×

জাতীয়

যেসব কারণে নির্বাচনে আস্থা নেই ভোটারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৮ এএম

যেসব কারণে নির্বাচনে আস্থা নেই ভোটারের

প্রতীকী ছবি

একতরফা ভোট, ভোটের আগের দিন সিল মেরে বাক্স ভর্তি, ভোটারের উপস্থিতির আগেই ভোট সম্পন্ন, ইভিএমে ভোটার চিনতে বিড়ম্বনাসহ নানা কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা হারিয়েছে ভোটাররা। ফলে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি যেমন কমেছে তেমনি ভোট কাস্টিংয়ের হার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থতা, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ অনিয়ম ও ত্রুটির কারণে ভোটারদের ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি একধরনের অনিহার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। গত ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। যা দেশের যে কোনো নির্বাচনে ভোট স্বল্পতার রেকর্ড। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। উৎসবহীন পরিবেশে গত ১ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৫ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। যা সিটি ভোটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কমের রেকর্ড। ভোটাধিকারের এই পরিসংখ্যান ভোট ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনে এত কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি অনভিপ্রেত এবং গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে ইসি ব্যর্থ হয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনে রাতের বেলায় ভোট হয়েছে। ইচ্ছেমতো পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার বহু প্রমাণ, টিভি ফুটেজ থাকার পরেও ইসি কোনো অ্যাকশন নেয়নি। কোনো তদন্ত তো দূরে থাক কোনো একটা সেন্টারের ভোটও বাতিল করেনি। সব জেনে জনগণ নির্বাচন কমিশনের ওপর বিশ্বাস রাখে কীভাবে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা এখন মনে করছেন, ভোট দিলেও যে ফল হবে, না দিলেও তাই হবে। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটাররাও মনে করেন, ভোট দিতে না গেলেও তাদের প্রার্থী বিজয়ী হবেন। এ কারণে তাদেরও ভোটের প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ বা অনাস্থা কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়। ভোটের প্রতি অনাস্থা সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, কত শতাংশ ভোট পড়ল তা কমিশনের দায়িত্ব নয়। কমিশন ভোটের আয়োজন করে, কতজন ভোটার ভোট দিলেন সেটা দেখার দায়িত্ব ইসির নয়। এটি প্রার্থীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বর্তমান ইসি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনেও যে ভোট করেছে তা একেবারেই ন্যক্কারজনক। তাছাড়া তাদের হাতে সুস্পষ্ট ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল মারল তা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়। অথচ নির্বাচনের ৯০ দিন আগ থেকে সব বাহিনী ইসির হাতে চলে আসে। কিন্তু তারা তা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মতো ন্যক্কারজনক ইতিহাস আর দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ইসির নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বের হতে নির্বাচন কমিশন যদি সক্ষম না হয়, তবে নির্বাচনী ব্যবস্থায় জনমানুষের আস্থা ফেরানো কঠিন হয়ে যাবে। দেশের নির্বাচনী পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পর পর যে কয়টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল সেখানে গড় ভোটের হার ছিল ৭৩ দশমিক ১ শতাংশ। আবার ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেনি, যেখানে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভোটের গড়পড়তা হার ছিল ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, এই ভোটের হার শুধু বাদ বাকি ১৪৭টি আসনের জন্য। এ নির্বাচনকে অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছিলেন। আবার ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করেছিল, ভোটাররা মনে করেছিল এটি একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অবাধ নির্বাচন হবে। কিন্তু ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালটে সিল মারার ফলে এ নির্বাচনেও ভোটাররা ভোট দিতে ব্যর্থ হয়। এই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য একজন কমিশনার তাদের বক্তব্যে কার্যত ভোটের আগের রাতে বুথ দখল ও জাল ভোটের অভিযোগের কথাই স্বীকার করে পরবর্তী নির্বাচনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে রিটার্নিং, প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করেন। এ নির্বাচনে গড়ে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়লেও ইভিএমে ভোট নেয়া ৬টি আসনে ভোটের হার ছিল ৫১ শতাংশ। কাজেই এ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ বা কোথাও কোথাও ১০০ শতাংশ ভোট পড়ার পরিসংখ্যান নিয়েও বিস্তর মতভেদ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App