×

মুক্তচিন্তা

চীনের ভয়ে মালাইটা স্বাধীনতা চায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:২৫ পিএম

চীন মনে করেছে এবং সলোমন আইল্যান্ডস সরকারও মনে করছে মালাইটার স্বাধীনতার দাবি উস্কে দিচ্ছে তাইওয়ান, তার উদ্দেশ্য একদিকে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দেয়া, অন্যদিকে একটি নির্ভরযোগ্য মৈত্রী মালাইটাকে কাছে পাওয়া। কিন্তু বেসামরিক কৌশল ও অর্থনীতি প্রভাবান্বিত কূটনীতির কারণে নির্ভরযোগ্য মিত্ররা যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সে শিক্ষা তাইওয়ানের হয়েছে। কাজেই যে কোনো দেশেরই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের চেয়ে বন্ধুত্বের কৌশলটাই রপ্ত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘চীনের ভয়ে পালাও মার্কিন সামরিক ঘাঁটি চায়’ লেখাটির রেশ না কাটতেই নতুন চৈনিক যন্ত্রণায় পড়েছে স্বাধীন দেশ সলোমন আইল্যান্ডস। ‘হোয়াইট হাউসের গ্লানি’ ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে শুরুতেই চিহ্নিত করেছেন উহান ভাইরাস। তাৎক্ষণিক নামায়নের একটি মন্দ-মেধা ট্রাম্পের রয়েছে, এটা মানতেই হবে। যে চৈনিক যন্ত্রণার কথা বলেছি তিনি খুব সহজে একটি নামে চিহ্নিত করতেন, নামটা যুৎসই মালাইটার আগে কিংবা পেছনে লেগে যেত। ভিন্ন দেশের মাটিতে কেবল খেয়াল চরিতার্থ করতে যুক্তরাষ্ট্র ৮০ বছর ধরে নিজের সন্তান বলি দিয়ে লড়াইয়ের অজুহাত সৃষ্টি করে আরো সন্তান বলি দেয়ার পথ যেভাবে উন্মুক্ত করে, আর্থিক শক্তিতে স্ফিত চীনও কি সেই সবক নিয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে হয়তো বেশি সময় লাগবে না।

তাইওয়ানের সঙ্গে সদ্ভাব রাখার শাস্তি ছোট-বড় অনেক দেশই পেয়েছে, বাধ্য হয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে আড়ি দিয়ে ঝকঝকে দাঁত দেখিয়ে চীনের সঙ্গে ভাব নিয়েছে। গত ৫০ বছরে চীন তাইওয়ানের অন্তত ৫৫টি বন্ধুরাষ্ট্রকে ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং অন্তত আরো ৫৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের তাইওয়ানের বন্ধু হওয়ার পথে ভয়ঙ্কর কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ঙ্কর নিক্সন-নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্র যেদিন তাইওয়ান থেকে মুখ ফিরিয়ে চীনা সাম্যবাদের জল মুখে তুলে নিল স্বল্পশক্তির দেশগুলোর স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখা মুশকিলই হলো।একটি দেশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। ছয়টি খানিকটা বড় দ্বীপ এবং ৯০০ ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটির ভূ-ভাগ ২৮.৪০০ বর্গমাইল। মাঝখানের দ্বীপটির নাম মালাইটা, দৈর্ঘ্যে ১৬৪ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩৭ কিলোমিটার (সর্বোচ্চ প্রশস্ত এলাকায়)।

১৯৭৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন পিটার কেনিকেনারিয়া। তিনি মালাইটান হওয়াতে শুরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধতে পারেনি। তারই হাতে সলোমন আইল্যান্ডস ইউনাইটেড পার্টি সংগঠিত হয়। স্বাধীনতাকালীন নেতৃত্বও তার কাছে। কিন্তু দেশের বৃহত্তম দ্বীপ গুডালক্যানেলের রাজনৈতিক বিরোধিতায় তাকে ক্ষমতাও হারাতে হয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর মতো একজন গভর্নর জেনারেল ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছে তবে কালক্রমে পদটি আলঙ্কারিক হয়ে পড়েছে।

চীন থেকে সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে অবস্থান করার পরও চীনের ক্রমাগত অর্থ-শক্তি বৃদ্ধি অন্যান্য শক্তিকেও প্রণোদিত করেছে। চীন ক্ষমতা সম্প্রসারণের প্রধান মাধ্যম হিসেবে সাগর ও মহাসাগরকেই বেছে নিয়েছে। ধর্মযাজকরা এক সময় আফ্রিকার অশিক্ষিত নিরন্ন মানুষের হাতে বাইবেল ধরিয়ে দিয়ে যেমন অন্য হাতে ঔপনিবেশিকরণের দড়ি টানতেন চীনও সে পথ ধরেছে। সেধেই উন্নয়ন সহায়তার অর্থ দেয়। দিতে দিতে এক সময় হয়তো কাবুলিওয়ালার মতো আচরণ শুরু করবে। বাণিজ্যের ভিত্তি বাড়ানো আর সমরশক্তি সম্প্রসারণ বরাবর সমান্তরালেই চলে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব কুৎসিভাবে এ চেহারাটা দেখিয়েছে। মূল লক্ষ্য সম্প্রসারণ হলেও চীন কদর্য চেহারাটি ঢেকে রাখতে পেরেছে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।১৯৮৩ সালে এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটি তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়ে তার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে সলোমন দ্বীপপুঞ্জে ‘কস্ট-বেনেফিট অ্যানালাইসিস’ করেই একদা তাইওয়ানকে দেয়া স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেয়। এক চীন নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রিপাবলিক অব চায়না থেকে সরে এসে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না অর্থাৎ বেইজিংকে স্বীকৃতি দেয়। বিনিময়ে কী পেয়েছে এবং কী পাবে- এ নিয়ে অনুমানের ঢেউ খেলতে থাকে। মনোক্ষুণ্ণ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সলোমন দ্বীপপুঞ্জ থেকে তার দেশের দূতাবাস গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন এবং বলিষ্ঠ কণ্ঠেই বলেন, টাকা দিয়ে কেনা আনুগত্যে চীনের প্রতি অন্য দেশের ভালোবাসা প্রকাশিত হয় না, আতঙ্ক প্রকাশিত হয়। আর তাতে তাইওয়ান বিচলিত নয়।

ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ভয়েই হোক, কি তার সম্পদের ছিটেফোঁটায় প্রলুব্ধ হয়ে হোক আকাশপথে বেইজিং থেকে ৭ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার দূরের সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ভেতরেই স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে। আর করোনাকালের সংকট কেবল পর্দাই সরায়নি, আন্দোলনকে আরো চাঙ্গা করে তুলেছে।

কথা ছিল সলোমন আইল্যান্ড এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ চীনে আটকে পড়া দেশবাসীকে ফিরিয়ে আনবে রাজধানী শহর হোনিয়ারাতে। ৩ সেপ্টেম্বর এই ফ্লাইট অবতরণ করার আগে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ল- এর পর কী হবে! অত্যন্ত সুরক্ষিত এই দেশটিতে গত ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত একটি কোভিড-১৯ কেসও শনাক্ত হয়নি। সংক্রমণ ঠেকাতে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, আকাশপথ এবং সমুদ্রপথ সিল করে দিয়েছে। এই অবস্থায় দেশের ভেতর শোর উঠল সলোমন দ্বীপপুঞ্জকে আর করোনা ভাইরাসমুক্ত রাখা গেল না। চীন ছিল করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্রভূমি- এটা সত্য তারা নিয়ন্ত্রণে, আমেরিকার মতো ব্যর্থ নয়, কিন্তু তারপর মাঝে মাঝেই নতুন সংক্রমণের খবরও আসছে। আশঙ্কা প্রকাশ করা হলো উড়োজাহাজে যারা ফিরে আসছেন তাদের মধ্যে একজন করোনা ভাইরাসবাহী থাকলেও তা উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, আর তারা যখন দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়বেন সলোমন আইল্যান্ড পরিণত হবে মৃত্যুপুরীতে।

স্মরণ রাখা ভালো বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এসেছে চীন ও ইতালি থেকেই, উড়োজাহাজে। আশঙ্কাতে বাড়াবাড়ি ছিল, কিছু সত্যও থাকার কথা। দেখা গেল ১০৪ জন যাত্রীর মাল ২৩ জন সলোমন নাগরিক আর বাকি সবাই চাইনিজ, দ্বীপজুড়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। এই উড়োজাহাড়ের সব যাত্রী দেশের ৭ লাখ মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য নয়। এই দাবিটি সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ মালাইটা থেকে সজোরে উত্থাপিত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মানাসে সোগাভারে সে দাবি কানে নেননি, কোনো যাত্রী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে গোয়াংজু থেকে উড়োজাহাজে আরোহণই করতে পারতেন না, এ অজুহাতে সবাইকেই এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে।

আসলে এটা উপলক্ষ। মালাইটার শাসক ড্যানিয়েল সুইদানি মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর চীনের সঙ্গে যোগসাজশ যতটা না রাষ্ট্রের প্রয়োজন, ব্যক্তি স্বার্থে তার চেয়ে বেশি। তিনি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশের দরজা খুলে দেয়ায় চীনা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে দেশের অর্থনীতি। অধিকন্তু এতদিন যে তাইওয়ান সহায়তা দিয়ে দেশটিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে, চীনের দিকে ঝুঁকে তাইওয়ানের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। সুতরাং ‘মালাইটার জনগণের জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ সময় তারা সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অংশ হয়ে থাকবে না, স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে অচিরে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

ড্যানিয়েল সুইদানি চীন ও চীনের ব্যবসায়ীমুক্ত মালাইটা চান, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মনে করেন সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী স্বৈরাচার। একই সঙ্গে এটাও সত্য, চীনের কারণেই দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতিতে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রবেশ করেছে, প্রধানমন্ত্রী বলছেন চীনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক সমমর্যাদার- ‘অন ইকুয়াল টার্মস’ আর মালাইটা থেকে অভিযোগ উঠছে যে চীন এত শক্তিশালী যে তার সঙ্গে সমমর্যাদার সম্পর্ক হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশই চীনের কাছে ইজারা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। চীনা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের জন্য বড় বড় ভূখণ্ড প্রদান দেশ বেচে দেয়ার প্রস্তুতির বড় আলামত।

১৯৮৩ সালের পর তাইওয়ানও এই দ্বীপপুঞ্জে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এবং রাজনীতিবিদের যথেষ্ট টাকাকড়ি প্রদান করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি পর্যবেক্ষক অধ্যাপক ক্লাইভ মুর বলেছেন, চীন যখন এ অঞ্চলে তার ‘চেকবুক ডিপ্লোম্যাসি’ জোরদার করল, দেশটি অনেকদিন প্রলোভনমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছে, কিন্তু চীনের নিঃশব্দ হুমকিতে এক সময় ফাঁদে পড়তেই হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মানাসে সোগাভারের সামনে কোনো বিকল্প ছিল না।

আমেরিকা যত হুঙ্কারই দিক আসলে তারা চীনের কতটা প্রতিপক্ষ এ নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো সন্দিহান। ২০২৩ সালে প্যাসিফিক গেমস অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছিল সলোমন দ্বীপপুঞ্জ আর সেখানে আধুনিক স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিল তাইওয়ান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আনুগত্য পরিবর্তনে এসব নির্মাণ এবং প্যাসিফিক গেমস অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সলোমন দীপপুঞ্জের অর্থনীতি এখন সম্পূর্ণ চীননির্ভর। দেশের রপ্তানির সিংহভাগই চীনের বন্দরে পৌঁছে। কাজেই মালাইটা যে ঝুঁকি নিতে প্ররোচিত করছে তা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনবিদ্রোহ শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এর মধ্যে চীনও স্থানীয় অসন্তোষ প্রশমনে ১০ হাজার আসনের স্টেডিয়াম নির্মাণে হাত দিয়েছে। স্টেডিয়ামটি হচ্ছে মালইটাতে, সে ক্ষেত্রে চীনের বিরোধিতা তাদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ২০১৯ যখন তাইওয়ান থেকে আনুগত্য প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী চীনমুখী হলেন তার বিরুদ্ধে মালাইটাতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

সুইদানির গণভোটের ডাকÑ মালাইটা প্রদেশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জ থেকে স্বাধীন হতে চায় কিনা, এটি সরকার নাকচ করে দিলেও দাবিটি অনেক পুরনো। তারা মনে করে শোষণের শিকার হতে হতে মালইটা প্রান্তবর্তী হয়ে পড়েছে। ১৯৯৮ সালে দীপপুঞ্জটি এতটাই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে অস্থিতিশীলতা ঠেকায়। শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে ২০১৭ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সৈন্যবাহিনী সেখানে অবস্থান করে। ছোট দেশ হলেও প্রায় ৭০টি ভাষায় সেখানকার লোকজন কথা বলে। গোত্রভিত্তিক বিরোধিতা শত বছরের। উনবিংশ শতকে যখন দ্বীপপুঞ্জটি ব্রিটিশ প্রটেকরেটে পরিণত হলো ব্রিটেন বিভেদ না ঘুচিয়ে অনেকটা গায়ের জোরে একীভূত করল।

মালাইটা সলোমন দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ কিন্তু লোকসংখ্যা দেশের এক-তৃতীয়াংশ। মালাইটার ভৌগোলিক অবস্থান দ্বীপপুঞ্জের মাঝখানে। যদি সত্যিই মালাইটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবিভর্‚ত হয় ভৌগোলিকভাবে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বাকি অংশ অত্যন্ত ভঙ্গুর ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। আবার মালাইটা তেমন কোনো সম্পদ ভিত্তিও নেই, যা অন্য দেশকে আকৃষ্ট করবে। অর্থনীতির চরিত্র হবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার কৃষি অর্থনীতি। সে ক্ষেত্রে চীন যদি কাঠখড়ি ও কৃষিপণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয় তাতে নতুন দেশের টিকে থাকা মুশকিল হবে। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে তাইওয়ান নিশ্চয়ই মিত্রের অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। যে ক্ষেত্রে তাইওয়ানবান্ধব মালাইটা সূচনাকালীন ধাক্কা সামলাতে পারবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ের জন্যই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠা চীনের কবজা চলে আসতে হতে পারে, যেমন করে এসেছে সলোমন আইল্যান্ডসসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় আরো দেশ।

চীন মনে করেছে এবং সলোমন আইল্যান্ডস সরকারও মনে করছে মালাইটার স্বাধীনতার দাবি উস্কে দিচ্ছে তাইওয়ান, তার উদ্দেশ্য একদিকে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দেয়া, অন্যদিকে একটি নির্ভরযোগ্য মৈত্রী মালাইটাকে কাছে পাওয়া। কিন্তু বেসামরিক কৌশল ও অর্থনীতি প্রভাবান্বিত ক‚টনীতির কারণে নির্ভরযোগ্য মিত্ররা যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সে শিক্ষা তাইওয়ানের হয়েছে। কাজেই যে কোনো দেশেরই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের চেয়ে বন্ধুত্বের কৌশলটাই রপ্ত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App