরসায় মাঠে মাঠে দ্বিতীয় দফায় আমান ধানের চারা রোপণ করেছিলেন তারা। বাড়তি দামে চারা কিনে রোপণ কাজে তাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। কিন্তু বন্যার পানিতে ক্ষেতগুলো তলিয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।

স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর ডান তীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিনটি ভাঙনস্থান দিয়ে হু-হু করে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। ফলে তৃতীয়বারের মত বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর, নুরুল্লাবাদ ও কশব ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ।

মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পার নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আক্কাস প্রামানিক জানান, পাউবো ভাঙনস্থান মেরামত শুরু করায় একবুক আশা নিয়ে দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। বাড়তি দামে চারা কিনে রোপণ কাজে তার ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার টাকা। একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের চার বিঘা জমিতে ১৭ হাজার ও গোলাম মোস্তফার তিন বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারশিমলা গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসান ও নহলা কালুপাড়া গ্রামের আজিজার রহমানের রোপণ কাজে একই ধরণের ব্যয় হয়েছে।

মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম গোলাম আজম বলেন, ‘গত জুলাই মাসের বাঁধভাঙা পানিতে প্রায় ২০ দিন ধরে তিন ইউনিয়নের অন্তত: ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী ছিল। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ফসলের মাঠগুলোতে কৃষকেরা আমনের চারা রোপন করেন। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার থেকে নুরুল্লাবাদ, জোকাহাট ও চকরামপুর এলাকায় বাঁধের ভাঙনস্থান দিয়ে আবারও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে সদ্য লাগানো আমন চারা ডুবে যাওয়ায় আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।’

কশব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙনস্থানে এক মাস আগে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মোরামতের কাজ শুরু করে। কিন্তু সেখানে শ্যালো মেশিন চালিত দুটি ছোট ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে কাজ করতে দেখা যায়। ড্রেজারের পাশাপাশি ভেকু মেশিন (এস্কেভেটর মেশিন) ও শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হলে দ্রুত ভাঙনস্থানগুলো মেরামত করা যেত। তাহলে এ অঞ্চলের মানুষকে আর বন্যার পানিতে ভাসতে হত না।’

বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ও ঠিকাদারের অবহেলার কারণে এ অঞ্চলের মানুষকে তৃতীয়বারের মত বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে আমান ধানের ক্ষেত। পাউবোর আশ্বাসে মাঠে ধানের চারা রোপণ করে কৃষকরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, ‘ভাঙনস্থান মেরামতের জন্য তার দপ্তর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেরামত করে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। পাউবোর আশ্বাস পেয়ে দুর্গত এলাকার কৃষকদের মাঠে আমন ধানের চারা রোপণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়মত ভাঙনস্থান মেরামত না হওয়ায় বন্যার পানিতে ওইসব এলাকায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা আবারও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেন।’

তবে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান। তিনি বলেন, তৃতীয় দফার বন্যা একটু আগাম হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে ভাঙনস্থানগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App